• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকা -তে সৌরভ বর্ধন (পর্ব – ১৫)

কবিতায় আমি কলার তুলতে চাই (পর্ব – ১৫)

ঝিঁঝিপোকাগুলো সারাদিন মাটিখাদানে কাজ করে, ভেতর থেকে মাটি তুলে এনে ওপরে পাহাড় বানায়, পাহাড়ের মাঝে থাকে একটি সুড়ঙ্গ, সেখান দিয়ে নেমে যায় সে, তারপর সারারাত ব্যথায় ব্যথায় ডেকে যায় শরীর। সন্ধ্যার অন্ধকার সবচেয়ে বেশি গভীর হওয়ায় সন্ধেবেলার ডাকে কিছুটা ভয় মিশ্রিত থাকে, অথচ গভীর রাতে সে দার্শনিক, তখন তার গর্তের ফুটোস্কোপ দিয়ে দেখে সে মায়াময় রাতের আকাশের কথা বলে, অক্টাভিও পাজের ‘ব্রাদারহুড’ কবিতাটির মর্মার্থ উপলব্ধি করে সে এই সময়। আমি গভীর রাতে কনিষ্ঠ আঙুল তুলে বাইরে বেরই আর কাঁঠালতলা আমতলা দিয়ে ঘুরি, ঝিঁঝিপোকার গর্ত খুঁজি, দেখতে পাই আমার প্রতিবিম্বের ছায়া কোনো এক বর্ষাঅরণ্যের বড়ো বড়ো পাতা সরিয়ে আছড়ে পড়ছে আমাদের উঠোনে, ‘তোমার বুকে কী আছে?’ অলক্ষ্যের এমন প্রশ্নে হতচকিয়ে দেখি আমার দেহে পপি ফুলের ক্ষেত, আমি হাঁ করে গিলছি আমার সব…
তখন খুব ভোর, ওই ৪টে ২০ মতো হবে, বাইরে যাবার তাড়নায় ঘুম ভেঙে গ্যালো, হঠাৎ মশারির একপ্রান্ত পেরেকসহ উবড়ে গায়ে এসে পড়লো, এ মাঝে মাঝেই এমন করে। যাহোক বাইরে থেকে করে এসে ঘরে ঢুকতে যাব, দেখি আমি শুয়ে আছি আমার ঘরে!
তখনই একটা ভিড় ট্রেন প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ালে সহসা সমস্ত ট্রেনযাত্রীদের মধ্যে এমন একটা অদ্ভুত ব্রাউনীয় গতির সঞ্চার ঘটে যে তারই ফলস্বরূপ আমরা এদিকওদিক দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য ইতস্তত হয়ে ছোটাছুটি করতে লাগলাম ও একে অপরকে ধাক্কা মারতে মারতে এগিয়ে যেতে থাকালাম জ্ঞানশূন্যতার চরম ভুলভ্রান্তিতে, যেখানে আমি বহমান মুহূর্তের মধ্যে খুঁজে পেলাম না মুক্তিকে ; খুঁজে পেলাম শুধু একরাশ শব্দহীন চেঁচামেচি যা আমাকে সেই বিরক্তিকর মুক্তির অভাব বোধ করাচ্ছিল বারেবারে। রেলগাড়ি নিজের গতিতে ধাবমান হচ্ছিল ঠিকই কিন্তু আমার স্থিরাবস্থায় ক্রমশ ঝাঁকুনি দিয়ে প্রত্যেকটা স্টেশনের দূরত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছিল… ক্লান্তিতে আমি ঝিমিয়ে পড়ছি, ঘুম ঢুলে আসছে চোখে, দেখতে পাচ্ছি আবার :
আলো আসছে, ক্রমশ আলো আসছে, ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে, ওকে আক্রমণ করো, যা ইচ্ছা তাই করো ওর সাথে; কাল অবধি ভাবনা ছিল না আমার, আজ, এখন আলোই শেষ কথা, স্বতন্ত্র উচ্চারণ। আমাদের নির্মম পূর্বাভাস পেয়ে গেছে ওরা, ওদের সূত্র ধরে হামলা করার সময় নেই এখন, মাধ্যমহীনতায় আমরা শব্দহীন নিরাকার। এই দুরন্ত ভাঙনের যুগে আলো খুব প্রয়োজন। তাই শূন্য মাধ্যমে হাঁটা জরুরি হয়ে পড়ছে আমার। আলো আসছে, ক্রমশ আলো আসছে, ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে অন্ধকার। আর ভেতর থেকে প্রচুর শব্দ – তাদের উৎস এক কিন্তু প্রকাশ ভিন্ন, তাদের শব্দের ভেতর মাথা-ঝিম-ঝিম বসবাস করে। বাষ্পযাত্রী হিসেবে মিশে যাই ছলে বলে অন্তরীক্ষে, সন্তর্পিয়া কাছে আসে আলো, প্রশ্ন জাগে : সন্ধেবেলা পাখিরা কোথায় থাকে! তাদের খুঁজতে চাওয়া সমস্ত সমীকরণ কোথায়! চারপাশে এতো ফসলের ক্ষেত এতো সাঁতার – এসব যদি শাস্ত্রসম্মত হয় তাহলেও কি পাত্তা দেওয়া যাবে না আমায়? যতটা পাহাড় দেখলে একটু পাগল হওয়া যায় তার চেয়ে অনেক বেশি ঝিঁঝি-ধরে-যাওয়া অন্ধকার দ্যাখাবো তোমায়; তারপরেও কি বলবে – পাখির সাথে ঘর করা সম্ভব নয় ! পাখিদের ইনোভেটিভ রস কম…?

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।