• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৭৩)

পর্ব – ৭৩

৭২

শ‍্যামলী বলল, পিসি, কেউ আমাদের তফাত করে দেয় নি। নিজেকে বোকা বানিয়ে রেখেছি আমরা নিজেরাই। তুমি কি জানো, কেন মহাভারতের কুন্তীর বড়ছেলেকে ধর্মপুত্র বলে?
সবিতা বলল,  তা জানবো না কেন? তিনি যে ধর্মঠাকুরের বরে হয়েছিলেন। আমাদের বাপের বাড়ির দেশে বটতলায় ধর্মঠাকুরের থান আছে জানিস শ‍্যামলিমা! খুব জাগ্রত ঠাকুর।
পিসি, বাচ্চা কি করে হয়, তা যখন আমি জানি, তুমি জানো না, এটা বললে শুনব না।
সবিতা রাগ দেখিয়ে বলল, তা বাচ্চা কেমন করে হয় জানব না কেন রে মুখপুড়ি? আমি কি কচি খুকি?
হ‍্যাঁ পিসি, বাচ্চা হতে গেলে পুরুষ সংসর্গ লাগে। পুরুষের সঙ্গে মিশতে হয়। কুন্তী যখন দেখলেন তাঁর স্বামী পাণ্ডুর সমস্যা আছে, তখন স্বামীর অনুমতি নিয়ে তিনি তিন তিনজন গুরুত্বপূর্ণ দেবতার সঙ্গে শুলেন, ও তিন তিনটি ছেলের মা হলেন।
সবিতা বলল, ও মা, সে কি রে, তুই বলছিস কি? ওঁদের তো ঠাকুরের অংশে জন্ম।
শ‍্যামলী ব‍্যঙ্গ করে বলল,  হ‍্যাঁ পিসি, ঠাকুর। তবে কি না, একেবারেই রক্তমাংসের, ধরা ছোঁয়ার মধ‍্যে থাকা ঠাকুর। আর বলো তো দ্রৌপদীর কেন পাঁচটি স্বামী?
সবিতা বলল,  তুই যেন কি? এ আর জানি না, কুন্তী যে তাঁর বড়ো ছেলেকে বলে ফেলেছিলেন, যা এনেছিস বাবা, তোরা পাঁচটি ভাইয়ে ভাগ করে নে।
শ‍্যামলী বলল, না পিসি, যুধিষ্ঠির লোকটা খুব স্বার্থপর ছিল। সে নিজের মাকে চিনত জানত। তাই সে এমন কায়দা করে প্রশ্ন করেছিল, যাতে মা ওইরকম একটা উত্তর দিয়ে ফেলে।
 সবিতা ভারি শঙ্কিত হয়ে  বলল, তা তুই আজ ষষ্ঠীর দিনে এসব আজেবাজে কথা বলছিস্ কেন মা? পাপ হয় যে।
শ‍্যামলী বলল, শোনো পিসি, ওটাও বানানো গল্প। আসলে পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে খুব একটা বনিবনা ছিল না। ওরা হয় তো নিজেদের মধ্যেই লড়াই করে বসতো। দুর্যোধনের সাথে লড়াই আর করতে হত না। দ্রৌপদী ওদের পাঁচটার মধ‍্যে তালমিল করত।
সবিতা গালে হাত দিয়ে বলল, ইশ, ছি ছি, তুই যে কি বলিস?
না বোঝার কি আছে পিসি, পাঁচটি পাণ্ডব যখন বনবাসে যেত, ওদের অন‍্য ব‌উগুলো কেউ কি করত তার হিসেব কেউ জানে না, দ্রৌপদী ঠিক সাথে যেত।
সবিতা গালে হাত দিয়ে বলল, তুই এত মনে রাখিস কি করে সোনা?
শ‍্যামলী বলল, শোনো পিসি, সমাজ কতকগুলো নিয়ম দুর্বলের উপর চাপিয়ে দেয়। যাতে মানতে হয়, তাই বদমায়েশির গায়ে লেবেল সাঁটে ধর্ম। সেই জন‍্যে তুমি বলছিলে বর মারা গেলে ব‌উয়ের জন‍্য যা নিয়ম, ব‌উ মরলে বরের নিয়ম তার সঙ্গে একদম মেলে না। ধর্ম আসলে একরকম মস্তানি, একরকম গুণ্ডামি।
সবিতা বিরক্ত হয়ে বলল,  ছি ছি কি হবে ঠাকুর! রক্ষা করো, এই মেয়েটাকে একটু সুবুদ্ধি দাও। এ যে গোটা বংশের মুখে কালি দেবে গো। ও মা গো কি হবে গো?
এমন সময় বাসন্তীবালা ঘরে ঢুকে বললেন, হ‍্যাঁ রে সবিতা, এতটা বেলা  হল, আর তুই গল্প করছিস? কত কাজ পড়ে আছে বল্ তো?
সবিতা রাগ দেখিয়ে বলল, কিছু বলতে হয় বলো তোমার ওই বিদ‍্যেধরী মেয়েকে। মা গো মা, কি ডাকাত মেয়ে তুমি পেটে ধরেছিলে বৌমণি!
বাসন্তীবালা বললেন, ওরে সবিতা, ওকে আমি অনেক কপালগুণে পেয়েছি রে! কাল আমায় কি চমৎকার ঘুম পাড়িয়ে দিল। আজ শরীরটা খুব ফুরফুরে লাগছে।
সবিতা মুখ গোঁজ করে বলল, যাঃ, আমে দুধে মিশে গেল, আঁটি তুই গড়াগড়ি!

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।