• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৬২)

পর্ব – ৬

শ‍্যামলী, শোন্, তোকে আমি আগেই বলেছি এটা একটা খেলা। আর এই খেলাটা নানা সময় নানা রকম চেহারা নিতে পারে। আমরা বিচার ব‍্যবস্থায় নিরপেক্ষতা আশা করি। কিন্তু, বিচারের দরবারে একটা বিষয়কে উপস্থিত করেন আইনজীবীরা। বিচারপতির কাজ সত‍্য অনুসন্ধান করা। কিন্তু, সত‍্য খুব সহজ সরল ছেলেভোলানো জিনিস নয়। বরং সত‍্য খুব কঠিন। সাংঘাতিক জটিল জিনিস এই সত‍্য।
শ‍্যামলী শান্তভাবে মুখ তুলে তাকায়। চোখের নোনা জল মিষ্টি গালটি দিয়ে গড়িয়ে গিয়ে তাকে লাবণ‍্যবতী করে দিয়েছে।
অনসূয়া বললেন, আমি বুঝতে পারছি, তুই খুব দুঃখ পেয়েছিস। পার্সোনাল অ্যাটাকের মতো ভেবেছিস। কিন্তু এ রকম স‌ওয়াল জবাব হতেই পারে। যুদ্ধে নামার আগে সেনাধ‍্যক্ষ দেখে নেন তাঁর সেনাবাহিনীর প্রস্তুতির মাত্রা। তারপর যুদ্ধযাত্রা। শ‍্যামলী, আজ যদি তুই নিজের কেসটা অন‍্য একটা দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখিস, তাহলে তোর উপলব্ধিটা একপেশে হয়ে যাবে। বাস্তবের লড়াইয়ের ময়দানে অচেনা কোনো দিক থেকে অস্ত্র ছুটে আসতেই পারে। কেউ ভাবতে পারে কাকা জ‍্যাঠারা সবাই মিলে একজোট হয়ে একটা নাবালক ছেলেকে ঘিরে ধরে মারছে? দ্রোণ ভাবতে পেরেছিলেন, এমনকি যুধিষ্ঠির‌ও নিজের দীর্ঘলালিত সুনাম জলাঞ্জলি দিয়ে মিথ‍্যা ও কপটতাপূর্ণ আচরণ করতে পারেন?
 শ‍্যামলী ম্লান হাসে। সে হাসি বেদনামিশ্রিত। সে হাসিতে বিষণ্ণতা মাখামাখি।
অনসূয়া তার মুখটি আদর করে তুলে ধরে ঘনস্বরে বলেন, নাথিং ইজ় আনফেয়ার ইন লাভ অ্যাণ্ড ওয়ার। তোর কেসটায় বিপক্ষে একজন মোটামুটি মজবুত উকিল দাঁড়ালে কি হতে পারে, সেই ধারণাটা তোকে দিলাম।
 শ‍্যামলী কুণ্ঠিত স্বরে বলল, দিদি, এবার আমি বাড়ি যাব।
অনসূয়া আনমনে বললেন, যাবি? তা আয়। তুই ভাল করে সব দিকটা ভেবে দ‍্যাখ। তারপর আমার কিছু করার থাকলে আমিও ভাবব।
শ‍্যামলী বেসিনে গিয়ে মুখ ধোয়। তোয়ালেটা হাতে নিয়ে এগিয়ে যান অনসূয়া।
বলেন, শোন্, তোকে আমাদের শ‍্যোফার পৌঁছে দিয়ে আসবে। সন্ধে গড়িয়েছে। তোকে একলা ছাড়তে মন চাইছে না।
শ‍্যামলী বলে, না দিদি। আমি বাইরে গিয়ে না হয় একটা রিক্সা নিয়ে নেব।
শোন্, গাড়িতে গেলে তোর সময় খানিকটা বাঁচবে। আর আমার মনটাও অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকবে।
শ‍্যামলী অনসূয়ার পদস্পর্শ করতে যেতেই তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন অনসূয়া। বলেন, সত‍্য তোমাতে প্রকাশিত হোন।
শ‍্যামলী তাঁর মুখের দিকে তাকায়। সিঁড়ির আলো গিয়ে মিশেছে অন্ধকারে। আলোয় মিশেছে আঁধার। আকাশের কয়েকটি তারা উঁকি দিয়ে তাদের দেখছে। এমন সময় কাছেই দাঁড়িয়ে কে যেন বলল, চলুন। আপনাকে আমি পৌঁছে দিয়ে আসি।
ড্রাইভার। কিন্তু গলাটা যেন স্মৃতিসরণির কোন্ সুদূর হতে বেজে উঠলো। শ‍্যামলী গাড়িতে উঠে বলল আমাদের কারখানায় পৌঁছে দেবেন। পথনির্দেশ দিতে গেলে ড্রাইভার নরম স্বরে বলল, আমি জানি। আপনার বাবার কাছে আমি ড্রাইভিং শিখে আজ এ বাড়িতে কাজ করি। তিনিই আমাকে হাতে ধরে এবাড়িতে এনে কর্তাদের কাছে আমাকে রেকমেণ্ড করেছিলেন। এত বড়মাপের লোকের বাড়ি কাজ করবার সৌভাগ্য সবার হয় না।
বাবার জন্য মন কেমন করে মেয়ের। লোকজন এখনো তার বাবাকে ভালবাসে, মনে রাখে ভেবে অজস্র বিষণ্ণতা ডিঙিয়ে একটা তৃপ্তি তারমধ্যে কাজ করে।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।