• Uncategorized
  • 0

মুড়িমুড়কি -তে শ্রাবণী দাশগুপ্ত

শ্রাবণী দাশগুপ্ত অনিয়মিতভাবে যখন যেমন মনে আসে, শখে লেখেন।

ষণ্ডামর্ক

ভয়। ভয়ও নয় ঠিক। তেমন কিছু না, গা ছমছম গোছের – চামড়ায় শিরশির। মেরুদণ্ড সিধে করে পালানোর রাস্তাটা দেখে রাখা। রাতে কুকুর চেঁচালে ভয়ই লাগে। যাঁরা অবশ্য কুকুরপ্রেমী, কুকুরের ভাষা বোঝেন।
আর ষণ্ড হলে? ষাঁড়? মানে সর্বার্থে ধম্মের ষাঁড়? আশু বিপদের সম্ভাবনা বুঝলে ভদ্রজনেরা কী করেন?
কাল কাছে এক জায়গাতে গিয়েছিলাম নৈশভোজনে। শীত যৎসামান্য কৃপা করেছেন বলে শীতকাতুরে গোষ্ঠী সান্ধ্যকালীন আড্ডায় শীতপোশাকে পা থেকে মাথা মুড়ে ফেলে রাত হতে না হতে ঘরে দোর দিয়েছেন।
আমদের কি না মালভূমির শীতসওয়া ত্বচা-। মুচকি, ফিক, পারেও এরা, এখেনে বরফ পড়ছে – ইত্যাদির পরে খেয়েদেয়ে বেরোতে এগারোটা রাত। গাড়ি অদূরে রাখা। দেখি লোহার গেট দিয়ে তিনি ঢুকছেন। ধূম্রবর্ণ বলশালী গঠন। শিং দেখা যাচ্ছে। চলন সামান্য টলমলায়মান মদিরার নেশাগ্রস্ত- এমত দেখাচ্ছে। দেখে সতর্ক করলেন বান্ধবী,
-ওমা এটা কিন্তু পাগল আছে। টাউনশিপেই থাকে। প্রায় সময়েই ওদিকে মন্দিরটার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।
-বাবা! এ্যাটাক করে নাকি?
-গাড়ি দেখলে করে। মানুষকে করে কি না জানি না। একবার তো একজনের গাড়ি এমন গুঁতিয়েছে–!
-সাবধানে এসে উঠে পড়।
বেটার-হাফ আহ্বান করলেন। আমরা নরচতুষ্টয় চারচাকার পেটে ঢুকে, বের হবার আগে গর্দান ঘুরিয়ে দেখছি শ্রীমান অদূরে রাখা আলগা বালির মধ্যে মাথা দিয়ে বালি এলোমেলো করছেন আর ফুঁসছেন। তাঁর সেই ডাক শুনে বুকের মধ্যে রক্ত ভোরবেলার কন্‌কনে জল। এডাক অনেক দিন রাত্তিরেও শুনি। সন্দিগ্ধ হয়ে ভাবি,
কোন্‌ কুকুর এরকম অদ্ভুত ডাকছে?
অদূরে আমাদের কোয়ার্টার। চারজনে ঢুকে পড়েছি, আরও পাঁচদশ মিনিট আড্ডাবাজ বাঙালির…। তারপর অগত্যা যখন ঘড়ির কাঁটা এগারোটা ছাড়িয়েছে, বন্ধুদের উঠতে অনুমতি হল। তাঁদের কোয়ার্টার দিনের একেবারে বেলায় হাঁটাপথ, শীতনির্জনে নয়। গেটের বাইরে আমাদের বাহন। পৌঁছতে যাব, ওঠার আগে দেখি, শ্রীমান আমাদের সন্ধানে বের হয়ে এসেছেন।
ঠিক আমাদের পাশের বাংলোর বেড়ার বাইরে আগাছা জঙ্গলে মাথা দোলাচ্ছেন।
-আরে! সাবধানে এসে ঢুকে পড় গাড়িতে।
আমরা যথাসাধ্যি সন্তর্পনে… শুভরাত্রি করে দুমিনিটের পথ নামিয়ে এলাম তাঁদের বাড়িতে। এরপর একটু ঘুরে বাংলোতে ঢোকার গলির মুখে আমরা দুই মুখচাওয়াচাওয়ি। গাড়ির কাঁচ তোলা।
-আছে না নেই? আছে না নেই?
ঠাহর করি আঁধারেই।
-নেই। চলে গেছে – এগোও।
গাড়ির চাকা গড়াচ্ছে।
-আছে?
-দেখছি দাঁড়াও।
-না।
তারপর সজাগ করি ইন্দ্রিয়। এই রাতে আমাদের গাড়ি, মানে একমাত্তর চলমান জন্তু আপাতত। যদি উনি তাকে দেখে বৈরীসুলভ আচরণ করেন, আমরা গেছি। মাঝরাত্তিরে মরণফাঁদ! আমি জটায়ু নই।
-আ-ছে-এ!
-এ্যাঁ-এ? কই?
আমাদের বাংলোর মুখোমুখি প্রায় পরিত্যক্ত বাংলোর ঘন সবুজ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন ষণ্ডদেব। কার বাহন কে জানে? এগোব না পেছন দিকে ঘুরপথ দেখব? যেদিক থেকেই আসি তাঁকে অতিক্রম করা অসম্ভব। ছোটো টিলার মতো আকারের মাথার দিকে জ্বলজ্বল আলো। আমাদের গাড়ির আলোর প্রতিফলন চোখ দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। স্টিয়ারিং হাতে ভদ্রলোক আলো ডিপার-ডিমার করছে।
-চোখ জ্বলছে! উঃ।
-দেখ তো এদিকে আসবে কি?
-বুঝতে পারছি না।
-এগোচ্ছে?
-দেখা যাচ্ছে না।
চোখ ডিপার-ডিমার। পেট গুড়গুড়। পাশে আঞ্চলিক কুকুর। ওরা অঞ্চলপ্রহরী। হয়ত আমাদের বলার চেষ্টা করছে,
-আরে ভয় পাচ্ছ কেন? আমরা আছি না? তোমরা না হয় তোমাদের খরগোশকে আমাদের কাছ থেকে আলাদা রাখ। তা বলে কি সাহায্য করব না?
সারমেয় ডাকছেন। ষণ্ড হাল্কা বৃংহিত(?। গোনাগুনতি দুবার চাকা ঘুরলেই আমরা বাড়ির গেটে যেতে পারি। যাচ্ছি না। আলো নিভিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা।
-যাও ষণ্ডদেব, তোমার অগ্রাধিকার। যেদিকে অভিরুচি, আমরা বিপরীতগামী।
উনি ডাকছেন সেই অদ্ভুত ডাক। সরে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে। হ্যাঁ হ্যাঁ, আমাদের দিকে আসছেন না। দয়া করে ছেড়ে দিচ্ছেন পথ।
ভাবছি, কে জানে কখনো মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন কিনা? অথবা প্রেয়সী গাড়ির ধাক্কায় দেহ রেখেছিলেন – যার বিরহাতুর প্রেমিক ইনি!
আ ন্যারো এস্কেপ? ঘটনা সর্বৈব সত্য।
যাই হোক বেশ লাগল জানেন? বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে একচোট কল্পনা করলাম, বনপথ বেশ। এই ষাঁড়টা বেশ বুনো মোষ। বেশ তেড়ে আসছে আমাদের জিপের দিকে। আমরা বেশ দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে দিশা হারিয়ে…।
ওই যে ‘একটি ধানের শিসের ওপর একটি শিশিরবিন্দু’?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।