দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৫৫)
by
·
Published
· Updated
পর্ব – ৫৫
১৫৪
ভোর হতে না হতেই একটা ফোন এল। একটা পুরুষকণ্ঠ বলছে, আপনি কোন্ সাহসে আমাদের মেম্বারকে দিয়ে মুচলেকায় সই করিয়েছেন?
শ্যামলী বলল, আপনি যা বলার অফিসে এসে বলবেন। এটা বাড়ির ফোন। এই ফোনে এ ব্যাপারে কথা হবে না।
শশাঙ্ক পাল দেখতে এসেছিলেন, মেয়ে কেমন আছে।
ফোনে শ্যামলীর উত্তর শুনে জানতে চাইলেন, কে ফোন করেছিল।
নাম তো জানতে চাই নি বাবা। বলে দিলাম কারখানায় এসে দেখা করে যেন।
কি নিয়ে কথা বলতে চায় রে?
শ্যামলী বলল, কাল কি হয়েছে জানো বাবা, হেডমিস্ত্রিকে ডেকে পাঠিয়েছিল বীরুবাবু। কি, না, গুরুদেবের জন্য চাঁদা লাগবে। তো মিস্ত্রি করেছে কি, কাউকে কিছু দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে, কিছু না বলেই বীরুবাবুর সাথে দেখা করতে গিয়েছে। এই ফাঁকে দুটো গাড়ি সারাই আর পার্টস এর দাম জমা পড়ে নি।
শশাঙ্ক পাল বললেন, বীরুর তো সাহস কম নয়! আমার কারখানা। আমার ব্যবসা! আমার সাথে কোনো কথা না কয়ে আমার মিস্ত্রিকে ডেকে পাঠানো?
বাবা, তোমার মিস্ত্রিও তো কম অপদার্থ নয়! বীরুবাবু পাল অটোমোবাইল এর কে, যে ডাকা মাত্র লেজ তুলে দৌড়ে যাবে?
তো, তুই কি ব্যবস্থা করলি?
বাবা, ওকে দিয়ে একটা মুচলেকা লিখিয়ে নিয়েছি। চাপে রাখার জন্য। আর বোনাসের টাকা অর্ধেক দিয়েছি।
বেশ করেছিস। এবার গাড়ি সারানোর টাকা কিভাবে উদ্ধার করা হবে সেটা ভাব্ আর ওকে ক্যাশ থেকে সরিয়ে দে।
বাবা, মিস্ত্রি আন্দাজ করেছে যে আমি ওকে ছাঁটাই করব। তাই নেতাকে দিয়ে এই ভোরে ফোন করিয়েছে।
বীরুটা এত শয়তানি করবে, কোনো দিন ভাবতে পারি নি।
শ্যামলী বলল, ওই শুনে তোমার গুরুদেবের উপর আমার এতখানি বিরক্তি। যে বীরুকাকা আমাদের এত বড় ক্ষতি করেছে, তার সাথে যে যোগাযোগ রাখবে, তাকে ভাল মনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয় বাবা।
শশাঙ্ক পাল জানতে চাইলেন, তো ইউনিয়ন লিডারকে কি করে ট্যাকল করবি ভাবছিস?
আগে তো আসুক। কথা বলে বুঝতে চাইব, ওরা কতদূর কি ভেবে রেখেছে।
এমন সময় সবিতা এসে তাড়া দিল, নে নে, বাথরুমে ঢোক। কলেজ যাবি বলেছিলি।
শশাঙ্ক পাল স্নেহভরে বললেন, হ্যাঁ রে, কাল অত শরীর খারাপ হল, আজ কলেজ নাই বা গেলি।
না বাবা, কলেজ যেতেই হবে। নইলে পড়ায় ফাঁক থেকে যাবে।
কারখানার কি ব্যবস্থা করে যাবি?
শ্যামলী বলল, স্প্লিট করে দেব বাবা। ক্যাশ আর স্টক আলাদা করে আলাদা লোকের কাছে দায়িত্ব দেব। গাড়ি সারাতে এলে পার্টস কাস্টমার কিনে দিলে তবেই সারানোর কাজে হাত দেবে মিস্ত্রিরা।
আমাকে তুই কারখানায় বসতে এবার পারমিশন দে। তোর ওপর এত চাপ আমি আর দেখতে পারছি না।
শ্যামলী বলল, বাবা, পুজোর পরে চেক আপ করিয়ে নিই একবার। তারপর হেল্প কোরো, কেমন?
বাধ্য ছেলের মতো মাথা নাড়লেন শশাঙ্ক পাল।
এমন সময় সবিতা এসে শ্যামলীকে তাড়া লাগালো, ওরে এবার বাথরুমে ঢোক। বাপ বেটিতে গপ্পো করবি পরে।