দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ২৫)
by
·
Published
· Updated
পর্ব – ২৫
১২৪
খাওয়া শেষ হতে শ্যামলী খোঁজ নিল বাবার জন্যে ফল আছে কি না। সবিতা বলল ফল আর ফল কাটার বঁটি সব দোতলার ঘরে যোগাড় আছে। কিন্তু তোমায় দয়া করে কাটতে হবে না। তুমি বাবার সাথে গল্প করো গে, আমি নিচে মুক্ত করে দোতলায় যাবো। ফল কেটে দেব। তখন খাইয়ে দিও।”
শ্যামলী কাছে গিয়ে বসতে শশাঙ্ক পাল বললেন ” তোকে পুলিশে ধরে নিয়ে গিয়েছে শুনে খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।”
শ্যামলী বলল ” কিন্তু বাবা, ওরা আমায় সত্যি ধরে নিয়ে গিয়েছিল।”
শশাঙ্ক পাল হেসে বললেন “তোর মতো একটা অল্প বয়সী মেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গান গেয়েছে – এটা অপরাধ বলে পুলিশ প্রমাণ করতে পারত না। গান, তাও গান্ধীজির রামধুন।”
” তোমার মেয়ে বলে তুমি দোষ দেখতে পাচ্ছ না। কিন্তু যার স্বার্থে লাগবে সে খারাপ চোখে দেখবে বাবা।”
শশাঙ্ক পাল রহস্য করে বললেন ” কি কি দোষ ধরবে বল তো ?”
শ্যামলী বললো ” এই ধরো বলবে এতগুলো লোক মিলে একজোট হয়েছ। গন্ডগোল পাকালেই হল। যাও, যাও, নিজের নিজের বাড়ি যাও।”
” আর ?”
“আর ধরো বলবে, লোকের গেটের সামনে দাঁড়িয়েছ, তারা যাবে আসবে কি করে?”
“তাই? আর ?”
” আর বলবে, ভোরবেলা গান করছো কেন, লোকের ঘুম ভেঙে যাবে যে !”
” তাই না কি ? তো, তুই এত সব জেনে বুঝে এমন একটা ঝুঁকি নিলি যে ?”
“বাবা, এই কাজটা না করে আমার উপায় ছিল না। দ্যাখো, ওরা আমার মিস্ত্রী কে আমার কারখানার চৌহদ্দির ভেতর এসে মেরেছে। আর আমার টেবিলের কাচ ভেঙেছে। আর গাড়ি সারিয়ে পয়সা দেয় নি। আমি ওই সারাই কাজের জন্যে মজুরকে পয়সা দেব কি করে? পার্টসের দাম কি কম বাবা ? তাহলে নিজের টাকা লগ্নি করে আমি কি লোকসান গুনব ?”
” তুই তো থানায় গিয়েছিলি। ”
শ্যামলী বলল “হ্যাঁ, সেটা তো প্রথম ধাপ। পুলিশ, আমি তোমাকে অফিশিয়ালি জানালাম। তুমি যদি কিছু না করো, তাহলে আমায় পরের স্টেপটা নিতে হয়।”
শশাঙ্ক পাল বললেন ” লোকে বলবে, কি লাভ হলো, কিছু করতে পারলে?”
শ্যামলী শান্ত স্বরে বলল ” হ্যাঁ বাবা, কিছু লোক সেটাই বলবে। বলবে, মাফিয়ার কাছে যে টাকাটা গাঁট গচ্চা দিলে, সেটা অন্য ভাবে তুলে নাও। ভদ্র কাস্টমারকে ঠকাও। পার্টসের নাম করে বেশি দাম চাপাও। মজুরের পেটে লাথি মারো। সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দাও। ইলেকট্রিক লাইনে কারচুপি করো। ”
শশাঙ্ক পাল একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন ” এই ক’মাসে তুই অনেক জেনে গেলি কিন্তু।”