দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ২৩)
পর্ব – ২৩
১২২
পায়ের শব্দ শুনেই বাবা টের পেয়ে বললেন “কে, শ্যামলিমা এলি?”
মেয়ে বললো “হুঁ বাবা।”
“কারবারের পুরো ঝক্কিটা তোর ওপর দিয়ে যাচ্ছে। কত দিক থেকে কত রকম চাপ সামলাচ্ছিস।” শ্যামলী দেখতে পায় বাবার চোখের কোণ দিয়ে জল গড়াচ্ছে।
“তুমি গ্যারাজে গিয়েছিলে বাবা।” শশাঙ্ক পাল বললেন, “হ্যাঁ, যেই খবর এল তোকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে, আর বাড়িতে বসে থাকতে পারলাম না। ”
“আমার জন্যে তোমার কত কষ্ট হল বাবা। আজ আমায় তুমি বকতে পারো। আমি কিছুটি বলব না। কিন্তু বিশ্বাস করো বাবা, আমার খবর দেবার উপায় ছিল না।”
“তোর পিসিটাকে তুই তো জানিস, তোকে কোলে করে বড়ো করেছে। তোকে পুলিশের গাড়ি করে নিয়ে গিয়েছে শুনে পাগলের মতো চিৎকার আর দাপাদাপি শুরু করল। ”
এমন সময় সবিতা পিসি ঘরে ঢুকে জিজ্ঞাসা করলো ” এই যে মহারানী, এতক্ষণ বাদে প্রজাদের ওপর দয়া হল ? বলি, এবার কি মুখে চোখে জল দিয়ে দুটো খেয়ে উদ্ধার করবি? বাড়িতে দু দুটো প্রাণী সেই সকাল থেকে টাঙিয়ে রয়েছি, তাদের কথা কি তোমার মনেও পড়ে না?”
মাথা নিচু করে উঠে যায় শ্যামলী।
শশাঙ্ক পাল সবিতাকে বলেন, “ওকে অমন করে বকিস না। বড়ো ভাল মেয়ে। এই বয়সে মানুষের জন্যে এতখানি দরদ খুব একটা দেখা যায় না। গ্যারাজে গিয়েছিলাম তো। সবাই ওকে ভালবাসে। মজুরদের কারো পয়সা বাকি রাখে না। অসুখ বিসুখে বাড়ি বয়ে দেখে আসে। নিজের পড়া সামলে এত কিছু…গোটা সংসারটা তো ও একাই টানছে।”
” হ্যাঁ দাদা, মেয়েকে আরো তোল্লাই দাও। পুলিশে ভদ্দর বাড়ির মেয়েকে টেনে নিয়ে গেছে শুনলে, কোন মা ঠিক থাকতে পারে? না হয় পেটেই শুধু ধরি নি। নইলে হাগানো মোতানো, কোনটা কম করেছি ?
শ্যামলী পিছন থেকে পিসির মুখ চেপে ধরে। “নাও নাও, চলো। একসাথে খাবো। ” টেনে নিয়ে যায় পিসিকে। ওদের মিল হয়ে যেতে দেখে চোখের জল মুছে নেন শশাঙ্ক পাল।