• Uncategorized
  • 0

দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৯৩)

পর্ব – ৯৩

৯২

রাতে তনুশ্রী ফোন করল। বলল,
কি ব‍্যাপারটা কি তোর? ফোন করে করে আলা হয়ে গেলাম। কোথায় থাকিস তুই?
শ‍্যামলী বলল, দিদি, কি খবর জানতে চাও তুমি?
তনুশ্রী বলল, তোর জামাইবাবু তোর সাথে কথা বলবে। ইয়ার্কি মারবি না। তোর উপর রেগে আছে।
শ‍্যামলী বলল, একজন মানুষ যখন রেগে থাকেন, তখন তাঁর সঙ্গে কথা না বলে, পরে শান্ত হলে আলাপ করাই ভাল নয় কি?
তনুশ্রী বলল, দ‍্যাখ, একদম পাশ কাটাবার চেষ্টা করবি না। সিরিয়াস ব‍্যাপার।
শ‍্যামলী এক মুহূর্ত ভেবে বলল, আচ্ছা দাও।
গম্ভীর গলায় অরুণ বললেন, শ‍্যামলী, তুমি জানো তোমার বাবার শরীর খারাপ।
শ‍্যামলী বলল, আমি এইমাত্র বাবার ঘর থেকে কথা বলে ফিরে এসে লোশন দিয়ে গাল পরিষ্কার করছি। এরমধ্যেই বাবার আবার কি হল?
আরুণ বললেন, দ‍্যাখো শ‍্যামলী আমি তোমার জামাইবাবু হ‌ই।
শ‍্যামলী বলল,  হ‍্যাঁ জানি তো। বর হলে একটু আধটু শাসন করতে পারতেন, কিন্তু শালী ভগিনীপতিতে একদম সুইট সুইট কথা। বলুন অরুণদা, কান খাড়া করে আছি।
অরুণ বললেন, শ‍্যামলী, তুমি কি কোনো দিন সিরিয়াস হবে না?
শ‍্যামলী হেসে বলল, মোটে একুশ বছর বয়সের নবযৌবনা তন্বীশ‍্যামাশিখরিদশনার থেকে জামাইবাবুর যা আশা করা উচিত, তা চাইলে আমি এখুনি দেব।
অরুণ বললেন, শ‍্যামলী, আজ বাড়িতে ওইরকম একটা লোককে ডেকে এনে তুমি মোটেও ভালো কাজ করো নি।
শ‍্যামলী বলল, কি করব জামাইবাবু, আজ বড্ড বেশি হাওয়া দিচ্ছিল, ভাবলাম, একটা মোটা গাছে নৌকা বাঁধি। জানেন জামাইবাবু, লোকটা বলছিল, ওর ওজন দেড় কুইন্টাল।
অরুণ বললেন, শ‍্যামলী, সিরিয়াস হ‌ও। তুমি এখন আর ছেলেমানুষ ন‌ও। আমি কি বলতে চাই বোঝার চেষ্টা করো।
শ‍্যামলী বলল, অরুণদা, আজ কি আমার দিদি আপনাকে বকা দিয়েছে!
অরুণ বললেন, শ‍্যামলী, তুমি আজ আমার শ্বশুরমশায়ের কাছে ওই লোকটাকে এনে ঠিক করো নি। এটা তুমি অন‍্যায় করেছ।
শ‍্যামলী বলল, ন‍্যায় অন‍্যায় জানি নে, জানি নে, জানি নে।
অরুণ বললেন, শ‍্যামলী, আশা করি তুমি জানো তোমার বাবার বাইপাস সার্জারি হয়েছে!
শ‍্যামলী বলল, শুনুন অরুণদা, ওই ওয়াগন ব্রেকার গুণ্ডাটার সাথে আজ আমি দোস্তি পাতিয়েছি। আর একগাড়িতে পাশাপাশি বসে… পুজো এসে গেল, এইসময় একসাথে ঠাকুর দেখতে গেলে একটা বয়ফ্রেন্ড তো চাই। আপনাকে নিয়ে টানাটানি করলে দিদিটা মনে ব‍্যথা পাবে!
অরুণ ধমকে উঠে বললেন, ছিঃ শ‍্যামলী! গুরুজনের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়, সেই জ্ঞানটাও তোমার লোপ পেয়ে গিয়েছে।
শ‍্যামলী বলল, এটা শুনে অরুণদা, সত‍্যি বলছি, আমার প্রাণটা ভরে গেল।
অরুণ বললেন, লাজলজ্জা জ্ঞানগম‍্যি সব তোমার লোপাট হয়েছে।
শ‍্যামলী বলল, কি চমৎকার একটা সার্টিফিকেট পেলাম আপনার কাছে। ঠাকুর বলেছেন, লজ্জা ঘৃণা ভয়, তিন থাকতে নয়। আরো বলেছেন, তিনি সত্ত্ব রজঃ তম, এই তিনটি গুণের ঊর্দ্ধে। শিশুর যখন মায়ের কথা মনে পড়ে, তখন হাজার খেলনা দিলেও সে ফিরে তাকায় না। তখন শিশুর একমাত্র লক্ষ্য মা।
অরুণ বললেন, শ‍্যামলী, তুমি কি মাঝরাতে আমায় কথামৃত শোনাতে বসলে?
শ‍্যামলী বলল,  ও অরুণদা, ভুল করছেন, আমি তো আপনার ব‌উ ন‌ই, যে যা বলব সেটাই কানে খারাপ লাগবে। আমি যে শ‍্যালিকা। যা বলি তাই অমৃত। অমৃতং বালভাষিতং।
অরুণ খুব রেগে গিয়ে ফোন কেটে দিলেন।
পিছন থেকে সবিতাপিসি জিজ্ঞাসা করল, কে ফোন করেছিল রে?
শ‍্যামলী বলল, চিনি না।
সবিতা বলল, সে কিরে মুখপুড়ি, চিনিস্ না যদি, অত চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কায়দা করে কথা বলছিলি কেন?
শ‍্যামলী বলল, কি জান পিসি, লোকটার নাম জানি, কোথায় থাকে তাও জানি, কোথায় কাজ করে তাও জানি, তবুও যেন লোকটাকে চিনি নি। চেনা কি একটা যেমন তেমন কাজ পিসি?
সবিতা বলল, আ খেলে যা, লোকটার নাম জানিস বলছিস, বাড়ি কোথায় তাও জানিস, তাহলে চিনতে কি বাকি র‌ইল?
শ‍্যামলী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ঠাকুর ঘরে বসে জপ করছ, স্তোত্রপাঠ করছ, কৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম মুখস্থ বলছ দুবেলা, তবুও বুকে হাত দিয়ে বলতে পার তোমার কৃষ্ণলাভ হয়েছে?
সবিতা বলল, সত‍্যি, তুই কি কথায় যে কি কথা টেনে আনতে পারিস! তোর কথার মানে বের করতে গিয়ে থ‌ই পাই না। যা মনে আসে করে যা।
শাড়িটা পরেছিলে পিসি? শ‍্যামলী জানতে চাইল।
সবিতা বলল, পরি নি আবার? যতবার এলাম দেখলাম হয় তুমি দাদার সাথে কথা বলছ, নয় ফোনে কার না কার সাথে বকবক করছ। তোমাকে ফাঁকা পেয়ে দুটো মনের কথা বলব, তার যো আছে?
শ‍্যামলী বলল, আজকে আমার কাছে শোও না পিসি?
না বাবা, তোমার কাছে শোবো না। তুমি বকিয়ে বকিয়ে আমার কানের পোকাগুলো মেরে ফেলাবে।
পিসি, তাহলে স্বীকার করছ, তোমার কানে পোকামাকড় বাসা করেছে?
কি কথায় কি কথা, হ‍্যাঁ রে, তোর কাছে উকুন মারা ওষুধ আছে?
সে কি গো পিসি? তোমার মাথায় উকুন হয়েছে? এই নাও শ‍্যাম্পু নাও।
সবিতা সঙ্কুচিত হয়ে বলেন, না, তোর এত দামি সাজের জিনিস আমি নেব না।
শ‍্যামলী বলল, পিসি, নেবে না, এ কথাটা যদি আর বলেছ তো মাঝরাত্তিরে তোমার ঘরে ঢুকে সব চুল কেটে দেব। নাও বলছি!
শ্যাম্পুর শিশি হাতে সবিতার  চোখ জলে টলটল করে।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।