গুচ্ছ কবিতা -তে অমিয়কুমার সেনগুপ্ত

বৃক্ষময়
এ বড়ো অরণ্য ভাই, বৃক্ষময় সমাবিষ্ট হাওয়া ।
আমি কি অরণ্যে যাবো? প্রতিটি বৃক্ষের পদতলে
হাঁটু গেড়ে করজোড়ে প্রার্থনা জানাবো? ‘জল দাও’
বলে কি বৃক্ষের পাতা চিবোবো বত্রিশ দাঁতে আমি?
কে আমাকে বলে দেবে কোন্ ফুলে বিষ আছে,
কোন্ ফুল মধু-র ভাণ্ডার?
কোন্ ফুল প্রেমিকার, কোন্ ফুল নিঃস্ব বিরহীর?
বৃক্ষ কি জবাব দেয় আমার প্রশ্নের? আমি
কোনোকিছু বুঝতে পারি না ।
প্রতিটি বৃক্ষের কাছে পার্সোনালি গিয়েছি, বলেছি :
এ বড়ো অরণ্য প্রিয়, মরুময় চাতকের গানে
একটুখানি বৃষ্টি হোক, গাছের পাতায় ক্লোরোফিল
আরেকটু ঘন হোক, আমার হৃদয় জুড়ে বন
পাখির মধুর গানে মুখরিত হোক, এই অমল জীবনে
সূর্যোদয় হোক একবার, আমি আলোয় ভরাই অমানিশা ।
বৃক্ষ কি শুনেছে কিছু? বৃক্ষময় সমাবিষ্ট হাওয়া ।
*****
মূল্যবোধ নামক চিতাটি
কে আছো এখনও ঘরে, বাইরে বেরিয়ে এসো, দ্যাখো
বাগানে ঢুকেছে ষাঁড়, সব ফুল ভয়ে জড়োসড়ো,
পাখিরা চেঁচাচ্ছে সমসুরে —-
সবুজ ধানের মাঠে নিকটে -অদূরে
পঙ্গপাল নেমেছে যে! অসহায় চোখে সারাদিন
সেই দৃশ্য বালক দেখেছে ।
ওই বন, পাহাড়ের ঝোপে
বসে আছে চিতাবাঘ, ডহরের ধু-ধু এককোণে
মরা গাছে বসে আছে আদিম শকুন ।
নদীর কঙ্কালময় বালির চিতায়
সময়ের অগ্নিদীপ কে জ্বেলেছে, কাকে
এখন বলবো : গান গাও —-
কেউ কি ভেতরে আছো জীবিত বা মৃত, সাড়া দাও —-
দ্যাখো আমি মানুষের মূল্যবোধ নামক চিতাটি
এখনো আগলে আছি স্বপ্নময় চোখে সারা রাত ।
*****
মানুষের দহনাঙ্ক কতো
ছুই জ্বলে না । শুধু দাহ্য বাষ্পে আবর্ত-বাতাস
রোকিদের আগুনটুকু বহু কষ্টে আগলে রেখেছে ….
কে হাঁপাচ্ছে আগে
মাটি না-মানুষ, বন-পাহাড়, পাখিরা, নাকি পশু? ….
কাকে বলে জল? জলাশয়
কাকে বলে? কাকে বলে নদী? —-
পুরুইলার মাটি থেকে সে উত্তর তুলে নিয়ে যাও
হিমঘরে-থাকা মৃত কবি ।
তারপরে ভূ-বিদের কাছে
প্রশ্ন করো : মৃত্তিকার দহনাঙ্ক কতো?
পুরুলিয়া পোড়েনি এখনো।
সবেমাত্র বিয়াল্লিশ, আরো কতো ডিগ্রি সেলসিয়াস
বৃক্ষকে পোড়ায়, মাটিকে পোড়ায়, নলীকে পোড়ায়?
তাবা তো পোড়েই! শুধু পুরুল্যার মানুষ পোড়ে না ।
মানুষের দহনাঙ্ক কতো?