ঝড় বহে, মনে হয় ও যেন রে ঝড় নয়, অন্ধকার দুলিছে কাঁপিয়া
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের মতো আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম আমার ঠিকানা নয়। বরং এই নিবন্ধে প্রকাশ করতে চাইছি ঝড়ের ঠিকানা। অর্থাৎ ঝড় কোথায় থাকে কোথায় তার বাড়ি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে ঝড়ের জন্ম বা সৃষ্টির ইতিহাস থেকেই শুরু করা যাক।
কোনো স্থানে বায়ুর তাপ বৃদ্ধি পেলে সেখানকার বায়ু উপরে উঠে যায়। ফলে বায়ুর চাপ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। একে নিম্নচাপ বলে। এ নিম্নচাপ অঞ্চলে প্রায় বায়ুশূন্য অবস্থা থাকে বলে আশপাশের অঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। এ নিম্নচাপ কেন্দ্রমুখী প্রবল ঘূর্ণি বায়ু প্রবাহকে ঘূর্ণিঝড় বলে। সমুদ্রের জলের উষ্ণতার কারণে বায়ু উত্তপ্ত হঠাৎ করে এসব ঝড়ের তৈরি হয়। তখন তুলনামূলক উষ্ণ বাতাস হালকা হয়ে যাওয়ার কারণে ওপরে উঠে যায়, আর ওপরের ঠাণ্ডা বাতাস নীচে নেমে আসে। এসে নীচের বায়ুমণ্ডলের বায়ুর চাপ কমে যায়। তখন আশেপাশের এলাকার বাতাসে তারতম্য তৈরি হয়। সমুদ্রের জল ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি গরম হয়ে গেলেই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে।
অন্যমতে ঘূর্ণিঝড় হল ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রে সৃষ্ট বৃষ্টি, বজ্র ও প্রচন্ড ঘূর্ণি বাতাস সম্বলিত আবহাওয়ার একটি নিম্ন-চাপ প্রক্রিয়া যা নিরক্ষীয় অঞ্চলে উৎপন্ন তাপকে মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত করে। এই ধরনের ঝড়ে বাতাস প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ছুটে চলে বলে এর নামকরণ হয়েছে ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণন উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে।
অন্যদিকে গ্রীক মিথলজি অনুসারে পসেইডন ছিলেন গ্রিক পুরাণের সমুদ্র, ঝড় ও ভূমিকম্পের দেবতা। এট্রুস্ক্যান পুরাণের সমুদ্রদেব নেথুনস ও তার রোমান পুরাণের সমুদ্রদেবতা নেপচুন (নেপচুনের নামকরণ হয়েছে নেথুনসের নামানুসারে) উভয়েই পসেইডনের সমতুল্য। লিনিয়ার-বি লিপি থেকে জানা যায়, পিলোস ও থিবসে প্রাক-অলিম্পিয়ান ব্রোঞ্জযুগেও পসেইডনের পূজা প্রচলিত ছিল। পরে তাকে জিউস ও হেডিসের ভাইয়ের রূপে অলিম্পিয়ান দেবমণ্ডলীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পসেইডনের সন্তানাদি অনেক। এথেন্স নগরের অধিকার দখলের প্রতিযোগিতায় তিনি অ্যাথেনার কাছে পরাস্ত হন। কিন্তু তাকে অন্যান্য অনেক হেলেনিক শহরের রক্ষাকর্তা মনে করা হত। পসেইডনের নামে একটি হোমারীয় স্তোত্র পাওয়া যায়। ঝড় কিন্তু জানিয়ে আসে। আপনাকে প্রস্তুত হওয়ার সময় দেয় কিন্তু ভূমিকম্প কোনও চেতাবনি দেয় না, সে কখন কোথায় কত মাত্রার রিখটার স্কেলে সবাইকে টালমাটাল কাঁপিয়ে ছেড়ে দেবে, দেবা ন জানন্তি। কিন্তু ঝড় পাঁচ-সাত দিন আগে থেকে জানিয়ে দেয়, বঙ্গোপসাগর থেকে জন্ম নিয়ে সে কখন কোথায় পৌঁছবে ঘণ্টায় দেড়শো থেকে দুশো কিলোমিটার বেগে। ঘণ্টা কয়েক প্রলয়নাচন চালাবে, তার পর প্রতিবেশীর চত্বরে ঢুকে যাবে। আমপানও সেরকম কথার খেলাপ করেনি। নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত পথে সব কিছু তছনছ করে বিদায় নিয়েছে।
দৈনিক পত্রিকার খবরে যেমন বলা হয়েছিল ‘বঙ্গোপসাগরে চোখ রাঙাচ্ছে সুপার সাইক্লোন ‘আমফান’। অর্থাৎ সেদিন যে বিধ্বংসী আমফান আমাদের বাংলাকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়ে গেল সেটা হল সাইক্লোন। আবহাওয়াবিদদের ভাষায় সুপার সাইক্লোন। এখন এই সাইক্লোন কি? এর ব্যাখা দিতে গেলে ঝড়ের গতিবেগ অনুসারে ঘূর্ণিঝড়কে কতগুলো শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে, সেটা বলা দরকার।
আটলান্টিক এলাকার জন্য, প্রাথমিক অবস্থায় বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ৬২ কি.মি.-র নিচে থাকে, তখন একে শুধু নিম্নচাপ (Tropical depression) বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি.-এ উন্নীত হলে এটিকে একটি নাম দেয়া হয় এবং ঘণ্টায় ৬২ কি.মি. থেকে ১১৭ কি.মি. ব্যবধানে এটিকে একটি ঝড় বা Tropical storm বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ১১৭ কি.মি.-এর বেশি হয়, তখন এটি হারিকেন পর্যায়ে উন্নীত হয়। বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতে ঘূর্ণিঝড়কে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তাকে ঘূর্ণিঝড় বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে হ্যারিকেন গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়।
আসলে সাইক্লোন, হারিকেন ও টাইফুন শুনতে তিনটি পৃথক ঝড়ের নাম মনে হলেও আসলে এগুলো অঞ্চলভেদে ঘূর্ণিঝড়েরই ভিন্ন ভিন্ন নাম। সাধারণভাবে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। সাইক্লোন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ কাইক্লোস (kyklos) থেকে, যার অর্থ বৃত্ত বা চাকা। এটা অনেক সময় সাপের বৃত্তাকার কুন্ডলী বুঝাতেও ব্যবহূত হয়। ১৮৪৮ সালে হেনরি পিডিংটন তার ‘সেইলর’স হর্ণ বুক ফর দি ল’অফ স্টর্মস’ বইতে প্রথম সাইক্লোন শব্দটি ব্যবহার করেন। তারপর থেকেই ঘূর্ণিঝড় বুঝাতে সাইক্লোন শব্দের ব্যবহার শুরু হয়।
আটলান্টিক মহাসাগর এলাকা তথা আমেরিকার আশেপাশে ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ১১৭ কি.মি.-এর বেশি হয়, তখন জনগণকে এর ভয়াবহতা বুঝাতে হারিকেন শব্দটি ব্যবহার করা হয়। মায়া দেবতা হুরাকান- যাকে বলা হত ঝড়ের দেবতা, তার নাম থেকেই হারিকেন শব্দটি এসেছে। তেমনিভাবে,প্রশান্ত মহাসাগর এলাকা তথা চীন, জাপানের আশেপাশে হারিকেন- এর পরিবর্তে টাইফুন শব্দটি ব্যবহূত হয়, যা ধারণা করা হয় চীনা শব্দ টাই-ফেং থেকে এসেছে, যার অর্থ প্রচন্ড বাতাস। অনেকে অবশ্য মনে করেন ফার্সি বা আরবি শব্দ তুফান থেকেও টাইফুন শব্দটি আসতে পারে।
গ্রীক দেবীমাতা গায়া ‘টারটারুস’ এর সাথে মিলনে জন্ম হয় ‘টাইফন (Typhon)’-এর। এছাড়া বলা হয়ে থাকে- টাইফনের ঘাড়ে মাথা ছিলো একশটা। গায়া টাইফনকে দিয়ে জিউসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করালেন। কিন্তু জিউস টাইফনকে যুদ্ধে পরাজিত করেন। তারপর তার বুকে বজ্র দিয়ে আঘাত করেন। বজ্রের আঘাতে টাইফনের বুক জ্বলতে থাকে। জিউস তখন টাইফনের সেই জ্বলন্ত বুকের উপর ‘এটনা (Etna)’ পাহাড়কে স্থাপন করেন। গ্রীক পুরাণের মতে, সিসিলিতে অবস্থিত মাউন্ট এটনা এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে, এবং এখনো টাইফনের বুকের আগুনে পাহাড়টা জ্বলছে। ফণী, আয়লা, বুলবুল থেকে আমপান, সবই ওই সাইক্লোন থেকে টাইফুনের আদিম পৃথিবীর ধ্বংসলীলা।
আটলান্টিক মহাসাগর এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি.-এ উন্নীত হলে অর্থাৎ নিম্নচাপ যখন ঝড়ে পরিণত হয়, তখন এটিকে চিহ্নিত করার জন্য একটি নাম দেয়া হয়। হারিকেন অবস্থাতেও এগুলো এ নামেই পরিচিত হয়। ইংরেজি বর্ণমালা অনুসারে ২১ টি নাম (৫ টি অক্ষর বাদ দিয়ে) এক বছরের জন্য বাছাই করা হয় যেগুলো সাধারণত পর্যায়ক্রমিকভাবে ছেলে ও মেয়েদের নাম দিয়ে রাখা হয়। যেমন-২০০৬ সালের প্রথম হারিকেনটির নাম আলবার্টো, দ্বিতীয়টি বেরিল ইত্যাদি। এক বছরে ২১ টির বেশি হারিকেন উৎপন্ন হলে (২০০৫ সালে যেমন হয়েছিল), গ্রিক বর্নমালা অনুযায়ী নামকরণ করা হয়- হারিকেন আলফা, বিটা ইত্যাদি। এরকম ছয় বছরের জন্য নাম আগেই নির্ধারণ করে রাখা হয় এবং ছয় বছর পর পর একই নামগুলো আবার ফিরে আসে। তবে ক্যাটরিনা নাম আর কখনো ফিরে আসবে না, কারণ ধ্বংসাত্মক হারিকেনের নামগুলো তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয় এবং নতুন নাম নির্ধারণ করা হয়।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা আঞ্চলিক কমিটি একেকটি ঝড়ের নামকরণ করে। যেমন ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এই সংস্থার আটটি দেশ। দেশগুলো হচ্ছে: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান, যাদের প্যানেলকে বলা হয় WMO/ESCAP। এক সময় ঝড়গুলোকে বিভিন্ন নম্বর দিয়ে সনাক্ত করা হতো। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হতো। ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস দেয়া, মানুষ বা নৌযানগুলোকে সতর্ক করাও কঠিন মনে হতো। এ কারণে ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোয় ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়। সে সময় আটটি দেশ মিলে মোট ৬৪টি নাম প্রস্তাব করে। সেসব ঝড়ের নামের মধ্যে এখন ‘ফণী’ ঝড়কে বাদ দিলে আর সাতটি নাম বাকী রয়েছে। এর আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ করা হতো।
এই ঝড়ের ছবি আমরা পাই আধুনিক বাংলা সাহিত্যেও। তাই রবি জীবনী পড়তে গিয়ে দেখলাম তিনি এই ইংরেজের থেকে অনুপ্রাণিত৷
দেখ্ রে চেয়ে নামল বুঝি ঝড়,
ঘাটের পথে বাঁশের শাখা ঐ করে ধড়ফড়।
বাল্যবয়সে তিনি ম্যাকবেথের সেই তিন ডাইনির নাচকে সুন্দর বাংলায় অনুবাদ করেছেন, আমি ‘ঝড় বাদলের রাতে’ ওদের নাচ যেন দেখতেই পেয়েছি৷ পরবর্তীকালে রবীন্দ্রসাহিত্যে ঝড় যতবার পেয়েছি, ওই তিন ডাইনির নাচ ভুলতে পারিনি৷ তবে সবার আগে স্বীকার করতে হয় যে ‘দেবতার গ্রাস’-এর ঝড় সব বাঙালিরই মনকে নাড়া দিয়েছিল৷ ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসে অদ্বৈত মল্ল বর্মণ লিখেছিলেন, ‘‘কোনো রাতে ঝড় আরম্ভ হইলে সহজে কমিতে চায় না৷ সারারাত্রি চলে পাপসংহার৷ কোনো কোনো সময় প্রতি রাতে ঝড় আসে৷ সারাদিন খায় দায়, সন্ধ্যার দিকে আসন্ন ঝড়ের জন্য প্রস্তুত হয়৷ ঈশান কোণের কালো মেঘ সারা আকাশে ধোঁয়ার মতো ছড়াইয়া গিয়া হু হু করিয়া বাতাসে আসে৷ তারপর আসে ঝড়৷”
বাংলার সাহিত্যিকরা ঝড় বাদলের মধ্যে দিয়ে বাংলার মানুষের যে চিত্র তুলে ধরেছেন তাতে শুধু জীবিকা নয়, জীবনযাত্রাও পরিষ্কার হয়েছে৷ শরৎচন্দ্র, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ বা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখনীতে তাই ঝড়ের অন্য রূপ৷ ‘পদ্মা নদীর মাঝি’-তে তাই নদীর বুকে ঝড়ের অন্য বর্ণনা৷ ‘একদিন প্রবল ঝড় হইয়া গেল৷ কালবৈশাখী কোথায় লাগে৷ সারাদিন টিপিটিপি বৃষ্টি হইল৷ সন্ধ্যায় আকাশ ভরিয়া আসিল নিবিড় কালো মেঘে, মাঝরাতে শুরু হইল ঝড়৷’
বাঙালি যে তার একান্ত আপন ঝড়টিকে নিয়ে যারপরনাই রোম্যান্টিক তাতে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই৷ নইলে প্রেমেন্দ্র মিত্র লিখলেন কী করে –
‘ঝড় যেমন করে জানে অরণ্যকে
তেমনি করে তোমায় আমি জানি৷’
রবি ঠাকুরও এ দলে যে নাম লিখিয়েছেন, তার নমুনাও ভুরি ভুরি —
‘ঝড় বহে মনে হয়, ও যেন রে ঝড় নয়,
অন্ধকার দুলিছে কাঁপিয়া৷’
শরৎচন্দ্র লেখেন, ‘…তবে রাক্ষসী সাতশ’ নয়, শতকোটি; উন্মত্ত কোলাহলে এদিকেই ছুটিয়া আসিতেছে৷ আসিয়াও পড়িল৷ রাক্ষসী নয় — ঝড়৷ তবে এর চেয়ে বোধ করি তাদের আসাই ঢের ভালো ছিল৷’
বাঙালির জীবনে অবশ্য ঝড় কম নয়৷ বাঙালির রাজনীতি থেকে চায়ের কাপ — ঝড় তোলার অভ্যেসটা সর্বত্র৷ নজরুল থেকে সুকান্ত – সে তালিকাও কিঞ্চিৎ লম্বা বৈকি!
‘নাচে ঐ কাল-বোশেখী, কাটাবি কাল বসে কি?’
এবং
‘ঝড় আসছে — সেই ঝড়;
যে ঝড় পৃথিবীর বুক থেকে জঞ্জালদের টেনে তুলবে৷
আর হুঁশিয়ার মজুর;
সে ঝড় প্রায় মুখোমুখি৷’
এই ঘূর্ণিঝড় আয়লা, বুলবুল-এর স্মৃতি উস্কে দিয়েছে। আর যা ধ্বংসলীলা চালিয়েছে তাতে আয়লাকেও ছাপিয়ে গেছে আম্ফান।
কবি নজরুল মনে করেন- এ ধ্বংস যেন ধ্বংস নয়, এ যেন পুরাতনের বিনাশ- অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার, ভীরুতা ও কাপুরুষতার বিনাশ। এ যেন নতুন সৃষ্টির উন্মাদনা। এ যেন নতুন জীবন জন্মদানের বেদনা। এ যেন নতুন বিপ্লবের অপ্রতিরোধ্য সূচনা।
ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? — প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন ।
আসছে নবীন—জীবন-হারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন ।
তাই সে এমন কেশে বেশে
প্রলয় ব’য়েও আসছে হেসে—
মধুর হেসে !
ভেঙে আবার গ’ড়তে জানে সে চির-সুন্দর! ঋণ: ইন্টারনেট