• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৮)

আট

ঘরটা এক আজব কারখানা। কোনো দুটো জিনিসের মধ্যে মিল নেই। চারটে চেয়ার চার রখমের। টেবিলটা বেমানান শ্বেত পাথরের। একটা পায়ার বদলে আবার ডালডার কৌটো। মানে একটা পায়া বোধ হয় ভেঙে গেছে তাই ডালডার কৌটো দিয়ে পায়া বানানো হয়েছে। তিনটে আলমারি তিন রখমের। কুড়িয়ে আনা নানারখম জিনিসে ঘরটা জবরজং হয়ে আছে। রামদা হাত দিয়ে পাশের চেয়ার দেখিয়ে বলল, “বসুন, বসুন। আমি রামদা”। শ্রেয়ান বেশ নাটুকে গলায় বলল, “আর গুরু আমি চাকি আর ও ভজালি”। রামদা শ্রেয়ানের রসিকতা বুঝতে পেরে হো হো করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। খয়েরি রঙের আধখাওয়া দাঁতগুলো দেখে পুরো পাইরেটস অফ ক্যারিবিয়ান্সের কথা মনে পড়ে গেল। যদিও রামদাকে আদৌ জ্যাক স্প্যারোর মতো দেখতে নয়। বছর চল্লিশের ছোটখাটো পাতলা একটা লোক। মাথায় ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল। মানুষটির ওজন খুব বেশি হলে পঞ্চাশ কেজি হবে যার বেশির ভাগ মাথা আর চুলের ওজন। শরীরের সঙ্গে গলার আওয়াজের কোনো মিল নেই। গলার আওয়াজ কিন্তু খুব গুরুগম্ভীর। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলল, “ভালো, ভালো বলুন কি চাই”? হাসির মাত্রাটা বাংলার স্পিরিটের গুনে দ্বিগুন হয়েছে বুঝলাম। আমি বললাম “আসলে দরকারটা আমার। আমি একটা বিজনেস শুরু করেছি। বিভিন্ন হাসপাতালে রিসাইক্লিং করব। এই বিষয়ে আপনার একটু সাহায্য চাই”। রামদা কাজের কথায় এবার সিরিয়াস হয়ে বলল, “হ্যাঁ নিশ্চয়ই। কিন্তু বিনি পয়সায় তো কাজ হবে না ভাই। মাল খাওয়াতে হবে”। শ্রেয়ান তারাতারি বলে উঠল, আলবাত আমি এখনি নিয়ে আসছি”। রামদা খেঁকিয়ে উঠল “মাল আমার এখানে ভরপুর আছে। ওই আলমারি ভর্তি মাল। বিদেশি থেকে ভদকা সব আছে। এখানে না। তোমরা ভদ্দরলোক তো। চল একটা বড় জায়গায় যাই। মালের সঙ্গে গান নাচ সব হবে। তবেই জমবে ভালো”। আমি হেসে যোগ করলাম, “আর কথাও”। রামদা ঘার নেড়ে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ সেটাও হবে। আমি গাড়ি বের করছি তাহলে”। রামদা হন হন করে বের হয়ে গেল ঘর থেকে। আমরাও ওর পিছু নিলাম। রামদা ঘর থেকে বেড়িয়ে একটা জোর হাঁক পাড়ল “ এই টেনিয়া গ্যারেজ থেকে গাড়িটা নিয়ে আয়। এই নে চাবি”। রামদা চাবিটা বাইরে বসা একটা ছেলের দিকে ছুঁড়ে দিল।
আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। মনে সন্দেহ যে এর আবার কি গাড়ি আছে। শ্রেয়ান আমার কানে ফিস ফিস করে জিজ্ঞাসা করল, “ময়লার লরি আনবে নাকি?” আমি শ্রেয়ানকে কনুই দিয়ে গুঁতো মেরে থামিয়ে দিলাম। রামদা নিজেই বকে যাচ্ছে। ওর নাকি বিশাল ‘সোর্স। কলকাতার তাবড় তাবড় নেতারা ওকে চেনে। এম. এল. এ. সামন্ত নাকি ওর বোতল পার্টনার। গাড়ি এল। গাড়ি দেখে আমাদের চক্ষু চড়কগাছ। একটা লাল রঙের চার চাকার দামি গাড়ি। আমাদের ইশারা করে স্টিয়ারিং-এ গিয়ে বসল রামদা।
রামের গাড়ি চালানোর জেরে আমাদের হার্টফেল হওয়ার উপক্রম। রাস্তায় চলতে চলতেই মাঝে মাঝে স্টিয়ারিং ছেড়ে হাততালি দেয়। আবার রাস্তায় গর্ত দেখলে স্টিয়ারিং এমন ঘোরায় যেন জাঁতাকল পিষছে। আমাদের রামদার ডেরায় আসার পথে দেখা কারখানার দিকে হাত দেখিয়ে বলল, “এই দেখ আমার কারখানা, পেলাস্টিকের”। আমি অধৈর্য হয়ে বললাম, “রামদা আমরা কোথায় যাচ্ছি”? রামদা ঘোড়ার চিঁহিঁ শব্দের মতো শব্দ করে হেসে বলল,জন্নত! আইস গার্ডেন”।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।