ধাপার ডাম্পিং গ্রাউন্ডের এলাকায় ঢুকে বেশ অনেকটা রাস্তা পার হওয়ার পরও যখন চারিদিকে শুধু ফাঁকা আবর্জনা জমি জমা, মাঝে মাঝে বাঁধা কপির চাষ আর খাল ছাড়া কিছুই চোখে পড়ল না, আমরা ঠিক করলাম বাইকটা দাঁড় করিয়ে একবার রামদাকে ফোন করে জেনে নেওয়া উচিত। রাস্তা বেশ অন্ধকার আর শুনশান। বেশ একটা গা ছমছমে এবং দুর্গন্ধময় পরিবেশ। আমার হঠাৎ মাথায় এল সেইদিন ট্যাক্সিটা আমাকে এই রাস্তায় নিয়ে আসেনি তো? কিন্তু গন্ধটা সেইদিন টের পাইনি। ধাঁধা নিয়ে গভীর চিন্তায় ছিলাম বলে হয়তো খেয়াল করতে পারিনি। শ্রেয়ান ইতিমধ্যে রামদাকে ফোনে যোগাযোগ করেছে। শ্রেয়ান বলল, “আমরা ঠিকই যাচ্ছি বস, রামদা বলেছে। আর একটু এগিয়ে বাঁদিকে”। আমি সম্বিত ফিরে পেয়ে বললাম, “চল তাহলে”। সামনে একটু এগোতেই দু একটা ঝুপড়ি চোখে পড়ল। একটা কারখানার শেডও দেখলাম। তারপর বাঁদিকে রাস্তা ধরে একটু এগোতেই দেখলাম মস্ত এক পাহাড়। অন্ধকারে দূর থেকে বুঝতে পারিনি। পাহাড়ের একটু আগে থেকে বিরাট লম্বা একটা পাঁচিল। পাঁচিলের ভাঙা অংশটাই এনট্রান্স। ভাঙা অংশটা এত বড় যে দু-তিনটে বড় লরি তার মধ্যে দিয়ে গলে যেতে পারে। আমাদের বাইকও বাঁদিকে ঘুরে গেল। পেছনের বড় পাহাড়ের সামনে একটা ছোট্ট ঢিপি আর তার সামনে মস্ত বড় একটা ময়লার আস্তাকুঁড়। তারই সামনে বসে তিন চারটে ছোট ছেলে কি যেন করছে। চারিদিকে বিশ্রি দুর্গন্ধ। পেছনের ঢিপি আর পাহাড় আবর্জনা জমে তৈরি। বাইকটা বাচ্ছাগুলোর সামনে দাঁড় করিয়ে ওদের রামদার ডেরার কথা জিজ্ঞাসা করলাম। ওরা সঙ্গে সঙ্গে হাত দিয়ে একটু আগে দর্মার ঘরের দিকে দেখাল। দর্মার ঘরটার বাইরে একটা হ্যালোজেন আলো জ্বলছে। সেই আলোতেই আশে পাশের জায়গা আলোকিত হয়ে আছে। বাচ্ছাগুলো আবর্জনা ঘেঁটে বাছাই করে আলাদা করে রাখছিল প্লাস্টিকের স্তূপ, কাঁচের স্তূপ, কাজগের স্তূপ, কাপড় চোপড়ের স্তূপ ইত্যাদি। গন্ধে গা গুলিয়ে উঠেছিল। পাঁচিলের এপাড়ে এসে বুঝলাম পাঁচিল শুধুই রাস্তার দিকটায়। পাঁচিল ধরে বাচ্ছাগুলিকে পেছনে ফেলে ঝুপড়িটার দিকে এগিয়ে গেলাম। কাছে যেতেই বুঝলাম, ভেতরে আগুন জ্বলছে। খোলা বেড়ার দরজা দিয়ে ঢুকে শ্রেয়ান হাঁক মারল “রামদা?” তারপর আমায় ডেকে নিল, শ্রেয়ান যখন ভেতরে ঢুকল আমি তখন বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। ঘরে ঢুকে দেখালাম আগুন জ্বেলে তাতে রান্না করছে জনা চারেক ছেলে। পচা মাংস আর গাঁজার তীব্র গন্ধ মিশে এক অসহ্য গন্ধ এল নাকে। ঝুপড়ির ভেতরে দেখলাম একদিকটা পাকা দেওয়াল। আর তার মধ্যে একটা মজবুত কাঠের দরজা। বুঝলাম ঝুপড়ির দর্মা শুধু তিনদিকে আর একদিকে পাকা দেওয়াল। পাকা দেওয়ালের ওপাশে আর একটা ঘর আছে বোঝা গেল। একটি ছেলে বলল, রামদা ভেতরে আছেন, যান। শ্রেয়ান দরজায় একটা টোকা দিয়ে দরজা ঠেলে দিতেই দরজা খুলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া গায়ে এসে লাগল। বুঝলাম ভেতর ঘরে এ. সি. আছে। শ্রেয়ানের পেছন পেছন আমিও ভেতরের ঘরে ঢুকলাম। ভেতরে একটা টেবিল ও চারটে চেয়ার পাতা। তারই একটাতে একটা লোক বসে দেওয়ালে লাগানো এল. সি. ডি. টিভিতে ব্লু ফিল্ম দেখছে। হাতে তার বাংলা মদের বোতল। বোতল থেকে মাল গলায় ঢালছে আর কত কত করে গিলছে।