সকালে সি. ডি -টা পাওয়ার পর থেকে আমি আপাতত নিজের ঘরে স্বেচ্ছা নির্বাসনে। পাঁচ ঘন্টা ধরে লড়েও কিছু উদ্ধার করতে পারিনি। সত্যি কথা বলতে কি কোনো খেই পাচ্ছি না। বিষয়টা হল একটা সি. ডি যার বাক্সের গায়ে একটা কবিতা। কবিতাটা নিশ্চই একটা সূত্র। সিডির ভেতর বেশ কিছু ডকুমেন্ট। ডকুমেন্টগুলোর নাম কোনো দেশ বা শহরের নামে। ডকুমেন্ট খুললে দেখা যাচ্ছে নানান ধরনের ডিসাইন করা। এগুলো কোনো সিম্বল হতে পারে বা কোনো হরফ হতে পারে। আবার কোনো নকশাও হতে পারে। রাইটিং প্যাডটা নিয়ে লিখে ফেললাম ওই তিনটে শব্দ। কবিতা, জায়গার নাম আর ডিসাইনার রেক্ট্যাংলস (D.R)। কিন্তু প্রশ্ন হল এইসব কিছুর সঙ্গে আমি কিভাবে যুক্ত? এটা কি কোনো গুপ্তধনের হদিস? আমি যেহেতু ক্রিপ্টোগফার তাই আমার কাছে এগুলো পাঠানোর চেষ্টা করেছিলেন কি মিঃ চোঙদার! বোধহয় তার উদেশ্য ছিল আমি যাতে ধাঁধাটা সমাধান করতে পারি। কিন্তু আমার ব্যাপারে উনি জানলেন কি করে? এটা ভেবে আশ্চর্য হচ্ছি যে আমাকে উনি কি চিনতেন? তাহলে আমি ওনাকে চিনি না কেন? ওনার স্ত্রী বলেছেন উনি বৈজ্ঞানিক ছিলেন। ওনার নামটা বার বার মনে উচ্চারণ করতে, মনে হল নামতা কোথাও আগে শুনেছি বা পড়েছি। হয়তো ওনার নাম কোনো আবিষ্কার বা রিসার্চ ওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। খবরের কাগজে তার নাম পরে থাকতে পারি। হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দে ভাবনায় ছেদ পড়ল।
আমি আগন্তুককে ঢোকার সম্মতি জানাতেই শ্রীমান শ্রেয়ান ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি ভুঁরু কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করাতে ও বলে উঠল, “তোমার চোঙার ঠোঙা খুলে খবর জোগাড় করলাম “। আমি চমকে জিজ্ঞাসা করলাম, “মানে? ইউ মিন মিঃ চোঙদার ! কেমন করে? “শ্রেয়ান বলল, “যুগল জ্যাঠার কাছ থেকে জানলাম”। আমি বললাম, “সেটা আবার কে?” শ্রেয়ান নিজের রসিকতায় নিজেই হাঃ হাঃ করে হেসে উঠে বলল “আরে যুগল জ্যাঠা মানে গুগল। আমাদের কলেজের এক স্যার, গুগলকে যুগল বলে উচ্চারণ করে “। আমি জিজ্ঞাসা করলাম “কি জানলি গুগল সার্চ করে? ” শ্রেয়ান বেশ কায়দা করে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল, “ইউ হ্যাভ বিন ফুলড, ওয়াইজ ম্যান”। আমি বললাম, “মানে?” সিরিয়াস বিষয়ে আমার ভনিতা মোটেই ভালো লাগে না। তবুও রাগ চেপে ওর বলার অপেক্ষায় মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কারণ তথ্যটা আমার জানা দরকার। বাবু যথারীতি ভনিতা করেই শুরু করলেন, “ডঃ কানুপ্রিয় চোঙদার, পি. এইচ. ডি. ইন বায়ো কেমিস্ট্রি ফ্রম হামবার্গ ইউনিভার্সিটি অফ জার্মানি। ওই ইউনিভার্সিটিতেই উনি একজন জনপ্রিয় প্রফেসর ছিলেন। ওনার নিজস্ব সাইট আর ব্লগিং সাইটও আছে। উনি সত্তর বছর বয়স পর্যন্ত ও দেশেই ছিলেন। জন্ম যদিও চট্টগ্রামে, কিন্ত কুড়ি বছর বয়স থেকেই উনি বিদেশে। হঠাৎ তার কর্মজীবন ত্যাগ করে বিগত বছর দুই তিনেক ধরে কলকাতায় স্থায়িভাবে বসবাস করছিলেন। ওনার অনেক পেপার পাবলিশ হয়েছে এবং নিজের সাবজেক্টে দুটি বইও লিখেছেন। “আমি ওর কথার মাঝখানেই জিজ্ঞাসা করলাম “এতে আমি বোকা বনলাম কি করে? এতক্ষন যা বলেছিস তার সঙ্গে আমার বোকা বনার কি সম্পর্ক?” শ্রেয়ান বিজ্ঞের হাসি হেসে বলল, “দাঁড়াও, দাঁড়াও, এখনও আমার সব কথা শেষ হয়নি। এখনও চমকের বাকি আছে। ডঃ চোঙদারের স্ত্রীর নাম ইস্লোভা পোলাস্কি। জার্মান মহিলা। উনি আজ থেকে পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন।” সত্যি চমকে যাওয়ার মতো খবর । তবুও বললাম, “কিন্তু এমনও তো হতে পারে ডঃ চোঙদার দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছিলেন? ” শ্রেয়ান মুখ বেঁকিয়ে বলল, “ভাঙবে তবুও মচকাবে না।” আমি কিন্তু সত্যি চিন্তায় পরে গেলাম। তাহলে ভদ্রমহিলা কে? মিঃ চোঙদার কি আমার আগের লাইফের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত? আমিও তো ছেলেবেলায় জার্মানিতেই থাকতাম। তাহলে উনি কি আমার বাবার সহকর্মী বা বন্ধু? তাই যদি হয় তাহলে তো উনি আমার পূর্ব পরিচিত হতেই পারেন। শ্রেয়ান যা তথ্য দিলো সেই অনুযায়ী আমার বাবা ও ডঃ চোঙদার একসঙ্গে বেশ কিছু বছর হামবার্গ ইউনিভার্সিটিতেই কর্মরত থাকার কথা উড়িয়ে দাওয়া যায় না। তার মানে মিসেস চোঙদারের পরিচয়ে যে ভদ্রমহিলা এসেছিলেন তাকে প্লান্ট করা হয়েছিল আমার হাতে সি. ডি -টা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সব শুনে শ্রেয়ানও আমার সঙ্গে একমত হলো।