• Uncategorized
  • 0

কবিতায় অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়

আচার্য্যদেবের সঙ্গে একটি সন্ধ্যা

আচার্য্যদেব বললেন— অস্ত্র অনেক আছে। কেবল তরবারি নয়, পিস্তল নয়, ত্রিশূল নয়। এই যে জানলা দেখছ, একে যদি ‘গবাক্ষ’ বলে ডাকি, এও এক অমোঘ আয়ুধ। একে ব্যবহার করি যাবতীয় উপদৈব শক্তির বিপরীতে। উপদৈব শক্তি মূলত স্ত্রীজাতি। তাঁরা মনুষ্যজন্ম ধরে এখানেই বিকশিত। তবে এঁদের পূজাবিধি অতি গোপন। মূল উপচারে লাগে বলি এক মাহিষ্য কিশোর, নৈবেদ্য এক কায়স্থ যুবক এবং প্রণামী এক ব্রাহ্মণ প্রৌঢ়। এই ত্রিবিধ বয়স ও পৌরুষকে আত্মসাৎ করে উপদেবী রুধিরসিক্ত বয়ানে হেসে উঠলেই মহাপ্রলয়ের সম্ভাবনা। তারই বিপরীতে এই এ গবাক্ষ— দ্যাখো—
বলার সঙ্গে সঙ্গেই জানলার বাইরে দেবদারুবীথি মুছে গিয়ে ফুঁসে উঠল কালো সমুদ্রতট, তার তীরে দীর্ঘ ঝাউশ্রেণী মাথা চালছে এমন ভঙিমায় যেন এক সুফি সঙ্গীত মিউট করা আছে দৃশ্যপটে। সে কথা বলতেই আচার্য্যদেব বললেন— যথার্থ। ঐ সঙ্গীতই উপদৈব স্ত্রীশক্তিকে প্রতিহত করে। তাঁর উগরানো ক্রোধ, লালসা ও অভিচার যথাক্রমে স্বপ্ন। মায়া ও মতিভ্রম হয়ে তাঁকেই আহত করে। তাঁর শোষিত রুধিরের ত্রিধারা গঙ্গা,যমুনা ও সরস্বতী হয়ে সাধকের ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্নায় প্রবাহিত হয়।
আর উপদেবী? আচার্য্য নীরব রইলেন…
বহু রাতে আচার্য্যগৃহ থেকে ফিরবার পথে তুমুল ঝড়বৃষ্টি। মনে হলো, সমস্ত জগৎ যেন অভিচারিণী স্ত্রীলোকের ব্যর্থতায় ফুঁসছে, সমস্ত দেবদারু গাছ যেন প্রেতপক্ষের কৌঁসুলি। জল জমা গোটা পথ যেন উপদেবীর উগরানো রুধির। নিবিষ্ট চিত্তে ‘গবাক্ষ গবাক্ষ’ জপ করতে করতে মনে হলো সব দেবদারুই নিঃসীম ঝাউবৃক্ষে পরিণত। তাদের সমস্ত পাতা যেন উলটে রয়েছে মহাশূন্যের দিকে, অনেকটা শ্রীরামকৃষ্ণ সমাধিস্থ অবস্থায় যে হাতটিকে আপন বক্ষে রাখতেন, সেই ভাবে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।