মেজাজটা বেজায় খিঁচড়ে আছে সলিলের। এতটাই যে এতবড় একটা শোকের সামনে দাঁড়িয়েও সে একফোঁটা কাঁদেনি।
মা বলেছিল, “গলা ছেড়ে কাঁদ সলিল।”
বন্ধুরা বলেছিল, “কাঁদ, একটু হালকা হবি।”
কিন্তু সলিল কাঁদতে পারেনি। তার ঘেন্না হয়েছিল। বাবার ওপর। যে বাবাকে সে এতদিন নিজের আদর্শ বলে মনে করত, এখন সেই বাবাকে সে খুব খুব ঘেন্না করে।
তুমি কী বাবা! আমাকে, মাকে পথে বসিয়ে ভীরুর মতো সিলিং ফ্যানে গামছা পেঁচিয়ে ঝুলে পড়লে! সলিল তেঁতো মুখে বাবার ছবিটার দিকে তাকায়। না, কিছুতেই সে কাঁদবে না। একটা লোক নিজের বউ-ছেলের কথা না ভেবে কাপুরুষের মতো জীবন থেকে পালিয়ে গেল; না, তার জন্য একফোঁটা চোখের জলও সে খরচ করবে না।
শীতের বিকেলটা দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। ঘরের ভেতর আধো অন্ধকার। আলো জ্বেলে বইয়ের তাক থেকে সলিল ‘সঞ্চয়িতা’ টা টেনে নামায়। ওর বহুবার আবৃত্তি করা কবিতাটা ফের টানতে থাকে। “যদিও সন্ধ্যা নামিছে মন্দ মন্থরে/ সব সংগীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া/…..তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,/এখনি অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা”…..।
বইয়ের ভেতর পাখার ভাঁজে একটা কাগজ ঢোকানো আছে। বইটা খুলতেই কাগজটা নজরে পড়ে। বাবার হাতের লেখা। সলিল পড়ে।
একবার। তারপর আরও একবার। বারবার।
বাবা সলিল,
টিউসন পড়িয়ে সংসার চলে না। আবার চাকরির অবস্থাও তো বোঝো। আমার আর তিন বছর চাকরি। এর মধ্যে তোমার কোনো সুব্যবস্থা হবে কিনা জানি না। সরকারি কর্মচারী চাকরি থাকাকালীন মারা গেলে তার সন্তান চাকরি পায়। তাই সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললাম। আমার কোনো কষ্ট নেই। আমি জানি চাকরিটা তুমি পাবে।