• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় নীলাঞ্জিত চক্রবর্তী

গ্রাস

আজ বোধহয় আর বৃষ্টি থামবেনা। ঝড়ের তীব্রতাও বাড়ছে। বিদ্যুতের আলোয় মাঝে মাঝে নুয়ে পড়া গাছেদের দেখছি। কড়াত করে বাজ পড়লে চমকে উঠে পা গুটিয়ে নিচ্ছি।পাখিরা কোথায় আছে এখন? কেমন আছে? ওরা কিভাবে ঝড় শয়ে রয়ে যায় এই ব্যাপারটা আমার কাছে রহস্য হয়ে থেকে যাবে। বহু বছর আগে টানা সাতদিন বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের পায়রাগুলোর ডানা এতটাই ভারী হয়েছিল যে ওরা ওড়ার ক্ষমতা হারিয়েছিল। বাড়ির লম্বা বারান্দায় হেঁটে চলে বেড়াচ্ছিল ওরা। মাঝে মাঝে বেড়ালেরা এসে মুখে করে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে সিগারেট টানতে টানতে দেখছিলাম। বিড়ালেরা আমাকে দেখে থমকে দাঁড়াচ্ছিল। অদ্ভুত প্রাণী ওরা। চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলে থমকে যায়। যতক্ষণ তাকিয়ে থাকবো ততক্ষণ স্ট্যাচু হয়ে থাকবে। তাই ঘাড় ঘুরিয়ে নিতে হচ্ছিল।আঁড়চোখে আর কতটুকু দেখা যায়? আবছা পায়রা আবছা বেড়ালের গ্রাসে….. চাইলে হুট হাট করে এইসব শিকারী প্রাণীগুলোকে তাড়িয়ে দিতে পারতাম। বড় লাঠিও ছিল। দুয়েকটার মাথা চটকে দেওয়া যেত – কিন্তু হস্তক্ষেপ করিনি। ঈশ্বর হস্তক্ষেপ করেন না। সেই যে সেবার দুপুরবেলা সুনশান পুকুরপাড়ে আমাকে দেখে সাঁতরে ঐপারের ঘাট যাচ্ছিল মেয়েটা। তারপর মাঝপথে তলিয়ে গেল….কোথায় ঈশ্বর? অগত্যা আমাকেই জলে নেমে তুলে নিয়ে আসতে হলো সন্ধ্যে নাগাদ। ভেজা শরীরের উপর চড়া সেই প্রথমবার। ভেজা, স্যাঁতসেঁতে, ঠান্ডা মেরে যাওয়া।.. মনে পড়লে হিমভাব জেগে ওঠে শরীরে। একটা ঠকঠকানি দাঁতে দাঁতে ঠোক্কর আমি থামাতে পারিনা। প্রবল খরতাপেও লেপমুড়ি দিই। তবে মাথাটা লেপের বাইরে রাখতে হয়। লেপের তলা বড় অন্ধকার। বড় অঅস্বস্তিকর।
বৃষ্টি হয়ে ভালোই হয়েছে। গরমে ঝলসে রঙ বদলে যাচ্ছিল আমার। চামড়ার। মনের। আমার এক পূর্বপুরুষকে গরমকালে শেকলে বেঁধে রাখা হতো। খোলা পেয়ে একবার অন্য পাড়ার উঠতি ছুড়িকে….. ছুড়িটার শরীর মিলেছিল দুদিন পর দূর এক মাঠে, জলকাদায় আধডোবা, মাছিভনভন ….
শুনেছি কাক কাশতে কাশতে রক্ত ছিঁটায় পুরুষাণুক্রমিক জলধারায়। আমার এখন একবার বাইরে বেরিয়ে মাথায় বৃষ্টি মাখা উচিত?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।