• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া

অথ পাঞ্চালী কথা

গনমণিদের উঠোনে সালিশ বসেছে।বাঁশের মাচায় বসেছে গনার বাপ,মোড়ল,গাঁওয়ের আরও দু-তিন জন মাথা।উল্টো দিকে বাকি মেয়ামরদ।
খেজুর পাতার পাটিতে বসেছে গাঁওয়ের বুড়াবুড়ি,তাবাদে মাটিতেও বসেছে অনেকে।ভিড় থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়েছে পদী বর্মণ।পদীর মরদ,রয়েছে মুরুব্বীদের পায়ের কাছেই।
মোড়ল কলো,আজবংশীর ম‍্যায়াক ঘরেত তুলবার বুধাক না করচিনু মুই।তকন এঙ্কাই পাশসো টেকা সালিশেক দিয়া ফের বিয়া কললো।কেঙ্কা লাগোছে একন !
আর তুই ক শালী, কারোক না কয়ে কোন্ঠে যাস তুই? জমি থাকে ঘুরা আসে বুধা তোক ঘরে পায় না ক‍্যান?
বর্মণগের ঘর ছাড়ে বুধার হাত ধরা ইস্তক বাপের ঘর যাবা পারে না , এ কথা সভার মাঝখানে মুখোত আসে না তার মনে মনে কয়,নদীর ধারত যায়ে দেখি কোন্ঠে বাপের ঘর আর বোবা শব্দের ওপর সজনের ফুল ঝরে পড়ে।
বউটার চরিত্রি খারাপ! পাঁচমাথা একমত,ম‍্যেয়াটার শরম এক্কেরে ঘুচায় দে!কাপড় খুলা লে শালীর!
গনার দাদা কানু  সোরেন সালিস শুনছিল এতক্ষণ। সাত বিঘের জমি,পুখোরের মালিক বলে  গনা-কানুর বাপেক দেখে লখামোড়লও ভয়ে চলে।
মেলাবার  মরা বাচ্চা বিয়োনোর পর কানু জম্মালে কানুর বাপের হাইরে আল্লাদের হাসি। গাঁয়েত ইস্কুল নাই বলে কানুর মাক কান্দায়  ছেলাক গাঙের ওপারোত বন্দু নন্দ সোরেনের  ঘরোত রাখে আলো।কিন্তুক দশ কেলাসে  যায়ে কি মতি ধরল,বাঁশি শিকবায় চায়ে মামার ঘরোত গিয়ে উটলু।
বছর তিন হলু বাপ বহুত চ‍্যাষ্টায় ছেলাক  ফিরায়ে আনিছে বটে ,হালবলদ নিয়া জমিত যায়ও চ়েংড়া  কিন্তুক  রাঙাপারা কাঁসার থালখান গাঙের জলোত  টুপুস করি ডুব দিল কি,আর সাঁঝ লাগলু কি বাঁশিত ফুঁক।
ম‍্যেয়া মানষের লজ্জা খুলা লিবা ই কেমন অলেয‍্য কতা!বাঁশিখান কোমরেত গুঁজে হঠাৎই কানু হাঁক মারল।চুপ মার কানু তোর বড় ছেঁকা লাগোছে! এক মাথা বলে উটলু,
জেঙ্কা মাগীর নামের বাহার, দৌপদী বম্মন!সে বিটিছিল‍্যারতো পাঁচ পাঁচ খান মরদ ছিলু!এলায় কাপুড় খোলবারে শরম লাগোছে?হাসে গড়ায়  সক্কলি।
মোড়ল যা কছে এঙ্কা হলি মুই কিন্তুক থানাত যাবু,কানু গোলমালের মাঝে খাড়া হয়া উটলু।
কানুর বাপ,ছ‍্যেলা সামলা।কি কবু তোক,শালী গেরামত থাকলি  মরদগুলানের মাতা চিবায় খাবু।
দৌপদী দ‍্যাখে,কালো পাথরের নওল কিশোর বাঁশি হাতে দাঁড়িয়েছে মহীরুহ হয়ে।কতকাল ধরে প্রত্নসন্ধ‍্যার নক্ষত্র আলোয় মগ্ন মৃত্তিকার পরে হেঁটে আসছে পাঞ্চালী।অভিমানী লাজবস্স্ত্র টেনে ধরছে নির্লজ্জ্ব সভা আর শুধু প্রেমই এগিয়ে দিচ্ছে সম্ভ্রম।
রাত নিশুত হলে পথে নামে কৃষ্ণাযুবতী।সজনি তলায় ছায়ার মত দাঁড়ায়ে আছে আরো একজন।
কেঙ্কা আছু মিতে? আজবংশীর ম‍্যায়াক ঘরোত তুলবা হবু না,বাপ কলু আর চলা আলু হামাঘরে রাধাক ছাড়ে হাচাই কবু, খোব ভীতু মনে হসলো তোমাক সেদিন আজ কিন্তুক খোব সাহসী মনে হছে।রাধাক ছাড়ে কেঙ্কাই আলা কও।
তাক মুই ছাড়ে আসে নি মিতেনী।সেও মোক ছাড়ে নাই।সংসারত ম্যালাই নোভ,ভয় আর অবিশ্ব‍্যাস।এলায়  বুকেত সুর ঢুকবার, পারে না। কিন্তুক এঙ্কাই একবার যদি  ঢোকোছে তো জেবনভর মানষে তাক বুকোত নিয়াই ঘোরে।হামাক দ‍্যাকো, জেবনের এই পারোত বাঁশি তো ওই পারোত তোমাঘরে রাধাক রাখোছি মুই।হাওয়ায় মিলায় গেল কানুর লম্বা শ্বাস।এলা কতা থাক মিতেনী, চলু তোমাক বাপের ঘরোত দিয়া আসি।  দ‍্যাকো আন্ধারে পড়োছিলু তো আট্টু হলি তবু হাতখান ধরবার পারোছো না হ‍্যা মিতেনী?অন্ধকারেই হাসে হাতখান বাড়ায় ধরলু।
কৃষ্ণা দ্বাদশীর অন্ধকারে হেঁটে যাচ্ছে দুটি মানুষ।নিষিদ্ধ বর্ণমালা থেকে  আজ যদি ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয়  জলেডোবা হাত।হাতের পাতায় দ‍্যাখো ভরে যায় সজনে ফুলে…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।