তিনদিন ধরে কারেন্ট নেই । মোমবাতি জ্বালিয়ে খেতে বসেছিল ওরা তিনজন । বাবা, মা ও একমাত্র সন্তান কিশোর । এই রকম ঝড়-জল বহুকাল দেখেনি কেউ । সারা কলকাতা যেন নিস্তব্ধ , নিস্তেল । সন্ধ্যার পর কেউ বাইরে থাকছে না । ঘরে কেরোসিন নেই । সরকারি ত্রাণ সর্বত্র পৌঁছয়নি । শহরের রাস্তায় ভারী বুটের শব্দ ।
অনেক অলি-গলি পেরিয়ে সন্ধ্যার পর কিশোর বাড়ি ফিরল প্রায় সাতদিন পর । সে কোথায় থাকে কেউ জানে না । আগে কয়েকবার পুলিশ এসেছিল । কিশোরকে পায়নি । বৃদ্ধ বাবা-মাকে শাসিয়ে গিয়েছে ।গাল দিয়েছে অকথ্য ভাষায় ।
ওবেলার ভাত ছিল জল দিয়ে ঢাকা । মোমবাতি জ্বেলে খেতে বসেছে তিনজন । কিশোর বললে , আজ আমরা একসঙ্গে খাবো ।মা ভাত মেখেছে সামান্য নুন-লংকা , তেল , পেঁয়াজ কুঁচিয়ে । কিশোর একটা গ্রাস মুখে দিয়ে বললে , আহা— কতদিন পর তোমার হাতের পান্তা ভাত মাখা খাচ্ছি ।মায়ের চোখে-মুখে তৃপ্তি । বাবার চশমার কাচ ঝাপসা হয়ে গেল ।বাইরে হঠাৎ দরজায় টোকা…
ভীত ও সন্ত্রস্ত্র হয়ে উঠল ওরা তিনজন । অন্ধকারেই উঠে দাঁড়াল কিশোর ।বাইরে থেকে ভেসে এলো, দরজা খুলুন– আমরা পুলিশ– না খুললে দরজা ভাঙবো এখুনি…
কিশোর আর দাঁড়াল না । নিজের ঝোলাটা কাঁধে নিয়ে বললে , পুলিশ খোঁজ পেয়েছে । চলি মা । সাবধানে থেকো , বলে রান্নাঘরের দরজা খুলে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল ।
দরজায় ক্রমাগত ধাক্কা । শুয়োরের বাচ্চা দরজা খোল । দরজা খুলে দিল বাবা । চার-পাঁচটা পুলিশ , হাতে বড় বড় টর্চ । খুঁজে দেখল ছোট্ট ঘরটা । একজন পুলিশ বললে , স্যার — পালিয়েছে…
পালিয়ে যাবে কোথায় । আজ ওকে ঠিক ধরবোই । বলে বেরিয়ে গেল ওরা ।
কিছুক্ষণ পর কয়েকটা গুলির শব্দ ভেঙে দিল রাত্রির নৈঃশব্দ্যকে । নিভে গেল মোমবাতির আলো ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন