মণিমালা এই সময়টা শুধু একার সংগে কাটাতেই অভ্যস্ত । সংসারের সব কাজ গুছিয়ে , সবার খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে , নিজের খাওয়া সেরে খবরে কাগজটা আর মোবাইলফোনটা বগলদাবা করে দোতলার ঘরে এসে ঘর অন্ধকার করে শুয়ে থাকা অনেকদিনের অভ্যাস তার । দুপুরটা গড়িয়ে এসে এখন থেমে থাকে জানালার পাশের রঙ্গন গাছটার নিচে । খবরের কাগজের হাবিজাবিতে চোখ বোলাতে বোলাতে মাঝে মধ্যেই উৎকর্ন হয়ে ওঠে ! কই আজ তো শুনতে পাচ্ছে না ! আজ কি তাহলে আসেনি ?
এই এক নতুন নেশায় পেয়েছে মণিমালাকে ! প্রতিদিন ঠিক এরকম সময় ওদের গলি দিয়ে যায় এক ফেরিওয়ালা , বাচ্চাদের খেলনা ডুগডুগি , কাঠি পাখা , আর বাঁশি নিয়ে । এই ফেরিওয়ালা হাঁক পাড়ে না , বাঁশি বাজিয়ে যায় । বড় ভালো বাজায় কিন্তু সে ! মণিমালা মন দিয়ে শোনে , হু হু কর এওঠে যে কেন তার মন বাঁশি শুনলে কে জানে ! কিন্তু বড় ভালো লাগে তার , প্রতিদিন ঠিক এসময়ে শুনে শুনে একরকম নেশাই হয়ে গেছে তার । মাঝে মধ্যে যদি না আসে সেই ফেরিওয়ালা , বড় উচাটন হয় তার ।
আজ যেমন কেমন দেরী হচ্ছে , । খবরে কাগজ পড়ার চেষ্টা করল , একবার মোবাইল ফোনটা খুলে দেখল কে কি লিখেছে টিকেছে , কি ছবি পোস্ট করেছে । কিন্তু নাঃ ধুর…
এমন সময় যেন মৃদু সুর ভেসে আসতে শুনল মনিমালা !হ্যাঁ ঠিক তাই …এসে গেছে সে ! ধীরে ধীরে বাঁশির সুরটা এগিয়ে আসছে মনিমালাদের বাড়ির দিকে , একদম ব্যালকনির নিচেই । আচমকা থেমে গেল বাঁশি ! মানুষের গলা পাচ্ছে মনীমালা , একটা কচি গলাও! কেউ কিছু কিনছে বোধহয় । আবার বেজে উঠল … আঃ … মণিমালা সারা শরীরের আলস্য ভেঙ্গে উপুর হয়ে কোলবালিশটা বুকে চেপে টানটান হয়ে শুলো । এখন যতক্ষন এই বাঁশির নেশাধরানো সুর কানে আসতে থাকবে ততক্ষন সে অবশ হয়ে থাকবে । গলির বাঁকে ধীরে মিলিয়ে গেলে একটা অবসন্নতা ঘীরে ধরবে তাকে । থিতিয়ে আসবে শরীর ,মন। একটু চোখ লেগে আসে তার এসময়ে আজ তার …দোতলার এই ঘরটা বেশ ঠান্ডা অন্য ঘরগুলোর তুলনায় ।
“ আরে বৌদি ওকে চেনো না ! ওতো হারুন বুড়ো… যাই বলো বাপু বড় মিষ্টি করে বাজায় ! আমি তো তোমার ভাইকে বলি …লোকটা বুড়ো নাহলে কবে তোমায় ছেড়ে পালিয়েই যেতাম ওর সাথে … হিহিহি…”
কাজের মেয়ে চন্দনা থামতেই মণিমালার খুন্তিধরা হাত থেমে যায় …বুকটা কেমন ছ্যাঁৎ করে ওঠে অকারনে।