জানলার গ্রিলে বসে থাকা ফড়িং সকাল থেকেই আনমনা। একবার এ-ঘর, একবার ও ঘর করছে শুধু। ছোটবেলা থেকে ফড়িং শুধু নিজের জন্যেই না, বাড়িতে থাকা পুচকে ভাইটার জন্য জন্মদিন সেলিব্রেট করত। আর এই দিনটা নিজেকে গিফট করত ফুল নাহলে বই। সবাইকে ভালো রাখার চেষ্টা করত।
বছর খানেক হল সে বাইরে পড়াশোনা করতে এসেছে। ফড়িংয়ের ভালো নাম দীপান্বিতা। মা বাবা ফড়িং বলে ডাকে। আর বন্ধুরা উচ্চিংড়ে। ওর অবশ্য ভালোই লাগে। আসলে এতো বন্ধুবান্ধব, আড্ডা খিল্লি কোনও দিন সে পায়নি। তাই ভীষণ ভালোবাসে তাদের। আজ ২৪ তারিখ। কাল তার জন্মদিন। বাড়ি থেকে বহুদূরে, তারমধ্যে বন্ধুরাও কেউ নেই। তবু ভীষণ ভাবে চায় আজ সে আসুক। সে মানে দীপ।
সকালে ঘুম ভেঙে এক কাপ চা নিয়ে জানলার সামনে এসে দাঁড়ায় রোজ। ভেতরের ঘরে মানিদি কিছু একটা বানাচ্ছে। বেশ দারুন সুস্বাদু একটা গন্ধ ছড়িয়েছে। মানিদিও ঠিক মায়ের মতো সব বানায়। কিন্তু আজ গলা অবধি অভিমান কান্না হয়ে আসছে বারবার। চোখের জল ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না তার। একবার ফোন হাতে তুলছে, আবার ফ্লাইট মোড করছে। আজ সবার ওপর তার অভিমান।
বারোটা বাজতে আর কিছুক্ষণ। তারমধ্যে মায়ের ফোন আসছে বারবার। ক্ষয়ে যাওয়া জন্মদিন আর সেলিব্রেট করবে না সে। এই ভেবে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকল। হঠাৎ টুং-টুং করে মেসেজ। দীপ মেসেজ করেছে, কীরে ছোটু কি করছিস। ‘তুই তো পারতিস আজ আসতে’ লিখেও ডিলিট করে দিল সে। তারপরেই একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন। ট্রু কলারে ফুটে ওঠা নামটা চমকে দিল ফড়িংকে। কলিং ফ্রম ডিসি সুপারিন্টেন্ডেন্ট। ও কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন ধরতেই, ওপারে অনেকগুলো কন্ঠ গেয়ে উঠল, হ্যাপি বার্থ ডে ডিয়ার ম্যাডাম। তারপরেই ভারী গলায় একজন বলল, আপনার জন্মদিন শুভ হোক। লকডাউন কেটে গেলে আমরা সবাই জন্মদিন সেলিব্রেট করব। আর আপনার প্রিয় মানুষটিকে এখনকার মতো বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি। সাবধানে থাকবেন। আপনাদের ভালোবাসা সফল হোক।
ফড়িংয়ের চোখ থেকে দু’ ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। আর তখুনি ঘর আলো করে মানিদি একটা প্রদীপ জ্বালিয়ে সামনে নিয়ে এলো একটা কেক। ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে উঠল, হ্যাপি বার্থ ডে ফড়িং।