সারাদিন ঝড় বয়ে যাওয়ার পর একটানা ঘুম কয়েকঘন্টা। হোটেলের বিছানায় শুয়ে বল্টুদা আর বৌদি ভেবে চলেছে গত প্রায় চব্বিশ ঘন্টায় কি কি ঘটে গেলো তাদের জীবনে। বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সির প্রথম ভ্রমন পরিকল্পনা পুরীতে। বাস ভর্তি লোক। রাস্তার ধারে ধাবায় বসে খাবার থেকে শুরু করে মাঝ রাস্তায় পেঁয়াজ কুড়োতে যাওয়া গাড়ি থামিয়ে,হোটেলে এসে জমজমাটি খাওয়াদাওয়া, ওদিকে বৌদির স্নান করতে গিয়ে হোটেলে ফিরে না আসা। অতঃপর বৌদিকে খুঁজতে সবাই মিলে সমুদ্রপাড়। সেখানেও খুঁজে না পেয়ে লোকাল থানা। জুত চুরির অপরাধে বৌদি কয়েদ বন্দী। তারপর বৌদিকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসা হোটেলে। রাস্তায় জুতর দোকানে নেমে জুত কেনা। কি আশ্চর্য, সেলের জুতর র্যাকে বৌদির জুতটাই। পায়ে পরে নিশ্চিত হওয়া এটা বৌদিরই। নিজের জুত, আবার নিজেকেই টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে আসতে হলো। এমন একটা ঘটনাবহুল মুহূর্ত ভুলে যায় কি করে ওরা? হোটেলে শুয়েও বারবার মনে পড়ছে গত বেশ কয়েক ঘন্টার ঘটনা।
বৌদি এমনিতে জেদী প্রকৃতির মহিলা। যা ভাবেন তাই করেন। এই যেমন শুয়ে শুয়ে ভাবছেন এরকম অপদস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে রুখে তাকে দাঁড়াতেই হবে। তবে বুঝতে পারছেন তিনি বিষয়টা এত সহজ নয়। এর পিছবে নিশ্চই কোনো দুস্কৃতিদের র্যাকেট রয়েছে। পুরো ঘটনা বারবার ভাবলে থাকলো বৌদি। কেন জানি মনে হচ্ছে থানার পুলিশেরাও এ বিষয়ে কিছু জানে। কি জানে তারা? কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে কি? এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরেছে বৌদি।
বল্টুদার ঘুম প্রতিদিন সকালেই ভেঙে যায়। আজও তার অন্যথা হলো না। উঠে দেখলেন বৌদি অঘোরে ঘুমোচ্ছেন। অন্যান্যদিনে বৌদির ঘুমও ভেঙে যায় তাড়াতাড়ি। আজ বল্টুদা বৌদির ঘুম ভাঙালেন না। বরং খুব সাবধানে এতটুকুও আওয়াজ না করে নিজে রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরলেন বাজারে। গোপাল বলে একটি ছেলেকে নিয়ে এসেছেন বল্টুদা। অন্যসময় বল্টুদার অফিসে ফাইফরমাশ খেটে দেয়। বেশ মজার ছেলে। গোপাল আর রান্নার হেল্পারকে নিয়ে বল্টুদা চলেছেন স্থানীয় বাজারে। আজ কেমন জানি একটু বাড়িতি ফেস্টিভ মুড। পুরীর বাজার বেশ বড়। প্রচুর সবজির দোকান। দাম খুব একটা কম নয়। আজ দুপুরের খাওয়াটাও বেশ জমকালো। কাল রাতের খাবারের পর মেনু ঠিক করেছে বল্টুদা। দেরাদুন চালের ভাত,ঘি,আলু ভাজা,বেগুনি,শুক্তো সজনে ডাঁটা দিয়ে। সন্দেহ ছিলো পুরীর বাজারে সজনে ডাঁটা পাওয়া যাবে কিনা,সহজেই পাওয়া গেলো। শুক্তোর জন্য বড়ি কলকাতা থেকেই নিয়ে এসেছিলো বল্টুদা। রান্নার ঠাকুরের রান্নার স্বাদ দারুন। জমে যাবে শুক্তো রান্না। এর সঙ্গে পনিরের তরকারি,কাঁকড়ার ঝাল আর বড় সাইজের পমপ্লেট। শেষ পাতে জলভরা তালশাঁস,কলকাতা থেকে বল্টুদা ড্রাই মিষ্টির স্টক নিয়ে এসেছে।
সবজির বাজার করে মাছবাজার থেকে মাছ নিয়ে বল্টুদা হোটেলে ফিরতে ফিরতে প্রায় সকাল সাড়ে আটটা। হোটেলের ঘরে গিয়ে দেখে বৌদি তখনও ঘুমোচ্ছে। বল্টুদা এবারো ডাকলেন না বৌদিকে। বরং নীচে গিয়ে দেখলেন সকালের খাবার প্রস্তুত। সকলকে ঘরে ঘরে সার্ভ করতে বলে দেওয়া হয়েছে। লুচি,আলুর তরকারি আর মিষ্টি। সুন্দর আয়োজন। কিছু লোক ভোর বেলা সমুদ্রের দিকে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ভোরের সূর্য ওঠা দেখে ফিরতে ফিরতে প্রায় সকাল ৯ টা।
বল্টুদার, হোটেলের রান্নার জায়গায় আড্ডা দিয়ে সময় কেটে যাচ্ছে বেশ। মাঝে মাঝে কয়েককটি পরিবারের লোকজন এসে গল্প করে যাচ্ছেন। কত রকম অভিজ্ঞতা। মানুষের সঙ্গে মেশার এ এক অদ্ভুত সুবিধে।