• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দীপান্বিতা বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ১)

ঢেপ্সির প্রেমকাহিনী

প্রথম ভাগ

কলেজের প্রথম দিনে একটা গোলগাল নাদুসনুদুস মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। পরবর্তীকালে সে আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে ওঠে। আমার কাছে সমস্ত গোপন কীর্তি না বললে তার পেট গুড়গুড় করে। আমি কলেজ না গেলে ফোন করেও তার বলা চায়। আমার এই বান্ধবীটিকে আমি আদর করে ঢেপ্সি বলে ডাকতাম। বেশ কিছুদিন ধরেই দেখছি ঢেপ্সি আর তেমন ফোন করে না, যখনই ফোন করি তার ফোন ব্যস্ত। কল ব্যাক‌ও করে না। ক্লাসেও ভীষণ অমনোযোগী। একদিন ম্যাম খুব ঝড় দিল। অন্য সময় হলে তো এতক্ষণ ‘ম্যাম আমাকে কেন বকবে? কেন?’ করে চোখ দিয়ে গঙ্গা-যমুনা বয়ে যেতো। কিন্তু আজ কোন হেলদোল নেই। ম্যাম ক্লাস থেকে বেরোতেই সে ফোন নিয়ে বসে পড়ল। আর কোন দিকে হুঁশ‌ই নেই। আড়চোখে দেখলাম ম্যাডাম মেসেঞ্জারে মেসেজ করছেন টুক টুক করে। মাঝেমধ্যে দু একটা ইমোজিও যাচ্ছে।
তখনই বুঝলাম কিছুতো একটা গড়বড় আছে। নিজের মধ্যে গোয়েন্দা ভাবটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। ব্যোমকেশ, ফেলুদা, কিরীটি, শার্লক হোমস সবাই একসাথে মাথায় ভর করল। তখনই ঠিক করে নিলাম যেভাবেই হোক এই রহস্যের উদ্ঘাটন আমাকে করতেই হবে। ক্লাস করে বাড়ি ফিরে এলাম। দুপুরে খেয়ে দেয়ে এপাশ-ওপাশ করতে করতে ভাবছি কি করা যায়!? কি করা যায়!? কীভাবে জানতে পারবো চ্যাট বক্সের ওপারে কে আছে? হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। স্যারের কাছে গত সপ্তাহে পড়তে যাইনি। নোটসগুলো আমার কাছে নেই। নোটসের ছুঁতোয় যদি তার কাছ থেকে চ্যাটের খবর আদায় করতে পারি তবে পুরো জমে ক্ষীর। আর আমি যদি বাড়িতে বলি ঢেপ্সির কাজে যাচ্ছি তাহলে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করবে না।
বিকেলে সাড়ে পাঁচটার দিকে ঢেপ্সির বাড়ি চলে গেলাম। ওর মা দরজা খুলে দিলো। কাকিমার সঙ্গে কথাবার্তা বলছি বটে কিন্তু মন পড়ে আছে ঢেপ্সির ঘরে। তার আওয়াজ পাচ্ছি না। তবে কি সে বাড়িতে নেই!? আমার গলার আওয়াজ পেলে তো অন্য সময় লাফাতে লাফাতে চলে আসে। কাকিমাকে শেষমেষ জিজ্ঞাসা করলাম ঢেপ্সি বাড়িতে নেই? ওর মায়ের উত্তর শুনে আমি দশ হাত ছিটকে গিয়ে পড়লাম যে ঢেপ্সি রাত এগারোটার পর দু চোখে ঘুমে দেখতে পায় না সে কিনা রাত দেড়টা দুটো পর্যন্ত পড়ছে। দুপুরের লাঞ্চ করে না ঘুমিয়ে পড়তে বসছে। গন্ডগোল তো কিছু একটা আছেই আর তর সইছেনা জানতেই হবে কি কেস?
ঘরে ঢুকে তাকে ঠেলে ঠুলে জাগিয়ে তুললাম। গাঁইগুঁই করতে করতে বললো মাত্র আধ ঘন্টা হলো ঘুমিয়েছে। কাঁচা ঘুম ভেঙে গেল। তার সেসব কথায় পাত্তা না দিয়ে বললাম নোটস দে লিখে নেবো। সামনে পরীক্ষা পড়তে হবে ।এই কথাটা শুনে তার মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল। আমতা আমতা করে বলল ছবি তুলে নে। লিখতে অনেক সময় লাগবে। দেরি হয়ে যাবে, বাড়ি গিয়ে লিখবি। আমি জোর করতে শেষ পর্যন্ত নিমরাজি হয়ে বলল বেশ ঠিক আছে তবে লেখ। কিন্তু তার মধ্যে একটা ছটপটানি ভাব লক্ষ্য করছি। একথা সেকথায় তাকে বিভিন্ন বিভিন্ন সাহিত্যিকের লেখা প্রেমের গল্প। বলতে লাগলাম। বুঝতে পারলাম শিকার বেশ মনোযোগ দিয়ে আমার টোপ গিলছে। এবার তাকে আস্তে করে জিজ্ঞাসা করলাম তোর কাউকে ভালো লাগে অনেক? তোর জীবনে স্পেশাল কেউ আছে?
সে ফিক করে হেসে বলল–” হ্যাঁ আছে তো”। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো না না মানে তেমন কেউ নেই, ওই আর কি। কিন্তু আমি সুযোগ যখন একবার পেয়ে গেছি তখন এ সুযোগ কোনোমতেই হাতছাড়া করছি না।
‘ প্লিজ বলনা রে। কাউকে বলব না। একদম সিক্রেট রাখবো। তোকে প্রমিস করছি’ এইভাবে তার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত সে বলল বেশ তোকে বলছি বিশ্বাস করে। তবে কথাটা কিন্তু কাউকে বলবি না। আমি বললাম বেশ ঠিক আছে বলবো না। “তবে শোন, দাঁড়া আগে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আসি” বলে সে দরজাটা বন্ধ করতে চলে গেল।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।