এই এক কথা বাঙালির ট্রাডিশনাল এজেন্ডা ভয়েস। বাঙালি অন্ততপক্ষে জীবনে একবার বলেনি এই কথা তা হতে পারে না। বলেনি তো বলেনি শুনেছে তো বটেই। এই ধরুনগে, ঝগড়াঝাটিতে পাতিকাক, দাঁড়কাক কিছুই আপনার পাড়ার কোনো বাড়িতে বসতে পারছে না। কান পাতুন ১০০% গ্যারেন্টি উপরের ওই প্রবাদ শুনবেনই, একবার হলেও।
এখান থেকেই আসুন একটু বাঙালির অন্দরমহলের কুটকচালি করি। ওই যে ঝগড়াতে কান পাততে বললাম। কানটা পেতে দেখবেন যেকোনো ঝগড়া সাধারণত ঘনিভুত হয় তিনটে দিক থেকে, অথবা ওই তিনটের যেকোনো একদিক দিয়ে।
প্রথমটি হলো অসুস্থতা কেন্দ্রিক। “পায়ের ব্যাথায় মরতে মরতে রান্না করছি এই তোমার চোদ্দগুষ্টির ভাগ্য”, কিংবা ” অসুস্থ বাপের দায় কি আমার একার!!” অথবা ধরুন “কবে থেকে পড়ে রয়েছে, হাড়মাস জ্বালিয়ে খেলো, বুড়ি মরেও না। বললাম উকিল ডাকি সময় থাকতে লিখে দাও, তাও দেবে না!!”…. যমের প্রভাব বুঝতেই পারছেন। আসার আগেই এই… ‘আপনের চেয়ে আপন যে জন’ বলতেই পারেন। অপশন আছে।
দ্বিতীয়টি হলো এমন— “মেয়ের বিয়ে দিয়েও শান্তি নেই। জামাই না ভেড়া! মা বাবার কথায় উঠবোস করে!!” অথবা “দেখেছো কী ভাগ্য আমাদের মেয়েটার। এতো ধারদেনা করে বিয়ে দিলাম যা চাইলো ওরা সব দিলাম, এখন বলে গাড়ির টাকা দিতে, কোথায় পাবো, একটু বিষ দিতে পারো!!” কিংবা “দেখুন আপনি আমার শশুর হন বলে কিছু বলছি না, এটা কী মেয়ে বানিয়েছেন, শিক্ষা দিতে পারেননি!! কীভাবে সংসার করতে হয় তাই তো শেখেনি!!”…. জামাই কেন্দ্রীয় ঘনঘটা বাঙালি হাড়েহাড়ে চেনে।
তৃতীয়টি হলো মিষ্টি মুখে টক আম গেলার মতো। একে বাপ গয়নাগাটি দিয়ে ক্ষমতা অনুযায়ী দিদির/দিদিদের বা বোন/বোনেদের বিয়ে দিয়েছে। একপাল লোক গিলিয়েছে ডেকে। তারপর নিজের শশুরবাড়ি গিয়ে বরের সাথে দিব্য আছে। আর আমি/আমরা! বাপের সম্পত্তি রক্ষা করছি বুক পেতে। তারপরও আবার বোনেদের ভাগ দিতে হবে। তাও বোনগুলোকে বলে কয়ে রাজি করানো গেলেও ভাগনা মাগনায় গলে না। ছোটতে কত আদর করেছি, বড়তেও প্রশ্রয় দিয়েছি এখন তো আর মামাবাড়ি আসে না, আসে মায়ের অংশটা দেখতে।…. এইতো ছবি ভাগ্নে বৃত্তান্তের। যদিও আদিখ্যেতা করে মামা ভাগনা মুখোমুখি হলে আরও একটা প্রবাদ বলে নিজেদেরকে সান্ত্বনা দেয় – মামা ভাগ্নে যেখানে / বিপদ নেই সেখানে। পুরোটা টুপি কেস বুঝতেই পারছেন।
এই তিন জাতীয় মেঘই বৃষ্টি ঘটায় বাঙালির ঝগাড়াসভায়। আর এখানেও বাঙালি সেমসাইড গোল করে। ভাইফোঁটায় যমের নাম করে(‘যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা) ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেয় বাঙালি। আবার জামাইকে নিয়ে জামাইষষ্ঠী করে জামাই আদরের ব্যাপারস্যাপার বাঙালির থেকে ভালো কে বোঝে? আর রইলো বাকি ভাগ্না। মুখেভাতের দিনের কথাটা মনে করুন,কে যেন প্রথম ভাত খাইয়েছিলো। আজ্ঞে ঠিকই ধরেছেন, মামা। তা সে শকুনি হোক বা কংস।
যাকগে অনেকটা সময় নিয়ে লিখে ফেলেছি। ভাবছি লেখাটা রি রাইট করবো না। আজ জামাইষষ্ঠী, তাতে আমার কিছু না হলেও পেটে ভালো মন্দ গেছে। ঘুমাতে হবে।