তনুশ্রী মল্লিক বর্তমান সময়ের একজন আত্মমগ্ন কবি। থাকেন তারকেশ্বর। কলেজের পাঠ সাঙ্গ হবার আগেই বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন ও এখন গৃহবধূ। সাংসারিক জীবনের ব্যস্ততার মধ্যে নিয়মিত কবিতা চর্চা করেন।
জন্মদিন 13 ই অক্টোবর, প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ।
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তার একটি চটি কবিতার বই, তার কবিতায় প্রেম আর প্রকৃতির এক আশ্চর্য মেলবন্ধন আছে।
বিষবাবু ও ছিরিদেবী কথা
একটু এদিকে শুনবেন। আমাকে বলছেন। আপনি ছাড়া আর কোন মহাপুরুষ আছে এখানে শুনি। আরে রেগে যাচ্ছেন কেন। রাগবোনা আপনি যেমন বলছেন। আচ্ছা ঠিক আছে ভুল হয়ে গেছে। কী বলছিলেন তাই বলুন অত ভনিতা করতে হবেনা। কী বললেন আমি ভনিতা করছি। এতো বছর বয়স হলো কোনো দিন সত্যি ছাড়া মিথ্যা বলিনা সেই আমাকে এতো বড়ো কথা। আরে আমি আপনাকে মিথ্যাবাদী বলিনি। কী মুশকিলে পড়লাম ওই পাজি হতচ্ছাড়া পাঁচকড়ির মুখটা দেখে রাস্তায় পা বাড়িয়েছি হবেনা, তখনই জানতাম দিনটা ভালো যাবেনা। আপনি কিন্তু অযথা আমাকে হেনস্থা করছেন। এবার কিন্তু আমি চেঁচিয়ে লোক জড়ো করবো আর বলবো আপনি আমাকে পাঁচকড়ি বলে গালাগাল দিয়েছেন। হে ভগবান এ আমায় কী শাস্তি তুমি দিচ্ছো এ তুমি কোন মহিলার মুখোমুখি করলে, এতো জল বললে সমুদ্র বোঝে আর আম বললে আমড়া বোঝে। এই যে শুনুন অম্বুজাক্ষ না বিষবৃক্ষ বাবু আপনি কিন্তু অযথা হেজাচ্ছেন আমি আপনাকে ভালো করে ডেকে ছিলাম। কী কী বললেন বিষবৃক্ষ বাবু আপনি আপনি একটা হুঁকোদেবী সবসময় ফোঁস ফোঁস করে উঠছেন আর রামছাগলের মতো কান নাড়ছেন। কিছুই ঠিকঠাক শোনেন না আর বোঝেন তো নাইই। এই যে বিষবৃক্ষ বাবু আপনি কোন বড়ো অফিসের বড়ো বাবু যে আপনার কথাটাকে শিরোধার্য মানবো, বলুন দিকি। এবার কিন্তু একটা হেস্তনেস্ত করতে হবে আপনি নিজেই ডাকলেন শুনুন বলে আবার আপনিই অযথা দোষারোপ করে উল্টোপাল্টা বলছেন। এটা কিন্তু আপনি ঠিক করছেন না। কী বললেন আমি ঠিক নয়, আমি বেঠিক আমি ভুল। এতোবড়ো একটা কথা আপনি বলতে পারলেন তাও আবার একজন মহিলাকে। কিযে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করেন এই জন্যই আমি সারাজীবন কুমার থাকলাম এই আপনারদের মতো মেয়েদের যাতে জীবনে না জড়াতে হয় তাই আর সেই কিনা আপনার কাছ থেকে এরকম কথা শুনতে হবে। আপনি যা বে-আক্কেলে মানুষ আপনার গলায় কেউ যে মালা দেয়নি তা তো বোঝায় যাচ্ছে। এই যে হঁকোদেবী আপনি নিজেকে কী মনে করেন স্বর্ণের অপ্সরা একেবারে রম্ভা,হুঁ হুঁ তাও যদি বদনটা একটু সুশ্রী হতো ওইতো চোখ দুটো ট্যারা আর রঙটা আলকাতারায় চোবানো কে আর পছন্দ করবে। দেখুন বিষবৃক্ষ বাবু অনেক অপমানজনক কথা বলছেন একজন মহিলা হয়ে এবার আমি প্রোটেস্ট করবো আর নারী নির্যাতন করছেন বলে গলা ফাটাবো। আপনি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন নাকি হুঁকোদেবী শুনুন আপনি কিন্তু ছিরিদেবী নন যে চেঁচালেই মানুষ জড়ো হয়ে যাবে যা গলার আওয়াজ বন জংগল থেকে সব ছুটে আসবে। আপনি কিন্তু অনেক আজে বাজে কথা বলছেন আমি এই জন্যই রাগ করে বাড়ি ছেড়েছি। ভাবছি যে দিকে দু চোখ যায় সেদিকেই চলে যাবো। আর আপনি আমাকে অকারণ দোষারোপ করে আমার মনটাকেই ভেঙে দিচ্ছেন। আমি কিছুই করিনি আমি তো একমনে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম তা আপনিইতো আমাকে পেছনে ডেকে আমার যাওয়াটাকে ভন্ডুল করে দিলেন বিষবৃক্ষ বাবু। তা জাননা আপনি ছিরিদেবী আপনার জন্য এই লম্বা রাস্তাটা পড়ে আছেতো যান যেদিকে খুশি। আপনি কিন্তু আমাকে এভাবে চলে যেতে বলতে পারেননা বিষবাবু। আমি যেমন রেগে যেতে পারি তেমনই আবার রাগকে প্রশমিত করতেও পারি তা আপনি যেখানে যাচ্ছিলেন সেখানে যাননা আপনার জন্যও রাস্তা শুয়ে আছে যতসব। ধুর কার মুখ দেখে যে রাগ করে বাড়ি ছাড়লাম এই জীবনটাই বৃথা হলো। চলুন বিষবাবু আপনাকে আমি পথ দেখিয়ে দিই । তা কী বলবার জন্যি আমাকে পথ আটকালেন তাতো বললেননা। ওই দেকুন দিকিনি কেমন সব ওলটপালট হয়ি গেলো। আমি বলছিলাম কী আপনি এখনো কী কুমারই থাকবেন না পথে পথে ঘুরবেন। তা আপনার জেনে কী হবে। না আমি জানতে চাইছিলাম আপনি কী ওই রাগেশ্বরী ঘাটেই যাচ্ছিলেন না অন্য কোথাও। আপনি কী করে জানলেন যে আমি রাগেশ্বরী ঘাটে যাবো, নিশ্চয়ই আমার ওই পাজি বাড়িওয়ালা বলেছে আপনাকে এবং আমার পেছনে লাগিয়েছে। আসলে আমিওতো ওই একই জায়গায় যাচ্ছিলাম কিনা তাই। আসলে ওই ঘাটটারতো নামই ওই জন্য রাগ করে বাড়ি ছাড়লে ওখানেই আস্তানা নেয় সবাই তাই। তা এবার তো রাগ পড়ে গেছে ছিরিদেবী আপনার তা এবার আমায় একটু একা থাকতে দিন যান আপনার নিজের কাজে যান। কী যে বলো তুমি বিষবাবু চলো এই হাতটা ধরো দিকিনি আমরা কেমন মিলেমিশে এক হয়ে উঠি আর বদ বাড়িওয়ালাদের জব্দ করি। বলছো ছিরিদেবী তা চলো। আমি কিন্তু বেশি ভালোভাবে রাখতে পারবনি। রাজি থাকো তো চলো। ও আমি ঠিক করে সব সামলে নেব. চলো দিকিনি ওই সামনের মন্দিরটাই যাই ঘন্টা বাজছে মনে হয় পুজো আরম্ভ হয়েছে। চলো পুরুতের কাছে শুনে নিই যদিদং হৃদয়ং তব যদিদং হৃদয়ং মম।