এখন এক সন্ন্যাসীবর্ণ বিকেল
এইমাত্র মড়িঘর থেকে বেরিয়ে এলো
কাটাছেঁড়া সাদাচাদরে ঢাকা
অবৈতনিক বিদ্যালয়ের অঙ্কে’র মাষ্টারমশাই,
দু নং এ, পরশুরাম স্ট্রীটে’র শরিকী বাড়ি’র
ঠিকানা’টা বদলে গেছিল মাস দুয়েক আগেই।
কাল রাতে বৃদ্ধাশ্রমের ঘুপচি বাথরুমে
খোকার এনে দেওয়া ওদেশে’র মাফলারে
শেষবারের মত শুঁকে দেখেছিলেন
ছেলের হাতের গন্ধ, ছিলো তখনও,
সেই মাফলারেই…
খোকা’র মা প্রায় সাতাশ বছর আগে
আঁতুড়ে’র স্যাঁতস্যাঁতে মেঝে’য় শুয়ে
লম্ফ’র মিটমিটে আলোয় হাত ছুঁয়ে
আশ্বাস খুঁজেছিল শেষবারের মত…
“খোকা’কে তুমি দেখো… “
খোকা’কে দেখে উঠতে গিয়েই
পাড়া’র দাতব্য ক্যাম্পে চোখে’র ছানি অপারেশন
ডান চোখ’টা তখনই…
একটা চোখ নিয়েই ইস্কুল, টিউশন
খোকা’কে দেখতে হবে যে!
চিকিৎসা হয়নি স্নায়ুরোগে’র
বাঁ’দিকটা প্রায় অকেজো।
দেশে ফিরে এন.আর.আই খোকা
বাড়ি’টা যেদিন প্রোমোটার’কে বেচে দিলো
সেদিন কেন জানিনা নষ্ট ডানচোখটা’ও
জলে ভরে উঠেছিল
পুরনো পলেস্তরা খসে পড়া সাবেকি বাড়ি
বাপ-পিতেমো’র আমলের চক-মিলান্তি বারান্দা
ওখেনে ব’সে খোকা’র মা বর্ষা-রাতে
রবি-ঠাকুরের গান গাইতো
ওর হাতে লাগানো লতানে জুঁইয়ের গন্ধে
ম’ ম’ করতো সারাবাড়ি
সে চলে যাবার পর কত রাত খোকা’কে
ওখানেই, ঘুম-পাড়ানি গান গেয়ে…
সহ্য হয়নি অঙ্কের মাষ্টারমশাইয়ের
আবাসনে’র বয়স্ক মানুষদের
তখন বিজয়া’র মিষ্টিমুখ করাচ্ছে
কোনো এন.জি.ও
দূর থেকে ভেসে আসছে
বিসর্জনের বাজনা…
সারাজীবন যত অঙ্ক মিলিয়েছেন
তারা সবাই মিছিল ক’রে আজ
বুঝে নিতে চাইছে পাওনা-গন্ডা।