“পুরুষ” নিয়ে বিশেষ সংখ্যায় সুদেষ্ণা রায়

বাবা
সত্যি বলবো? বাবাকে নিয়ে লিখতে গেলে আজকাল আঙুল চলে না তেমন। ভিতর থেকে কে যেন একটা আটকে রাখে। হয়তো বলে, “লিখিস না রে, কিছু তোর জন্য রেখে দে, তোর সম্পদ। পারলে, কাজটুকু ক’রিস বাবার মতো ক’রে”।
পারবো না, জানেন? নখের যোগ্য হ’তে-ও আমার এই জন্মের আয়ুর সব সঞ্চয় শেষ হয়ে যাবে। তাই, যোগ্য কেউ যদি যোগ্যতর হ’তে পারে, তাই একটা গোটা উপন্যাসের কয়েকটা পাতা মাত্র তুলে ধরার চেষ্টা ক’রছি।
#নার্সিংহোম
” কিসে এলে মা?
….যাওয়ার সময় এ.সি. বাসে যাবে কিন্তু। ভীড় কম। কষ্ট হবে না। ”
চোখের জলের একেকটা ফোঁটার সাথে চুক্তি ক’রে বাবার কেবিনে ঢুকতাম।
“কেমন আছো/আছেন?”
(প্রায় দু’বছর ধ’রে মারণ রোগের সাথে লড়তে থাকা লোকটা যখন-ই ভর্তি থাকতো, আর কেউ দেখতে যেত নার্সিংহোমে, এক গাল হাসি নিয়ে জিগ্যেস ক’রত দরজা দিয়ে ঢুকতে না ঢুকতে-ই)
কতটা যন্ত্রণা চেপে রেখে ওই হাসিটা আসতো, একমাত্র ঈশ্বর জানতেন।
#আদর
-কো–আয় চিয়ে — অ্যাও–খন?
– শুয়ে ছিলাম বাবা, ওই ঘরে। শরীরটা ভালো নেই।
(সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে ক্যান্সার… ব্রেনে ম্যানিঞ্জিয়োমা… শরীরের ডানদিক অকেজো… কথা, বোধ ক্রমশঃ লুপ্ত প্রায়… সিঙ্গল্ বেডের অবশিষ্ট জায়গা দেখিয়ে বললো…)
— রে..এ..স্ট নাও মা।
(শুলাম পাশে..)
-একটু আদর ক’রে দাও না বাবা।
– এ-এ-খ-ন তো পারি না।
– কে বললো পারো না? বাঁ হাত দিয়ে ক’রে দাও।
( গালের উপর হাত রেখে স্নেহের উষ্ণতম স্পর্শ রেখেছিল সেদিন। আমার পরম জ্ঞানী বাবার মন শান্ত করার জন্য তার স্বল্পবুদ্ধি মেয়ে সেদিন বিজ্ঞের মতো শুনিয়েছিল “অজো নিত্যং শাশ্বতোহয়ং পুরাণো/ ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে..”। বলেছিল, ” তুমি তো থেকে যাবে, বাবা আমাদের সাথে, শরীরটা থাকবে না শুধু”। গলা কেঁপেছিল। ভাঙা ভাঙা শব্দে একসাথে গান গাওয়া হয়েছিল সেদিন “যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে। চোখের জলে ভেসেছিল পিতা-পুত্রী।)