গুচ্ছকবিতায় সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়

অলিখিত জার্নাল ১

মেটে সিদুঁর মেখে যে মেয়েটি রোজ উনুনের ধারে
চাল ধুয়ে রাখে, কেউ কি খোঁজ রেখেছে
তার শরীরে কটা দাগ?
কালো ক্যানভাসে উঁকি মারে চাঁদ।
ছুঁয়ে যায় সাদা বেড়াল। কালো বেড়াল।
মেয়েটি মুখ খোলে না।
চুপিচুপি, একতারা বাজে…
মাটি পথ। চলতে চলতে অন্ধকার নামে
জলের ভেতর থেকে উঠে আসে নাম
পায়ের নীচে ছিন্ন চাঁদমালা…
মেয়েটি মুখ সরায়।
ঠোঁটের চারপাশে জমে নুন
ফুটে ওঠে চাল,
পুড়ে যায় ছাই,
তুমি কি আজো চিনতে পারো না পথ?
সে তো বেড়ে রাখে রোজ,
কলাপাতায় নারায়ণের প্রসাদ!


অলিখিত জার্নাল ২

উড়ে আসা পাতার মতো কিছু মুখ
সন্ধের আলো খুঁজে ভিড় করে চৌরাস্তায়,
কত আনন্দ, শোক
আজকাল মনে আসে না আর কিছুই।
রূপোলি আলো চকচক করে
রূপকথার ট্রেনে এসে থামে। তৈরী না হওয়া একটা ব্রীজের পাশ দিয়ে হু হু করে ছুটে যায় বিগত আট ন বছর ধরে।
ততদিনে মারা গেছে মা। স্তন বাদ পড়ার সময় শুধু একবার কেঁদেছিল আয়না দেখে। তারপর থেকে
আটমাস চাঁদের দিকে তাকায়নি আর।
আমার বাংলা টিচার বুঝিয়েছিল,
খুব শীতে থমকে যায় নদী।
তুমি তখন বসন্তে নুইয়ে পড়া মালতীলতা…
শালিখের মতো একলাফে জানলায় এসে বসেছিলে।
রোদ পড়েছিল, উড়েছিল চুল,
ট্রেনটা থেমেছিল হঠাৎ ব্রীজের পাশে।
গোটানো হাত, বাড়িয়ে দিলে।
চেয়েছিলাম,
আবার নাম না জানা সুড়ঙ্গপথে হু হু করে ছুটে যাব।
ভেঙে গেল চশমার কাচ। কত ধুলো,
জড়ো হওয়া শুকনো পাতা। বারান্দায় অমবস্যা রাত।
শুধু দূর থেকে ভেসে আসা একটা অদেখা ট্রেনের শব্দ…
মিলিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ, ছুঁয়ে ফেলার আগেই!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।