“পাঠগ্রহণের দিনগুলি” সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অমিতাভ দাস (অন্তিম পর্ব)

পাঠগ্রহণের দিনগুলি

পর্ব – ১০  (শেষ পর্ব)

“শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত” বইটি তো কেবল একবার পড়বার জন্যে নয়। সারাজীবনের জন্য পাথেয়, সম্পদ স্বরূপ । তিক্ত ও কূট বাস্তব জীবনে অমৃতময় ।বারবার পড়ি। প্রতিবারই আত্ম-অন্বেষণের পথ দেখায়।
স্বামী লোকেশ্বানন্দজীর’তব কথামৃতম, ‘স্বামী ভূতেশানন্দজীর’শ্রীরামকৃষ্ণ ও যুগধর্ম, ‘অমৃত সন্ধানের কথা ”অমৃত কথা’ কেবল আমার নয়, যে কোনো অশান্ত মানুষের মনকে ভালো করে দিতে পারে। অন্তরে অমৃত বারি সেচন করতে পারে।
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের আধ্যাত্মিক ধর্ম ও দর্শনের ব্যাখ্যা ও আলোচনামূলক বই কিছু পড়েছিলাম। স্বাদু ভাষা ও রসাময় বর্ণনায় যা গল্পের পরিবেশ তৈরী করে ।পাঠক মনের আনন্দে পড়ে যেতে পারে। কোথাও কোনো জড়তা নেই ,কেবল আনন্দ আছে – তৃপ্তি আছে। এমন কিছু বই – পরম পদ কমলে, শিবের শক্তি জীবের জননী , লৌকিক-অলৌকিক, দুই সাধক মুখোমুখি আমার খুব প্রিয় কটি বই। মন চঞ্চল হলেই উঠে আসে হাতে।
শঙ্করনাথ রায়ের’সাধুসন্তের মহাসংগমে’ আরেকটি প্রিয় বই। জানিনা এখন পাওয়া যায় কিনা। এখানে অখ্যাত কিছু সাধকের বিরল জীবন দর্শন ও তাঁদের সাধনা -সিদ্ধি-তন্ত্রের গূঢ় কথা গল্পচ্ছলে আলোচিত হয়েছে ।ভাষা ও বর্ণনা অতি মধুর।
পাঠগ্রহণের দিনগুলির একেবারে শেষ দিকে চলে এসেছি। তবে কতো কিছুই তো লেখা হল না। অনেক প্রিয় বই, অনেক পত্রিকা অনালোচিত রয়ে গেল। পরে কখনো লিখব হয়ত।
এবার আমার প্রিয় কয়েকটা বইয়ের নাম দিতে চাই পাঠকদের জন্য। তাঁদের হয়ত ভালো লাগবে পড়লে। কেউ কেউ হয়ত পড়েছেন আমার পছন্দের বইগুলো।
হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ– জয় গোস্বামী । আছে তো হাতখানি– সুকুমার সেন । হংসেশ্বরী– নারায়ণ সান্যাল ।চিল -ঋতুপর্ণ বিশ্বাস । ধর্মপাল –রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় । মুদ্রারাক্ষস– সুরঞ্জন প্রামাণিক । দ্বিপাদ ভূমি– কালীকুমার চক্রবর্তী । ওই দেখা যায় বাড়ি আমার , বৃষ্টির কোনো কৈফিয়ৎ নেই–সুব্রত রুদ্র । মলিন পাঠগ্রহণ– কালীকৃষ্ণ গুহ । শাক্ত চতুর্দশপদী–অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় । রসাতল– গৌতম বসু । অলস রঙের টিলা , দুর্লভ শিখর দেশ–গৌতম মন্ডল ।পঞ্চম আহুতি– শ্যামল ভট্টাচার্য ।দিবারাত্রির কাব্য– মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় । ক্রান্তিকাল– প্রফুল্ল রায় । গোরা, গীতবিতান–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । পিতৃস্মৃতি–রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।ফেলুদা সমগ্র– সত্যজিৎ রায় । চৈতন্য পুরী , মধু-বৃন্দাবনে , কেঁদুলীর মেলায়– শঙ্কু মহারাজ । বারান্দা , হে পূর্ণ তব চরণের তলে– নবনীতা দেবসেন ।অণু-পরমাণু– জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য । শামুকের গমন পদ্ধতি–যুগান্তর মিত্র । নতুন গল্প ২৫– কৃষ্ণেন্দু পালিত । চিঠিপত্র১-১৯– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । কবিতা সমগ্র– শামসুর রাহমান । ছেলেবেলা , জীবনস্মৃতি– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । সোম-সবিতা — সরোজ কুমার রায়চৌধুরী । ভাল থাকার সহজ উপায়– শিবশঙ্কর ভারতী । মিথ্যে নয় , সত্যি নয়–মুক্তিপ্রকাশ রায় । পটুয়ার বিমূর্ত শিল্প– মঞ্জুষ দাশগুপ্ত । লাল পিঁপড়ের বাসা– রাণা রায় চৌধুরী । পালা বদলে আধুনিক বাংলা কবিতা– সম্পাদনা ডঃ বাবুল হোসেন । খড়কুটো , উড়োখই– বিমল কর । কবি, হাঁসুলী বাঁকের উপকথা –তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় । আরণ্যক , পথের পাঁচালি, দেবযান , ইছামতী– বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় । কাজল , তারানাথ তান্ত্রিক– তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ।অসমাপ্ত চিত্রনাট্য– শ্যামলী আচার্য । বুমেরাং–বিদ্যুৎ বিশ্বাস । মুখাভিনয়ের একদিন–গৌর বৈরাগী । একচক্রানগরে–রাম রায় ।দেশ-বিদেশের ছোট কবিতা— সম্পাদনা: দীপক রায় ও দীপকরঞ্জন ভট্টাচার্য । এ আমির আবরণ , জার্নাল—শঙ্খ ঘোষ । মায়া–আবীর সিংহ । গভীর জলের শব্দ—রাজীব কুমার ঘোষ । বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত–ডঃ অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় । শ্রেষ্ঠ কবিতা– নির্মল হালদার । শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা– ভাস্কর চক্রবর্তী । শ্রেষ্ঠ গল্প—রমানাথ রায় । শ্রেষ্ঠ গল্প– বনফুল । মধু সাধুখাঁ—অমিয়ভূষণ মজুমদার । কবি মানসী , আমার কালের কয়েকজন কবি–জগদীশ ভট্টাচার্য । ঢোলগোবিন্দের মনে ছিল এই— সুভাষ মুখোপাধ্যায় । আরো যে কতো ভালো ভালো বই আছে আমার পছন্দের , সব লেখা হল না ।
” জীবনে কিছুই কিছু নয় যদি কৃতকার্য না হলে–“কৃতকার্য হতে পারিনি জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই । এখানে তার ব্যতিক্রম ঘটে কীভাবে ?আমি আমার চেষ্টাটাই এখানে লিখে গেলাম । এই সীমিত পাঠগ্রহণ কারো যদি ভালো লাগে , সেটুকুই আমার প্রাপ্তি ।

সমাপ্ত

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।