নিবন্ধে সোমনাথ রায়

ডাকটিকিট জমানো – শখের রাজা, রাজার শখ

তুমি এই মুহূর্তে কোন গিফ্‌ট পেলে সবচেয়ে খুশি হবে? অবশ্যই স্মার্ট ফোন বা ভিডিও গেমস কিংবা ইলেকট্রনিক কোন খেলনা, তাই না? আমি কিন্তু তোমাদের বয়সে সবচেয়ে খুশি হতাম যদি আমাকে কেউ আমাকে একটা স্ট্যাম্প বা ডাকটিকিট দিত। এখনও কেউ দেশী বা বিদেশী স্ট্যাম্প বা কয়েন বা দেশলাই বাক্স দিলে বাঁধনছাড়া আনন্দ পাই।

         শুধু ভারতের নয় বিশ্বের সবচাইতে জনপ্রিয় শখ ডাকটিকিট/ টিকিট/ পোস্টেজ স্ট্যাম্প/ স্ট্যাম্প জমানো বা সংগ্রহ করা। এইজন্য একে শখের রাজা বলা হয়। দুষ্প্রাপ্য টিকিটের এত দাম হয় যে একে রাজার শখও বলা হয়। এগুলো যারা জমান তাদের বলা হয় ‘ফিলাটেলিস্ট’ আর ডাকটিকিট জমানো বা ডাকটিকিট নিয়ে পড়াশোনাকে বলে ‘ফিলাটেলি’। ফ্রান্সের জর্জেস হার্পিন ১৮৬৪ সালে ফিলাটেলি [philatélie] শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। গ্রীক ভাষায় ‘ফিলো’ মানে ‘কিছুর প্রতি আকর্ষণ’ আর ‘আটেলিয়া’ মানে ‘ট্যাক্স ও শুল্ক থেকে ছাড় পাওয়া’।

আধুনিক ডাক ব্যবস্থার জনক গ্রেট ব্রিটেনের স্যার রোল্যান্ড হিল হলেও ডাকটিকিটের আদি ধারণা লুকিয়ে আছে ভারতের সিন্ধু-সরস্বতী-ঘগ্গর-হাকরা সভ্যতায় প্রাপ্ত এখনও অপঠিত টেরাকোটা বা চীনামাটির সিলমোহরগুলিতে। অনুমান করা হয় এইগুলি হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো প্রভৃতি শহরগুলিতে উৎপাদিত পণ্যের ‘ট্যাগ’ বা সিলমোহর হিসেবে ব্যবহৃত হ’ত। মেসোপটেমীয় সভ্যতাতেও এই ধরণের সিলমোহর মিলেছে, হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোর সিলও ওখানে প্রচুর পাওয়া গেছে।

১৮৪০এর ১মে স্যার রোল্যান্ড হিল ইউনাইটেড কিংডাম বা গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডে সর্বপ্রথম ডাকটিকিটের প্রবর্তন করেন। আগে ‘চিঠি’র বিষয়টা খুব ব্যায়সাপেক্ষ ছিল। পত্রপ্রাপককে অনেকটা অর্থ দিতে হ’ত পত্রবাহককে। গরীব লোকেদের পক্ষে চিঠি আদানপ্রদান করা একেবারেই অসম্ভব ছিল। সবচেয়ে মুস্কিলে পড়ত যুদ্ধক্ষেত্রের সৈনিক ও তাদের বাড়ির লোকেরা। কুশল সংবাদ জানাবার জন্য তারা একটা বুদ্ধি করেছিল। খামের ওপর সৈনিকরা একটা সংকেত দিয়ে দিত। বাড়ির লোকেরা ওইটা দেখে বুঝে যেত সে কেমন আছে। তারপর খামটা পিয়নের হাতে ফেরত দিয়ে দিত। সাধারণ মানুষের এই কষ্ট দূর করার জন্য স্যার রোল্যান্ড হিল এক পেনির ডাকটিকিট (যা পেনি ব্ল্যাক নামে বিখ্যাত)চালু করেন যা চিঠির প্রেরক আগে কিনে খামের ওপর লাগিয়ে দেবেন, চিঠি যিনি পাবেন তাঁকে আর কিছু খরচ করতে হবে না।

ভারতের ডাকব্যবস্থা

ভারতের ডাকব্যবস্থার ইতিহাস কিন্তু অনেক শতাব্দী প্রাচীন। বহু প্রাচীন কাল থেকেই ভারতে পদাতিক ও ঘোড়সওয়ার ডাকহরকরা আর পায়রার মাধ্যমে চিঠি পাঠাবার বন্দোবস্ত ছিল। চতুর্দশ শতাব্দীতেই ভারতে সুগঠিত ডাকব্যবস্থা ছিল। অবিভক্ত ভারতের সর্বত্র পত্রবাহকদের ঘাঁটি তৈরি হয়েছিল। ‘রানার’রা চিঠি আর ছোটখাটো জিনিস নিয়ে এক ঘাঁটি থেকে আর এক ঘাঁটি পৌঁছে দিত। প্রত্যেক রানারের হাতে ঘুঙুর লাগানো একটা লাঠি থাকত। ঘুঙুরের আওয়াজ শুনে পরের ঘাঁটির রানার প্রস্তুত হয়ে যেত। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী মুম্বাই, কোলকাতা ও চেন্নাই শহরে পোস্ট অফিস স্থাপন করে। তখনও রানাররা চিঠি নিয়ে যেত। এই ব্যবস্থা আরও এক শতাব্দী ধরে চলেছিল। সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতায় তাঁরা অমর হয়ে আছেন –

রানার

রানার ছুটেছে তাই ঝুম্‌ঝুম্ ঘণ্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে, খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে, রানার!
রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার।
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার
কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার

রানার! রানার!
জানাঅজানার
বোঝা আজ তার কাঁধে,
বোঝাই জাহাজ রানার চলেছে চিঠি আর সংবাদে;

রানার চলেছে, বুঝি ভোর হয় হয়,
আরো জোরে, আরো জোরে, রানার দুর্বার দুর্জয়

১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ডাকব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়। স্যার রোল্যান্ড হিল প্রস্তাবিত প্রিপেইড ডাকব্যবস্থা চালু করা হয়। কয়েক বছর পর ভারতেই এশিয়ার মধ্যে প্রথম ডাকটিকিট ইস্যু করা হয়। রানারের বদলে ঘোড়ার ডাকের প্রচলন হয়। ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে বেসরকারী আধা-পোস্টাল ‘সিন্দ ডক’ [Scinde Dawk] ডেফিনিটিভ স্ট্যাম্প [সাধারণ ভাবে যে স্ট্যাম্প প্রচুর পরিমাণে ছাপা হয়] চালু করা হয়।

ডাকটিকিট জমাবে কেন?

ডাকটিকিট জমালে একদিকে যেমন মজা আর আনন্দ পাওয়া যায় তেমনি আবার বহু বিষয়ে যেমন ইতিহাস, ভূগোল, ফুলফল, পশুপাখি, মাছ, কীটপতঙ্গ,  সমাজ সংস্কৃতি, মহামানবের জীবনী আর শিল্পকলা সম্বন্ধে বিশাল ধারণা পাওয়া যায়। ডাকটিকিট একটা ছোট্ট ক্যানভাস যেখানে অনেক রকম ছবির সন্ধান মেলে। ডাকটিকিট একটা ছোট্ট জানালা যার মধ্যে দিয়ে অনেক অজানা পৃথিবীর সন্ধান পাওয়া যায়। বাবা-মায়ের জানা উচিত ডাকটিকিট সংগ্রহের শখ ছোটদের ধৈর্য আর মনোযোগ বাড়ায়। বর্তমানে মোবাইল, টিভি-র কার্টুন, ভিডিও গেমসের নেশা ছাড়াতে এই শখ খুব কার্যকরী। এই শখ ছোটদের হাতেকলমে কাজে দক্ষতা বাড়ায় – দেশ বা বিষয় অনুযায়ী ডাকটিকিট আলাদা করা আর টিকিট সম্বন্ধে খুঁটিনাটি বিষয় মনে রাখতে ছোটদের জুড়ি নেই। প্রত্যেকটি ডাকটিকিটের নিজস্ব একটি গল্প আছে – কোন্‌ দেশ এটা বের করেছে? সেই দেশ এখনও আছে? পৃথিবীর ম্যাপে সে দেশটা কোথায়? এইভাবে ডাকটিকিট থেকে কোন দেশের ইতিহাস, ভাষা, মুদ্রা আর ঐতিহাসিক চরিত্র সম্বন্ধে জানতে পারবে।

     এক সময় ডাকটিকিট খুব জরুরী আর সুন্দর ছিল, তাই তার কদরও ছিল বিশাল। বর্তমানে ইমেইল আর ইন্টারনেটের দৌরাত্মে টিকিটের গুরুত্ব অনেক কমে গেছে। তাহলেও এখনও অনেক সুন্দর ডাকটিকিট ইস্যু হয়। এগুলি থেকে ছোটরা বিখ্যাত ছবি আর গ্রাফিক ডিজাইন সম্বন্ধে দারুণ ভাবে জানতে পারবে।

     ছোটরা অনেকে অনলাইনে স্ট্যাম্পের সন্ধান করে কিন্তু সত্যিকারের ডাকটিকিট হাতে নেওয়ার মজাই আলাদা। তোমরা সুন্দর করে এ্যালবাম সাজিয়ে আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবকে দেখাতে পার। ডাকটিকিটের প্রদর্শনী বা ‘ফিলাটেলিক এগজিবিশানে’ অংশগ্রহণ করতে পার আর পুরস্কারও পেতে পার।

         তোমার হাতেও দুষ্প্রাপ্য টিকিট বা ‘রেয়ার স্ট্যাম্প’ চলে আসতে পারে যেমন এসেছিল ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ডের একজন ভাগ্যবান সংগ্রাহকের হাতে যিনি ১০ সেন্টেরও কম পয়সায় [এখনকার টাকার মূল্যে ৬ টাকা ৪০ পয়সা, তখন আরো অনেক কম ছিল] টেলিভিশনের  আবিষ্কারকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য (রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মাথার শিল্যুয়েট ছবি সম্বলিত)ইস্যু করা স্ট্যাম্প কেনেন একজোড়া কিন্তু অনেক পরে লক্ষ করেন একটি টিকিটে রাণীর মাথার শিল্যুয়েট ছবিটি নেই। এটা একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। ২০১৪তে নীলামে তিনি ঐ টিকিটটি (SG 755b নামে পরিচিত) বিক্রি করেন ২৩,৬০০ পাউন্ডে যা ভারতীয় টাকায় ২১ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা।

     ডাকটিকিট সংগ্রহের জন্য বিশাল কিছু খরচের প্রয়োজন নেই। দরকার শুধু ছোট্ট কয়েকটা সহজ কথা মনে রাখা।

কোন ডাকটিকিট জমাবে?

এখনও পর্যন্ত কয়েক কোটি স্ট্যাম্প ইস্যু হয়েছে। সব ধরণের সব স্ট্যাম্প কালেক্ট করা অসম্ভব তাই সে চেষ্টা করাই বৃথা। প্রথমেই তোমাদেরকে পছন্দমত এক একটা বিষয় বেছে নিতে হবে, যেমন – ফল বা ফুল বা জীবজন্তু; গাড়ী বা রেল ইঞ্জিন, জাতীয় পতাকা কিংবা ঐতিহাসিক স্থাপত্য ইত্যাদি। প্রথমে সব দেশের বিশেষ বিষয়ের স্ট্যাম্প কালেক্ট করলেও পরে আরো স্পেসিফিক হওয়া যায় – কোন বিশেষ দেশের বিশেষ ধরণের ডাকটিকিট।

সবথেকে আগে দেখতে হবে একটা টিকিট ভাল না মন্দ অবস্থায় আছে। ছেঁড়া নোংরা ডাকটিকিট দেখতেই শুধু খারাপ নয় ফিলাটেলির জগতে এর দাম কানাকড়িও নয়। ঝাঁ চকচকে অবস্থার ডাকটিকিট কালেক্ট করার চেষ্টা করতে হবে। টিকিটের অবস্থা অনুযায়ী এগুলিকে সুপার্ব বা চমৎকার, ফাইন বা সুন্দর, গুড বা ভালো আর পুওর বা খারাপ – এই চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। সবথেকে ভাল অবস্থার ডাকটিকিটকে ‘চমৎকার’ বলা যায় যার মানে – কাগজের ঠিক মাঝখানে ছাপা, ঝকঝকে রং আর পিছনে নিখুঁত আঠা দেওয়া। ব্যবহৃত ডাকটিকিটও ‘চমৎকার’ হতে পারে যদি মধ্যিখানে মার্জিন সমান রেখে ছাপা হয়, নতুনের মত দেখতে হয়, ডাকঘরের হালকা ছাপ দেওয়া থাকে আর এতটুকুও যেন ছেঁড়া না থাকে।

     ‘সুন্দর’ ডাকটিকিট মানে নির্ভুল, মোটামুটি মধ্যিখানে ছাপা, পেছনের দিকে ‘হিঞ্জ’-এর হালকা দাগ। ব্যবহৃত ‘সুন্দর’ ডাকটিকিট খুব ঝকঝকে নয়, ডাকঘরের ধ্যাবড়া কালির ছাপ আর মোটামুটি মধ্যিখানে ছাপা।

     ‘ভাল’ ডাকটিকিট একদিকে বেশি হেলে ছাপা কিন্তু দেখতে সুন্দর। ছোটখাট খুঁত থাকতে পারে যেমন আঠার গণ্ডগোল, অসমান মার্জিন, এ্যালবামে চেটানোর মোটা দাগ। এর থেকে খারাপ অবস্থার ডাকটিকিট বাতিল করা উচিত এবং সিরিয়াস কালেক্টররা এগুলো সংগ্রহ করেন না। তবে তোমরা প্রথম দিকে এগুলো জমাতে পার – এগুলোকে ‘জায়গা ভরান ডাকটিকিট’ বলা হয়।

     একটি ডাকটিকিটের বাহ্যিক অবস্থা যখন এত গুরুত্বপূর্ণ আর ডাকটিকিট একটি কাগজ মাত্র তখন ডাকটিকিট নাড়াচাড়া খুব সাবধানে করতে হয়। আমাদের হাত খুব ভাল করে ধুলেও তাতে তেল থাকে যেটা ডাকটিকিটের পক্ষে খুব ক্ষতিকর – তাই ফিলাটেলিস্টদের জন্য নির্দিষ্ট চিমটে ব্যবহার করাই শ্রেয়।

ডাকটিকিট যেহেতু খুব ছোট তাই একটি ডাকটিকিটের সব বৈশিষ্ট খালি চোখে ভাল ধরা পড়ে না – তাই একটি ভাল আতস কাঁচ বা ম্যাগনিফাইং গ্লাস ব্যবহার করার খুব দরকার। দু’টি ডাকটিকিট একই রকম দেখতে কিন্তু এক নয়, খুব সূক্ষ্ম তফাৎ থাকে। সত্যজিতের “কৈলাস চৌধুরীর পাথর” গল্পে ফেলুদার রহস্য সমাধানে স্ট্যাম্প কালেক্টিং যেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল যমজ স্ট্যাম্পের রহস্য সমাধানই সংগ্রাহকদের ফেলুদার মত গোয়েন্দা করে তোলে। এই গোয়েন্দাগিরি মজার আর তোমার জ্ঞান আর দক্ষতার পরীক্ষা।

খাম থেকে ডাকটিকিট তোলা

বাড়িতে আসা চিঠিতে বা পরিচিতদের কাছ থেকে পাওয়া খামে অনেক ডাকটিকিট পাবে যেগুলো কিন্তু ১৫-২০ মিনিট ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে খাম থেকে তুলতে হবে; যদিও কাগজের কোয়ালিটি আর কোন্‌ রকমের আঠা ব্যবহৃত হয়েছে তার ওপর সময় নির্ভর করে। প্লাস্টিকের ট্রে বা কানা উঁচু থালা সবচেয়ে ভাল।

যখন খাম থেকে ছেড়ে স্ট্যাম্পগুলো জলে ভাসবে তখন সেগুলো নিয়ে কাজ করা যাবে। কিছু কিছু স্ট্যাম্পের গায়ে ডাকঘরের এমন ছাপ থাকে বা বেগুনী রং থাকে যেগুলো আলাদা করে ভেজাতে হয় নাহলে অন্য স্ট্যাম্পের গায়ে রং লেগে যাবে। স্ট্যাম্পকে চিমটে দিয়ে ধরে তুলি দিয়ে ঘষে পিছনের আঠা আস্তে আস্তে পরিস্কার করতে হবে। তারপর শুকনো কাপড় বা ব্লটিং পেপারের মধ্যে রেখে শুকোতে হবে।

প্রয়োজনীয় সামগ্রী

ভাল সংগ্রাহক হতে গেলে উপযুক্ত চিমটে, ট্রে, আতস কাঁচ, স্ট্যাম্পের ফুটো মাপবার ‘পারফোরেশান গজ’, জলছাপ দেখবার জন্য ‘ওয়াটারমার্ক ডিটেকটার’ [যদিও সাধারণত আলোর সামনে ধরলে স্ট্যাম্পের কাগজে ছাপা হালকা জলছাপ দেখা যায়], স্ট্যাম্পের পত্রিকা, রেফারেন্স বই আর ক্যাটালগ দরকার হবে – এগুলো থেকে স্ট্যাম্প শনাক্ত করা যায় আর ঐ স্ট্যাম্প সংক্রান্ত সব তথ্যাদি পাবে। গ্রেট ব্রিটেনের স্ট্যাম্পের জন্য গিবন্স ক্যাটালগ, ইভার্ট অ্যান্ড টেলিয়ার ফ্রান্সের জন্য আর জার্মানীর জন্য মিশেল ক্যাটালগ, ভারতের জন্য গিবন্স ক্যাটালগ, India and States Stamp Catalogue; Phila India Guide Book Catalog 2017-18; Philacent India Catalog 2016-17; Freestampcatalogue (online); India Stamp Details (online)।

পুরোপুরি তথ্য না থাকলেও খুব নিশ্চিত হয়েই বলা যায় ভারতে এক লক্ষেরও বেশী সক্রিয় স্ট্যাম্প কালেক্টার আছেন। রাজেশ মিত্তাল মাত্র দু’ বছর আগে স্ট্যাম্প নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করলেও এর মধ্যেই ফিলাটেলি এতটাই ভালবাসেন যে তিনি তাঁর শরীরে ভারতের প্রথম পোস্টমার্কের ছবির ট্যাটু করিয়েছেন।


অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে ব্রিটিশ উপনিবেশায়নের শিখরে পৌঁছাতে শুরু করে। ১৮৫২তে প্রথম ভারতীয় ডাকটিকিট ইস্যু করা হয়, ‘সিন্দ ডক’, আধ আনার একটি লাল, বৃত্তাকার আধা ডাক, বেসরকারী স্ট্যাম্প। দু’বছর পর ‘সিন্দ ডক’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই টিকিটগুলোর বর্তমানে দাম হ’ল – ব্যবহৃত হ’লে ৪৭,৬০০ টাকা থেকে ৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা আর নতুন হ’লে ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

১৮৫৪ সালে ৪ আনার দু’রং-এর কুইন ভিক্টোরিয়া স্ট্যাম্প মুদ্রিত হয়, পৃথিবীতে দ্বিতীয়, অন্যটি সুইটজারল্যান্ডের ব্যাসেল ডাভ স্ট্যাম্প। এছাড়াও আধ আনা, এক আনা, দু’আনা দামের বিভিন্ন রং-এর কুইন ভিক্টোরিয়া স্ট্যাম্পের সিরিজ বের করা হয়।

স্বাধীন ভারতের ডাকটিকিট

দু’শো বছরের ব্রিটিশ শাসনের পর ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ অবশেষে স্বাধীনতা পেল। India Postage লেখা তিন রকমের ডাকটিকিট মুদ্রিত হয় – ১। আন্তর্জাতিক ডাকের জন্য ভারতের জাতীয় পতাকার ছবি সম্বলিত ডাকটিকিট; ২। অন্তর্দেশীয় ডাকের জন্য ভারতের জাতীয় প্রতীকের ছবি সম্বলিত ডাকটিকিট; এয়ারমেলের জন্য ডগলাস সিডি-৪ এয়ারপ্লেনের ছবি সম্বলিত ডাকটিকিট।

ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার ‘প্রিন্সলি স্টেটস’

১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার আগে ৫৬৫টি প্রিন্সলি স্টেটস বা রাজকীয় রাজ্য ও করদ রাজ্য ছিল। এদের মধ্যে অন্তত ৫০টি রাজ্যের নিজস্ব ডাকটিকিট এবং রেভেনিউ স্ট্যাম্প ছিল। সংগ্রাহকদের কাছে এগুলোর প্রচুর কদর।

ভারতের স্মারক ডাকটিকিট

ভারতের স্মারক ডাকটিকিটের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সালের মহাত্মা গান্ধী স্মারক ডাকটিকিট; ১৯৪৯ সালে ‘ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন’-এর ৭৫ বছর পূর্তি ডাকটিকিট; ১৯৫০ সালে ভারতের প্রজাতন্ত্র দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের স্মারক ডাকটিকিট ইত্যাদি প্রকাশের মাধ্যমে।

ভারতের ব্যতিক্রমী ডাকটিকিট

ভারতের টিকিট সংগ্রহ শুধুমাত্র পুরনো ডাকটিকিটেই থেমে নেই। বহু ফিলাটেলিস্ট মনে করেন যে আধুনিক ভারতের স্ট্যাম্প সংগ্রহ করা অনেক বেশি মজার আর চ্যালেঞ্জিং কারণ ভারতের মত এত বৈচিত্রময় এত অসংখ্য স্ট্যাম্প আর কোন দেশে প্রকাশিত হয় না, যেমন ২০০৯ সালে প্রকাশিত ল্যুই ব্রেইল স্ট্যাম্পস যা ব্রেইল পদ্ধতিতে ছাপা হয়েছিল; বিভিন্ন ফুলের ও চন্দনের সুগন্ধি মেশানো স্ট্যাম্প ইত্যাদি।

ইন্ডিয়ান ফিলাটেলিক ব্যুরো

সব ধরণের সংগ্রাহকদের সাহায্য করার জন্য ভারতের বড় বড় শহরে ফিলাটেলিক ব্যুরো রয়েছে। এগুলো থেকে তুমি ফিলাটেলিক স্ট্যাম্পস, মিনিয়েচার শীটস, ফার্স্ট ডে কভার, স্ট্যাম্প ব্রোশর, স্ট্যাম্প হ্যান্ডবুক ইত্যাদি সংগ্রহ করতে পারবে। কলকাতার ঠিকানাঃ জিপিও, বিবাদী বাগ, কলকাতা  ফোনঃ 033 2210 5022 – এখানে ফিলাটেলিক একাউন্ট চালু করলেই ঘরে বসে প্রতি মাসে প্রকাশিত স্ট্যাম্প ইত্যাদি হাতে পেয়ে যাবে।

 

ব্যবহার করা স্ট্যাম্পের জন্য তোমাকে ‘ফিলাটেলিক কংগ্রেস অভ ইন্ডিয়া’-র সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে যারা তোমাকে ভাল ভাল ডীলারেরই শুধু সন্ধান দেবে না, তোমাকে সব রকম প্রয়োজনীয় উপদেশ দেবে।

ব্যস, আর চিন্তা কী? ‘জয় ডাকটিকিট’ বলে আজই শুরু করে দাও তোমার অনুসন্ধান, সংগ্রহ আর এ্যালবাম আর এনজয় কর স্ট্যাম্প জমানোর অপার আনন্দ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।