• Uncategorized
  • 0

“নারী-দি-বস” উদযাপনে মৌ সেন

পাখির কলম

প্রিয় তুষ্টি,
আজ মার্চ, বিশ্ব নারী দিবস। আজ আমাদের যা খুশি বলার দিন আজ আমাদের পাখি হয়ে ওড়ার দিন তুমি বলেছিলে, যা ইচ্ছে হয় তাই লিখো আমার তো সেরকম কোন কষ্ট নেই লড়াইও খুব কঠিন নয় তাই পায়ের শিকল কাকে বলে, হাতের বেড়ি কাকে বলে, সেভাবে নিজের জীবন দিয়ে জীবনে আমার জানা হলো না। আমি স্বরোজগেরে, সুপ্রতিষ্ঠিত মধ্যবয়স্কা এক সন্তানের মা আমার একটা রোজগেরে সুদর্শন স্বামী আছে। একটা দোতলা বাড়ি আছে। একটা গাড়ি আছে সরকারি চাকরি আছে বাবামা বর্তমান। সেরকম কোন কষ্ট তো আমার নেই। তবুও আজ আমি এখানে লিখতে এসেছি। লিখতে এসেছিযা খুশি
তোমাকে একটা কথা বলি। আমি যখন আমার শশুর বাড়ি থেকে বাবা মায়ের কাছে যাই সাধারন একটা বাসে চেপে, তখন জানলা দিয়ে যে হু হু করে হাওয়া ঢোকে। আমার চুল ওড়ে, আমার ওড়না ওড়ে, আমার চোখ মুখ ঠাণ্ডা হাওয়ায় ভরে যায় আর আমার মনে হয় আমি বাসে যাচ্ছি না, আমার বোধহয় দুটো ডানা হয়েছে আর আমি ডানা মেলে উড়ে উড়ে বাবা মায়ের কাছে যাচ্ছি। স্বামীর সংসার তো বেশ সুখের তবুও আমার বাবা মায়ের কাছে যাওয়ার সময় মনে হয় পাখি হয়ে গেছি। কেন বলতে পারো?
দূরে থাকি বলে এবং সপ্তাহান্তে ফিরি বলে সাংসারিক কলহ এখন আমার থেকে অনেক দূরে। ছোটখাটো যেটুকু ধুলো মনের মধ্যে বসে সেগুলো আমি ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিই। এই যেমন ধরো কালকে আমার ফোন এনগেজড পেয়ে আমার স্বামী আমায় কিছু কথা বলল বলল অনেকগুলো কথা, কিন্তু সে কথাগুলো আমার মনে হল একটা বাক্যে বলে দেয়া যায় আমায় সন্দেহ করল ওকে একশো বার ফোন করলে একশো বারই এনগেজড পাই। তাই, আমার রাগ হওয়ার কথা কিন্তু কী আশ্চর্য দ্যাখো, আমার হল কষ্ট আর অপমান এত অভিমান হল নাকি ঘেন্না হল, আমি আর ওকে বললাম না ফোনটা আমার বাবার ছিল। যাই হোক, কেন ফোন এনগেজড ছিল সে সমস্ত শোনার আগেই বলল আমার ব্যাংকের পাস বই টা আপডেট করে এনেছে এবং তারপর গত এক বছরে বিভিন্ন খাতে যে টাকা তুলেছি সেগুলো বলে যেতে লাগলো পুজোর আগে তন্তুজ থেকে সাড়ে নয় হাজার টাকার শাড়ি কিনে ছিলাম আমাকে বলল এত এক্সপেন্সিভ শাড়ি তো আমি পরি না। সাড়ে নয় হাজার টাকার কোন শাড়ি? কার জন্য? এমনিতে আমি মোটের উপর ভালই আছি খুব একটা কষ্ট নেই শুধু একটু আধটু কিছু কথা ঠিক সহ্য হয় না। পুজোর আগে নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে  তন্তুজ এর এত বড় বিল করে দিলে স্বামী জিজ্ঞেস করতেই পারে শাড়ীটার মধ্যে কার কার শাড়ি ছিল সব স্বামীদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। তবু কেন যে আমার মুখটা তেতো হয়ে গেছিল, বলতে পারব না। আমি আর বললাম না মোট চারটি শাড়ি কিনেছিলাম যার একটা ওর মায়ের আলমারিতে আছে। তো যেটা বলছিলাম, এইরকম একটু খোঁচা ছাড়া মোটের উপর আমি কিন্তু ভালো আছি। ভালো আছি মানে সরকারি গাড়ি নিয়ে যাই তো, তাই রাস্তাঘাটে এখনো মলেস্টেড হইনি অফিসের বস আমার শীতল চাহনি টপকে বাজে প্রস্তাব দিতে পারেনি। সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট এর শিকার হইনি, ইত্যাদি ইত্যাদি কিন্তু আমার একটা অন্য কথা বলার আছে। লাস্ট এক মাস ধরে একটা নতুন স্কিম আমি নিজের চেষ্টায় তৈরি করেছি। খুব খেটেছি তৈরি করা সম্পূর্ণ হয়ে গেছে কিন্তু গত পরশুদিন আমার বস আমাকে বলেছেন আর একজন পুরুষ কলিগকে স্কিমটা একবার দেখিয়ে নিতে। কারণ জিজ্ঞেস করাতে বললেন, আগের স্কিমটা করেছিল তো, ওর নলেজটা ভালো আমি বুঝলাম মহিলা অফিসারের নলেজের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না বস আমার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়তো লেগে যাবে আরো বেশ কয়েকটা নারী দিবস। অথবা যোগ্যতা প্রমাণ হবেই না কোনদিন।
এমনিতে আমি ভালোই আছি। আধুনিক নারী, সুপ্রতিষ্ঠিত নারী, খুব ব্যালেন্স লাইফের নারী, প্রোটেক্টেড নারীএই সমস্ত তকমা আমার সাথে মিলে যায়। তবুও মনে যে বিভিন্ন ছোট ছোট প্রশ্ন, আজ নারী দিবসে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বসেছি।

কতটা এগোলাম আমি, আর কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলাম আমার গায়ে লেপ্টে থাকা সমাজটাকে , তার উত্তর খুঁজতে বসেছি

এমনিতে আমি ভালোই আছি, নাকি নেই? তুমি বলতে পারো তুষ্টি?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।