জন্মস্থান – পুরুলিয়া
পেশা – সরকারি চাকরি
প্রকাশিত কবিতা বই :-
১) ডানায় সে চুম্বকত্ব আছে
২) উন্মাদ অন্ধকারের ভিতর
৩) ভিতরে বাইরে
৪) পোড়া নক্ষত্রের কাঙাল
৫) মুসলপর্বের স্বরলিপি
৬) কৃষ্ণগহ্বর
৭) শরীরে সরীসৃপ
৮) প্রেমের কবিতা
৯) পোড়ামাটির ঈশ্বর
১০) ঈর্ষা ক্রোমোজোম
উপন্যাস
১) কৃষ্ণগহ্বর
পূর্ব প্রকাশিতের পর…
কথা বলতে বেশির ভাগটাই হোয়াটসএপ্স- এ বা মেসেঞ্জারে। লিখে লিখে। এতে অন্যপাশের মানুষটিকে তেমনভাবে টের পাওয়া যায় না। তবু যেটুকু পাওয়া যায় তাতেই অর্ণবের হা-হুতাশায় এক ছটাক খোয়াবের খুশবু। আঁধার ঘনিয়ে আসার মুহূর্তে শেষ আলোর ছটা। এটুকু নিয়ে সে জীবনে পাল তুলে দিয়েছে। কোথায় পৌঁছাবে জানে না। সে তো কোথাও পৌঁছাতে চায়নি এতদিন। কিন্তু এই তো ক’দিন আগেই জীবন তাকে দিয়েছে মোক্ষম মোচড়। আরেকটি জীবনকে গেঁথে দিয়েছে তার জীবনের সঙ্গে। অর্ণব আজ আর একা নয়! যুগ্ম জীবনের একখণ্ড সে আর অন্যখণ্ড অনুস্মিতা।
-খেয়েছ!
-না, খেতে অনেক দেরি। তুমি?
-আমি স্কুলে। আজ টিফিন টাইমেই হেভি লাফড়া হল। হেড ম্যাম বলছেন, লিভ হবে না। বলছেন, এখন তো সবে চার মাস!
– আমি ম্যামের সঙ্গে দেখা করব?
-তুমি দেখা করে কী করবে? রাখছি পরে কথা হবে।
সরকার ছুটি দেয়। স্কুলের হেড ম্যাম লাফড়া করে। কেন! অর্ণব জানে না। রাজীব স্কুল মাস্টার ওকে ফোন করে জানতে হবে। মোবাইলের ফোন রেকর্ড ঘেঁটে রাজীবের নাম্বারে ফোন করে।
-আমি অর্ণব বলছি রে রাজীব!
-আমাকে স্মরণ করলি! কতদিন পরে মনে পড়ছে!
-সরি রে, কিছু মনে করিস না।
-বল, কেমন আছিস!
-ভাল। আরে শোন না। একটা সমস্যায় পড়েছি। বলছি, তুই তো স্কুলে আছিস। বউ এর চার মাস। স্কুল বলছে ছুটি দেবে না। সরকার ছুটি ধার্য করেছে, স্কুল কি বলতে পারে ছুটি দেবে না?
– না, বলতে পারে না। কিন্তু অন্য একটা সমস্যাও কোনো কোনো স্কুলে হচ্ছে।
-কেমন সমস্যা!
-এই ধর, আমাদের স্কুলে পুরুষ মহিলা মিলে তের জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। সাত জন শিক্ষিকা আর ছয় জন শিক্ষক। এবার ভাব, এক সঙ্গে যদি পাঁচ ছয় জন প্রেগন্যান্ট হয়! সবাই এক সঙ্গে ছুটি চাইলে স্কুল চলবে!
-তাহলে সমাধান!
-সমাধান অবশ্য আছে। পৃথিবীতে সব কিছুর সমাধান আছে। আর এটা তো সামান্য ব্যাপার। আজ সন্ধ্যা সাতটায় দেখা কর লালবাজার মোড়ে। বিয়ার খাওয়াবি চুটকিতে সমাধান হয়ে যাবে। বউ এর কোন স্কুল?
-আনন্দপুর বালিকা বিদ্যালয়।
-ওকে বস। তাহলে আজ সন্ধ্যে সাতটা। খেয়াল থাকবে তো।
-একদম, খেয়াল থাকবে বস। বাই।
এই সবে ফেব্রুয়ারি পড়ল। শীত কবেই উবে গেছে। রোদের রঙ খাঁটি বৈশাখ। আগামীকাল আনন্দপুর যেতেই হবে। জানুয়ারি মাসে যাওয়াই হল না। অনু রাগ করেনি। অর্ণব কিন্তু বোঝে অনুর চাপা অভিমানের কথা। গভীর রাতে অনুর উঁচু পেটে কান পেতে আগামী প্রাণের চলাচল শোনে। এই চারমাসে কি হাত-পা-চোখ-মুখ-নাক সব হয়ে গেছে! অর্ণব জানে না। কেবল কল্পনা করে। বায়োলজির জ্ঞান তার তেমন ভালো নয়। তবে সে শব্দ একটা টের পায়! বাবা, বাবা করে আকুল হয়ে ডাকছে। অনন্ত সমুদ্রের ভিতরে এক প্রাণ। মায়ের নাড়ির সঙ্গে বাঁধা এক ক্ষুদ্র প্রাণ অথচ কী বিশাল তার উচ্ছলতা! অন্ধকার মাতৃ গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসার কী ভীষণ আকুতি! অন্ধকারে গাছ রেখে দিলে যেমন আলোরদিকে বেঁকে যায় তার ডালপালা; তেমনি একটি প্রাণ অপেক্ষা করে আছে পৃথিবীর আলো দেখবে বলে। হাত নেড়ে যেন জানান দিচ্ছে, বাবা, আমি আসবি। আর কয়েকটা মাস অপেক্ষা কর।
অর্ণবের চোখ ভিজে আসে। সে কান্না লুকোতে পারে না। অনু ঠিক ধরে নেয়। নিজের আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেয়। বলে, আমার এই বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়। অর্ণব ঘুমোয় যেমন শিশু ঘুমোয় মায়ের কোলে।
অর্ণব ঠিক সন্ধ্যা ছয়টা বাজতে পাঁচ মিনিট আগেই গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে পড়ে। স্কুলডাঙ্গা থেকে লালবাজার বড়জোর এক কিলোমিটার। কিন্তু একটু আগে ভাগেই বের হল। রাস্তার মোড়ে জম্পেস করে চটপটি খাবে। চটপটি বাঁকুড়ার বিখ্যাত চাট। মদ হোক চাই ভাত, রুটি হোক চাই পান্তা চটপটির কোনো বিকল্প নাই। অর্ণব গ্যারেজ থেকে বের হলেই গুটিগুটি পায়ে গিয়ে হাজির হয় ঝন্টুর স্পেশাল চাটের দোকানে। প্রথমেই দুটো ডবল ডিমের ওমলেট তারপরে দু’পিস মুরগির টেংরি ওয়ালা পিস আর এক শালপাতার খালায় ঝাল ঝাল ঝোল। সবশেষে স্পেশাল চটপটি। এ-প্রায় রোজ দিনকার রুটিন। সপ্তাহে চারদিন তো বটেই।
চটপটির সোয়াদ নিতে নিতে পিঠে কার যেন স্পর্শ! ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে রাজীব।
-খাবি? চটপটি।
-না, প্যাকেট করতে বল। বিয়ার দিয়ে খাব।
-ধুর! বিয়ার দিয়ে কেউ চটপটি খায় নাকি। তাহলে চল, বিয়ার না আজ দু’পেগ করে ভদকা খাই।
-ও গুরু, আমারও তাই ইচ্ছে ছিল রে ভাই! বুক চিরে দেখাব! দেখবি আজ গোটাদিন মনটা ভদকা ভদকা করছিল!
-না থাক। তোকে আর হনুমান হতে হবে না। চল, বারে গিয়ে কথা হবে।