সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে বিশ্বজিৎ লায়েক (পর্ব – ১৫)

পূর্ব প্রকাশিতের পর…
১৯২৪ সাল। পরাধীন ভারত। সত্যেন্দ্রনাথ বোস আবিষ্কার করলেন একটি সংখ্যাতত্ত্ব। যেসব কণা এই সংখ্যাতত্ত্ব মেনে চলে তারা হল ‘বোসনকণা’। আর ১৯৬৪ সাল। পিটার হিগস বললেন, ‘জগৎসৃষ্টির মূলে রয়েছে ভরযুক্ত কণা।’ এই ভরযুক্ত কণার অস্তিত্ব কল্পনা করলেন পিটার হিগস। নাম হল ‘পিটার-বোসন কণা’। ১৯৯৩ সাল। বিজ্ঞানী লিও লেডারম্যান ‘হিগস-বোসন কণাকে নিয়ে বই লিখলেন। নাম দিলেন ‘গডড্যাম পার্টিকল’ মানে দূরছাই কণা। প্রকাশক বললেন এই নাম চলবে না। টাকা ঢালব, বই বিক্রি না হলে টাকা উঠবে কী করে! নাম দিলেন, ‘দ্য গড পার্টিকল’ মানে ঈশ্বরকণা। আর ২০১২ -র ৪ জুলাই ‘ঈশ্বরকণা’ কে খুঁজে পাওয়া গেল।
One possible signature of a higgs-boson from a simulated collision between two protons. It decays almost immediately into two jets of hadrons and two electrons, visible as lines.
চোখ খুলে নির্বাণ দেখে রাজা নেই। ক্লাস সেভেনের ছেলে বিকেলে ঘরে বসে কাকুর লেকচার শুনবে, এমনটা ভাবা ঠিক নয়। বোধহয় ব্যাট নিয়ে মাঠে গেছে। খেলা তো এখন একটাই – ক্রিকেট। আবেগ, দেশপ্রেম সব কিছুর ককটেল ক্রিকেট।
কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রাখল নির্বাণ। একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে। অচেনা-অজানা এরকম অনুরোধ এলে ডিলিট করে দেয় নির্বাণ। কিন্তু এবারে নামটা একেবারে অন্যস্বাদের – ‘বনলতা চাইছি তোমার বন্ধুতা’। নির্বাণ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করল। সঙ্গে সঙ্গে একটা মেসেজ এল।
‘আপনি কবিতা লেখেন?’
‘কেন হঠাৎ এ-প্রশ্ন?’
‘আপনি কী করেন?’
‘কেন বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। খাই-দাই-ঘুরে বেড়াই আর ঘুমাই।’
‘প্রোফাইলের ছবিটা আপনার নিজের?’
‘আপনার কোনও সন্দেহ আছে কি!’
‘না, মনে হচ্ছে আপনার বয়স কম, কিন্তু চুল সব সাদা হয়ে গেছে তাই।’
‘তাতে কী! আপনার অসুবিধা হলে জল খাবেন। বেশি বেশি করে জল খেলেই, সমস্যা মিটে যাবে।’
‘চুল পাকার সমস্যা তো আপনার। আমি তো মেয়ে। মেয়েদের চুল অত সহজে পাকে না।’
নির্বাণ কোনও জবাব দিল না। চুপচাপ থাকল। উঠে গিয়ে কিচেনে ঢুকল। মা নেই। বোধহয় টিভি দেখছেন। এই সময় একটা সিরিয়াল হয়। নিজেই এককাপ চা বানিয়ে আবার কম্পিউটারের কাছে এসে বসল। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে প্রচণ্ড। জানলা খোলা আছে। বিছানার অর্ধেক ভিজে চুপসে গেছে। বাড়িতে সব গুছিয়ে রাখতে চেষ্টা করে নির্বাণ, কিন্তু পারে না। মা সাহায্য করেন।
চায়ে চুমুক দিয়ে স্ক্রিনে আবার চোখ রাখল নির্বাণ। আবার একটা ম্যাসেজ।
‘আমি আজ সুইসাইড করব ভাবছি। আপনি আমাকে সাহায্য করবেন?’
নির্বাণ ভাবল বেশ তো সমস্যায় পড়া গেছে। ব্লক করে দেবে কিনা ভাবছে। চা ততক্ষণে জল। কী করবে কিছুই ভাবতে পারছে না। আবার ম্যাসেজ।
‘আপনি আমায় ব্লক করবেন না প্লিজ।’
নির্বাণ উত্তর দিল, ‘আপনার সমস্যাটা বলবেন প্লিজ। এরকম আত্মহত্যার কথা ভাবছেন কেন?’
চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিল নির্বাণ। আবার লিখল, ‘আপনি কী করেন, বাড়িতে কে কে আছেন?’
কম্পিউটার জানাচ্ছে,’বনলতা চাইছি তোমার বন্ধুতা’ টাইপ করছে। নির্বাণ চুপচাপ বসে থাকল। ভাবতে চেষ্টা করল কী কী লিখতে পারে মেয়েটা।
মিনিট পনেরো পর ইনবক্সে ভেসে উঠল আসমুদ্র লেখা।
বাইরে অঝোর বৃষ্টি। নির্বাণের চোখেও তার সংক্রমণ।
ক্রমশ…