দৈনিক ধারাবাহিক উপন্যাসে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ২২)
by
·
Published
· Updated
পর্ব – ২২
১২১
পায়ে পায়ে কখন চলে এসেছে কারখানায়। অনেকটা আনমনেই পথ চলেছিল সে। নিজের সাথে নিজে কথা বলতে বলতেই। শ্যামলীকে দেখে যে শ্রমিকেরা কাজ করছিল, হাতের কাজ ফেলে তাকাল। শ্যামলী নিজের অফিস ঘরে গিয়ে বসল। মাটির কুঁজো থেকে জল নিয়ে খাবে বলে কাছে গিয়ে ছুঁয়ে বুঝল তাতে জল নেই। বাচ্চা শ্রমিকটি ততক্ষণে কাচের গেলাসে জল এনেছে। বলল “বড় বাবু এসেছিল।”
“বাবা?”
“হ্যাঁ, তোমায় খুঁজছিল। তুমি বাড়ি যাও ছোড়দি। তোমার জন্যে বাড়িতে চিন্তা করছে।”
বাবাকে সাথে সাথে ফোন করল শ্যামলী।
বলল ” বাবা, আমি ঠিক আছি। তোমরা চিন্তা করো না।”
শ্রমিকটি আবার বলল ” ছোড়দি, বাড়ি যাও।”
ওর কথার কোনো জবাব না দিয়ে শ্যামলী জানতে চাইল হারমোনিয়ামটা কোথায়। ছেলেটি দেখিয়ে দিল সেটি ঘরের কোণে রাখা আছে। সঙ্গে সঙ্গে শ্যামলী হারমোনিয়ামের কাছে গিয়ে হাত বুলিয়ে দেখলো তার যন্ত্র ঠিক আছে কি না, বাজছে কি না। মা সন্ধ্যাবেলায় এই হারমোনিয়াম নিয়ে ঠাকুরকে গান শোনায়। সবিতা পিসি ঠাকুর ঘরের দরজার কাছে এসে বসে। মা আগে আগে ওকে ঘরের ভেতর এসে বসতে বলত। পিসি বলে কেউ খোঁজ করতে এলে দৌড়ে যেতে সুবিধা হয়। কি যে উদ্ভট ওর যুক্তি, পিসিই জানে। বাবা হেসে বলতেন “ঘরেও নাই পারেও নাই, সে জন আছে কোনখানে।” পিসি রেগে বলতো, “নাও , আমাকে নিয়ে কারো চিন্তা করার দরকার নেই। আমি আবার একটা মানুষ !”
হারমোনিয়ামে মা গান ধরতো ” নিবিড় ঘন আঁধারে জ্বলিছে ধ্রুবতারা, মন রে মোর পাথারে হোস নে দিশাহারা “। ছোট ছোট স্মৃতি মনের কোণে উঁকি দিয়ে যায় শ্যামলীর। রিকশা ডাকিয়ে হারমোনিয়াম কোলে নিয়ে বাড়ি ফেরার আগে কারখানার মিস্ত্রিকে কি কি মোটর পার্টস লাগবে তা বুঝে রাখতে বলে।