বিশিষ্ট সাহিত্যিক নরেন্দ্র দেব এবং রাধারাণীর সন্তান নবনীতা দেবসেন। তাঁর প্রাক্তন স্বামী,অমর্ত্য সেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও যিনি বলতে পারতেন,’বেচারা ক্যান্সারকে এত দোষ দিয়ে কী হবে?’ না, তাঁকে কারো পরিচয়ে পরিচিত হতে হয়নি কোনোদিন। তিনি ছিলেন,স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর।তাঁকে আধুনিক ভারতের সরস্বতী বললেও অত্যুক্তি হয় না।
দিদি বলে কোনোদিন তাঁকে ডেকে আমাদের অনেকেরই তাঁর সঙ্গে সেল্ফি তোলা হয়নি। বা,সেই সেল্ফি দিয়ে আমাদের অনেকেই আপনার বিদায়ের পর কোনো পোস্ট দিয়ে কেউকেটা বলে প্রমানিত হতে পারিনি। আমাদের অনেকেরই আপনাকে শেষ দেখার জন্য আপনার ‘ভালো বাসা’ বাড়িতে গিয়ে লাইন দেওয়া হয় নি। আপনার শেষ যাত্রায় পথের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা অনেকেই আপনাকে একটি ফুলও ছুঁড়ে দিতে পারি নি। আমরা অনেকেই আপনার লেখা পড়তে পড়তে বড়ো হয়ে বুড়ো হয়েছি হয়তো, কিন্ত আপনি কোনোদিন বৃদ্ধা হন নি। আপনি রয়ে গিয়েছিলেন আপনারই মতো। জানিনা,গলা খুলে বা গুনগুন করে, আপনাকে কেউ ‘ আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ গাইতে শুনেছেন কি না! আপনি তো জানতেন, কীভাবে থাকতে হয়। আপনার মত মেধা, মনন ও উত্তরাধিকার নিয়ে বাংলা সাহিত্য চর্চা করতে মনে হয় আপনার আগে আর কেউ আসেন নি।প্রবন্ধ-গদ্য-পদ্য,সর্বত্রই ছিলেন আপনার সাবলীল গতিতে স্বচ্ছন্দ বিচরণ।
ম্যাডাম আপনি ছিলেন, থাকবেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ‘গ্ল্যামার কুইন’ হয়েই থাকবেন।
গতকাল ও আজ মিলিয়ে স্পষ্ট দেখা গেল, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যপ্রেমী সকলকে কাঁদিয়ে যেন সব গ্ল্যামার আপনি একাই নিয়ে চলে গেলেন।সোশ্যাল মিডিয়ায় গতকাল থেকে শুধু আপনাকে নিয়ে যত পোস্ট হয়েছে তা থেকেই বোঝা যায় আপনার চলে যাওয়া কত মানুষকে বেদনা দিয়েছে তার হিসেব নেই ।
আপনি আমাদের সকলের শ্রদ্ধার, সম্মানের একজন জেনেও বলছি সম্প্রতিককালে কোনো সাহিত্যিকের মৃত্যুর পর এত এত শোকপ্রকাশ লক্ষ্য করা যায়নি। বড়,ছোট,মাঝারি, সাধারণ থেকে অসাধারণ সবখানেই আপনি ছিলেন অনন্য বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। আপনার জীবন, পড়াশোনা, গবেষণা, কর্ম, এলিটিজম সবকিছুকে অতিক্রম করে আপনি অগণিত পাঠকের কাছে হয়ে উঠতে পেরেছিলেন ‘নবনীতাদি’। হ্যাঁ,আপনি বলেই পেরেছিলেন। আপনার পা ছুঁয়ে প্রণাম করা হয় নি কোনোদিন দিদি।আজ,এই শেষ বেলায় একটা..! দিদি, প্লিজ! প্লিজ! পা সরিয়ে নেবেন না