• Uncategorized
  • 0

ডাউন-সিন্ড্রোমে শুভ আঢ্য – ২

কলকাতায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা। লেখালিখি মূলত প্রিন্টেড ও ওয়েব ম্যাগে। প্রকাশিত বই তিনটি, ব্লেড রানার, আওকিগাহারা ও জোকিং – আ – পার্ট। বিষণ্ণতা ছাড়া আর ভালবাসা কিছু নেই

ডাউন সিন্ড্রোম

তবে কেউ যদি ভেবে থাকেন যে গলা খাঁকারি না দিয়েই ধরতাইটা কীভাবে শুরু হল, বা পরে দেওয়া হবে কি না, তাঁদের জ্ঞাতার্তে জানাই, এ বাজারে গলা খাঁকারি দিলে সেটা কি খুব ভালো ব্যাপার হপে? তাই, ও অপরাধদ করলেও যা, না করলেও তেমন কোনো ক্ষেতি নেই কো। ধরতাই তো যা দেবার আগের কিস্তিতেই দেওয়া হয়েচে, চাইলে তাকেই ধরে রাকা হোক যা কি না আগেই দেওয়া হয়েচে। এবার জন্মদিনে পাওয়া প্রেজেন্টেশন খোলার মতো করে আস্তে আস্তে ভেতরে ঢুকে পড়লেই হল। তো, ঘটনা হচ্চে, লোকে ঘরে ঢুকলে বৈঠকখানায় যেভাবে চা – টা দেওইয়ার প্রতা এতকাল চলে এয়েচে বাঙালি বাড়িতে, তা বন্দ করে অ্যান্টিশোশ্যাল হয়ে হটাতই বাঙালি সোশাল ডিসট্যান্সিং করা শুরু করচে। ব্যাপারটা যে আগে ছিল নে অনেক বাড়িতে, তেমন নয় কো। সব বাড়িতে গেলেই চায়ের সাতে পকোড়া বা চানাচুর জুটতো বললে ভুল হপে। তবে ম্যাক্সিমাম বাড়িতে জুটে যেত বলে সেটাকেই বাঙালি রীতি বলে ধরে নেওয়া হতো। একন সরকার থেকে টিভিতে খপরে হরবখত বলে চলেচে, আর লোকের পোঁদেও যেমন ভয় ধরেচে খুব, তেমন তাকে সম্মান দিতেও শিকেচে কিচু কিচু লোক। এই যেমন আগে লোকে লোকে বাড়িতে এলে, মেয়ে বউরা ঘরের বাইরে থেকে গলা খাঁকারি দিলে চা আনতে উটে যেত কত্তা। মাজে ক’টা দিন এমনও গেচে, যে বাড়ির বউ থাই না দেকালেও, পায়ের গোচ দেকিয়ে চা দিতে আসত। তেমন সময় বেড়ালটা যে তার পায়ে ন্যাওটা হয়ে ঘুরঘুর করত না এমনটাও নয় কো। তবে সে ব্যাপারে অত দেকা শোনা করা ঠিক নয় কো। কতা হচ্চে চায়ের। চায়ের থেকে টায়ের কতা বেশী হয়ে যাতে না পরে, সেজন্যই একানে মুক বন্দ করা হল। মোটের ওপর এসব কিচু যে এক্কেবারেই যে মানা হচ্চে নে, এমন নয় কো, তবে তার মদ্দেও ক্লাসে তেমন ঢ্যামনা বাচ্চাও থাকে, যাদেরকে বলে কোনো লাভ কেউ কোনো দিন করেনি, তাদের মতো কিচু লোকজন রাস্তাঘাটে উটকো ঘুরে বেড়াচ্চে। একন সেই ছেলেপিলেগুলোকে শায়েস্তা করার জন্যে যেমন প্রত্যেক ইস্কুলেই একজন কড়া মাষ্টার থেকে থাকে, তেমন একানে প্রশাসন থেকে পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েচে। কোনো কোনো এলাকায় পুলিশ টসে জিতে ব্যাট নিয়েচে আর প্রথম পাওয়ার প্লে’র মতো সপাটে চালিয়ে খেলেচে বলে রঙ্গ রসিকতাও চালু হয়েচে বটে। তবে এত এটা যে দরকার, সে নিয়ে দ্বিমত কেউ করচে নে। আর যারা এই পুলিশের ভালোবাসার সাক্কী হয়েচে, তারা তো আরওই করচে নে, এ কতা বলাই বাহুল্য। 
দোকানে দোকানে চায়ের টেবিলের তলায় বিস্কুটের গুঁড়ো খুঁজতে খুঁজতে বেড়ালটা হন্যে হয়ে যকন ঘুরে বেড়াত, তকন সে’ও কি জানত, একদিন এই টেবিলগুলোই একে অপরের ওপরে চাপানো থাকবে? আর যদি চাপানো না’ও থাকে তাহলেও সেকানে কোনো পায়ের নাচানাচি দেকতে পাবে নে কো! একন তেমনপানাই হয়েচে। ঢোলা পাজামা, চোস্ত পাজামা, বারমুডা, থ্রি-কোয়ার্টার, লুঙ্গি সব কিচুই বাদ গেচে সেকান থেকে। একানে মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে, কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই বলে মান্না বাবু যকন গেয়ে গেচেন, তকন তিনি কত দূরদর্শীই না চিলেন! তিনি বেতালা চিলেন না, তিনি তাল জানতেন। তবে দোকানে দোকানে একন ঝাঁপতাল। কোনো পাড়ায়, কোত্থাও তেমনভাবে চায়ের দোকান অব্দি চোকে পড়চে নে বেড়ালটার। সে এ’ও জানতে পারচে নে, সকালের বাজার করতে এসে, চায়ের দোকানে আড্ডা মারতে বসে জলখাবার খেয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া মুকাজ্জীবাবু একন আচে কেমন! এর মদ্দে সুগারের রুগীগুলোর কতা আর আলাদা করে না বললেও চলত, তবু যেমন একটা স্ট্যাটুটরি ওয়ার্নিং-এর মতো বলার দরকার হয় তেমন করেই বলা, তাদের মিষ্টি খাওয়া এক্কেরে ঘুচে গেচে। রাস্তায় বেরিয়ে সুযোগ খোঁজার দিন আর নেই কো। বেড়ালটা জানে এমন দিন বেশীদিন কোতাও চলতে দেবে না বাঙালি। তবু কিচু জায়গায় উটোকো দোকানগুলো খুলে রেকেচে, তা’ও ওই স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করার পর করোনার সংক্রমণ থেকে না বেঁচে যাবার চান্সের মতো নেগলিজিবিল। সেকানে খানিক গুলতানি করতে দেকলেই হল! সাথে সাথে পৌঁচে যাচ্চে প্রো-অ্যাকটিভ পুলিশ, তার সাতে খবরকরনেওয়ালারা। এটা এ বাজারে যে খারাপ তা এক্কেবারেই নয় কো, তবে কিনা অনেকদিন হল বেড়ালটার মতো, বাঙালিও পিওর ঘিয়ের নুচি খায় নে কো কি না, তাই কোনো কিচু খুব ভালো হলে সে নিতে পারে নে। বরং সে এক্সপেক্ট করেই নিয়েচে বে বাড়ি থেকে বেরুনোর পর একটা চোঁয়া ঢেঁকুরই যদি না ওটে আর ফেরার পতে যদি একখান বরফ ঠাণ্ডা কোল্ড ড্রিংকসই না খায়, ঘরে ফেরার আগে, তাহলে আর তুফানি কিচু করলই বা কি! 
এই বলতে বলতেই মনে পড়ে গেল, এটা বাংলার চোতের কতা হচ্চে। একন অনেক জায়গাতেই চোত শেষের মেলা, সেল এসব চলার কতা চিল। হাতিবাগান গড়িয়াহাটের হকারেরা কিচু জিনিস ভেবেও রেকেচিল, একটা জাঙ্গিয়া কিনলে একটা করে বাটি ফ্রি দেবে বলে, তবে তা একন দেওয়া হচ্চে নে কো। কারণ একন সে অবস্তা নেই কো। যেকানে যেকানে মেলা শুরু হয়েচিল, সেকানে সেকানে তা সব বন্দ করে দেওয়া হয়েচে। বেড়ালটার মতো পুলিশও নজর রাকচে তা যেন না খোলা হয়। অনেকটা এভাবেই ঝুলির বাইরে থেকে বেড়ালের মালিক নজরে রাকে যাতে সে না খুলে বেরিয়ে পড়ে। তবে বেড়ালের মালিকের মতো ক্যালানে কাত্তিক নয় কো একানকার প্রশাসন। তাদের হাত গলে একন কেউ গলতে পারচে নে কো। আসচে বোশেকে যাদের বে হবার কতা চিল, তাদের পূর্বরাগএই বাজারে ভয়ানক হয়েচে। একে তো, বিয়ে কবে হবে তার ঠিক নেই কো, তার ওপর হবু বর বা বউয়ের সাতে দেকা না হবার ব্যাকুলতায় অনেকেই নাওয়া খাওয়া বন্দ করেচে অনেকে। খাবারের অপ্রতুলতা বলে যে একটা জিনিসও হতে পারে, বাঙালি তা স্বীকার করে নি কো কোনোদিন, একনও কুরচে নে কো। ভিডিও চ্যাট ছাড়া তাদের আর কোনো গত্যন্তর দেকা যাচ্চে নে কো। 
আর বে বাড়ি তো দূর কি বাত। বিলেতফেরত জামাই চাওয়া মোটা মাসিমাও একন বিলিতি জামাই দেকলে খেঁকিয়ে উটে দজ্জায় খিল দিচ্চে। বাঙালি এমন কোনোকালেই চিল নে কো। এই অসামাজিকতার যে বীজ রক্তে রক্তে ছড়িয়ে পড়েচে তা বের হতে অনেক সময় লাগতে পারে ভেবেই, কিচু লোকজন এই জনতা কার্ফিউ বা এসব কিচু তুচ্চ করে রাস্তাঘাটে বেরিয়ে পড়েচে। অচানক এমন হাবভাব অনেকেরই হজম করতে এট্টুও যে কষ্ট হচ্চে নে কো, এমন কতা বলার লোক বেড়ালটাও নয় কো। সে এ ব্যাপারটাকে তার গায়ে হটাত করে ছোঁড়া জলের সাতে তুলনা করে ভাবচে, লোকে তো বাড়ি খেয়ে হোক বা না খেয়ে হোক ঘরে ঢুকে পড়চে, পরে নিচ্চয় ভাবচে এমনটাও হয়, হতে পারে! জল গায়ে লাগার পর বেড়ালটাও এমনই ভাবে। জুলজুল করে চেয়ে থাকে লোকগুলোর দিকে, মনে মনে উদোম খিস্তায়, আর ভাবে মানুষের পো’দের মতো এমন হাড়-হাভাতেগুলোর এমন রোগভোগ একটা লেগে গেলেই ল্যাটা চুকে যায়। মাজেমাজে দুকুরের পর এমন স্বপ্নও সে দেকে যে, গোটা কলকাতার রাস্তায় একটাও মানুষ নেই কো। বেড়ালে বেড়ালে চয়লাপ হয়ে উটেচে চাদ্দিক। ধম্মতলায় দোকানগুলোতে দুধ আর মাচ ছাড়া কিচ্চু বিক্কিরি হচ্চে নে কো। মার্জার সরণি বেয়ে কয়েকটা মেনি হেঁটে গেল। পার্ক স্ট্রিটে এমন সময় আরও কি না কি হল, এসব ভাবতে ভাবতেই ন্যাজে পা পড়ার জন্যে ঘুমটা চটকে সে খেঁকিয়ে ওটে। ওসব নিয়ে পরে ইন ডিটেলস লেকার কতা সে তো ভেবেই রেকেচে, সেই ক’বে থেকে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *