জন্মদিনে শ্রদ্ধা
কলাইয়ের ভূষির খুব ওম। দারুণ শীতের রাতে বাচ্চাদের ওর ভিতর ঢুকিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়। মুখটুকু বের করে রাখা। শীতবস্ত্রের অভাব। তাই এই ব্যবস্থা।
একটু ভাত খেতে পাবে বলে কতদূর থেকে লোকে এসেছে। গণু মাহাতোর জীবনের আকাঙ্ক্ষা হল একটি লোহার কড়াই অর্জন করা। সে সত্যচরণকে বলতে থাকে গৃহস্থালী সরঞ্জাম হিসাবে একটি লোহার কড়াইয়ের বহুবিধ ব্যবহারের কথা। একটি লোহার কড়াই উপহার পেয়ে তার কী আনন্দ!
গায়ে একটু শাড়ির খুঁট জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মুসম্মত কুন্তা। বড় অভাবী মেয়ে। তবু চরিত্র নষ্ট হতে দেয় নি। ধাওতাল সাহুর মত মহাজনের কথা ভাবলে অবাক হই। থোড়া জলখাই করতে হেঁ হুজুর। ভুলতে পারিনি কথাটুকু।
নাটুয়া বালক ধাতুরিয়া যেন জাত নৃত্যশিল্পী। শিল্পীর স্বীকৃতি পেল না বলে সে রেলের চাকার নিচে হারিয়ে গেল। ওকে গ্রাম্যশিল্পী বলে একজন। সে বৃদ্ধ। তবু ননীচোরা নাটুয়ার নাচ দেখাতে গিয়ে বালক কৃষ্ণের ভূমিকায় যেভাবে অভিমান করে কাঁদে, তা দেখে হাসি চাপা শক্ত।
বড়লোকের দেখাও পাই। বাড়িতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যের সম্ভার। কিন্তু সংস্কৃতি নেই।
আর মেলায় মেয়েদের ঠকে যাওয়া। দুর্দান্ত শীতের রাতে নেকড়ে আর হায়েনাদের হাত থেকে কষ্টেসৃষ্টে বেঁচে যে ফসল ফলায়, তা কেমন অকাতরে সস্তা মণিহারী জিনিসের লোভে খুইয়ে ফেলে।
মেলায় একই গ্রামের দুটি মেয়ের দেখা হলে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে মড়াকান্না কাঁদতে হয়। সেই হল প্রথা। নইলে মনে হবে, সে মেয়ে স্বামীর কাছে বড় সুখে আছে। মেয়েদের নাকি এর চেয়ে বেশি লজ্জা অন্য কিছুতেই নেই।
আরণ্যক প্রকৃতি দেখানোর ছলে মনুষ্যপ্রকৃতি দেখায়।
আজ লেখকের ১২৫তম জন্মদিন।
লেখা – মৃদুল শ্রীমানী