জন্মদিনে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন: চার্লস ডারউইন
বাইবেলে বলা ছিল…. ঈশ্বর ইচ্ছা করিলেন, আলো হউক, তাহাতে আলো হইল।… এইভাবে তাবৎ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের এক একটি জিনিস এক এক দিন সৃষ্টি হইল। সব কিছু সৃষ্টির পরে পরমপিতা ইচ্ছিলেন, মানব হউক। তাহাতে প্রথম মানব আদম জন্মিল। তাহার পর ঈশ্বর রবিবার বিশ্রাম করিলেন।….
বাইবেলের গল্প এইরকম। প্রথম মানব আদমকে ঈশ্বর সৃষ্টি করলেও প্রথম মানবী ইভ জন্মালেন আদমের পাঁজরের হাড় থেকে।
বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড ও প্রাণজগতের উদ্ভবের কথা হিন্দুর পুরাণেও আছে। সেখানে সপ্তদ্বীপা বসুন্ধরার কথা আছে। আছে সাপের মাথায় পৃথিবীর অবস্থানের কথা। জলমধ্যে শয়ান বিষ্ণু এবং প্রজাপতিগণের কথাও বলা হয়েছে। দক্ষ এবং কশ্যপ এই রকম প্রজাপতি। দ্বাদশ আদিত্যের কথা বলা আছে, অষ্ট বসুর কথা বলা আছে, সপ্তর্ষিগণ, দেব দানব দৈত্য, বৈবস্বত,স্বায়ম্ভূব সহ অনেকগুলি মনু, আর শ্বেতবরাহ প্রভৃতি অনেক গুলি কল্প মিলিয়ে হিন্দুর পুরাণ খুব রঙিন।
একই ভাবে, প্রাচীন সভ্যতার ভিন্ন ভিন্ন ধর্মবিশ্বাস গুলিও যথেষ্ট উর্বর কল্পনাশক্তির পরিচয়বাহী।
কিন্তু গোল বাধল একের পর এক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আর কিছু মানুষের তীব্র অনুসন্ধিৎসা আর জিজ্ঞাসার কারণে। জিজ্ঞাসাদীর্ণ হৃদয়ে তাঁরা নানাবিধ প্রশ্ন তুললেন, অভিযানে বেরোলেন, তথ্যসংগ্রহ করলেন, ও সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণে ব্রতী হলেন।
চার্লস ডারউইন ( ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৮০৯ – ১৯ এপ্রিল, ১৮৮২) ছিলেন একজন প্রকৃতি পর্যবেক্ষক ও ভূতত্ত্ববিদ। জন্মপরিচয়ে তিনি ইংরেজ। ১৮৫৯ সালের ২৪ নভেম্বরে পঞ্চাশ বছর বয়সে তিনি একটি বই প্রকাশ করলেন। বইটির নাম, “অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস বাই মিনস অফ ন্যাচারাল সিলেকশন অর দ্য প্রিজারভেশন অফ ফেভারড রেসেস ইন দ্য স্ট্রাগল ফর লাইফ”। সেকালে বইয়ের নাম অমন লম্বা লম্বা হত। ছোটো করে ওই বইকে পণ্ডিতেরা ডাকেন “অরিজিন অফ স্পিসিস” বলে।
এই বই যেন সেইসব দুনিয়া বদলে দেওয়া বইয়ের মতো। নিকোলাস কোপার্নিকাসের দ্য রেভলিউশনিবাস অরবিয়াম কোয়েলেসটিয়াম (১৫৪৩), ও আইজ্যাক নিউটনের ফিলজফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথেমেটিকা ( ১৬৮৭) বইয়ের সাথেই যেন তুলনীয় এই বইটির ভূমিকা।
বাবা চেয়েছিলেন ছেলে হোন চিকিৎসক। সে ব্যাপারে আগ্রহ ছিল না ছেলের। তাঁর চেষ্টা গেল ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হতে। পাদ্রি হবেন। সেটাও জমে নি। পোকামাকড় নিয়ে পড়াশুনা করতেন। তারপর নেশা জাগল ভূতত্ত্ব নিয়ে গবেষণায়।
তারিখটা ছিল ১৮৩১ সালের ২৭ ডিসেম্বর। ব্রিটেনের প্লিমাউথ বন্দর থেকে দ্বিতীয় দফার সমুদ্রযাত্রা শুরু করল বিখ্যাত জাহাজ এইচএমএস বীগল। জাহাজের ক্যাপটেন ছিলেন রবার্ট ফিটজ়রয়। তিনি বছর বাইশের তরুণ চার্লস ডারউইনকে কাছে টেনে নিলেন। ঈশ্বরবিশ্বাসী ডারউইন চললেন অগাধ সমুদ্রে। বীগল জাহাজের ঘোষিত লক্ষ ও কাজ ছিল অতলান্তিক মহাসাগরে ঘুরে বেড়িয়ে জলবিষয়ক সার্ভে করা। আর দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ অংশ ঘুরে অস্ট্রেলিয়া ছুঁয়ে ফেরা।
এইসময় ডারউইন ভূতত্ত্বের আগ্রহী গবেষক এবং সেই বিষয়ে সন্দর্ভ তৈরিতে মনোযোগী। বীগল জাহাজে চড়ে আর্জেন্টিনা গিয়ে তিনি বিলুপ্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জীবাশ্মের একটি বড়োসড়ো সংগ্রহ দেখতে পেলেন। এখানে তিনি বেশ কিছু উদ্ভিদ ও প্রাণীর নমুনা সংগ্রহ করলেন।