গুচ্ছকবিতায় প্রশান্ত মাইতি
১. সত্যি কি দেখা হবে
সন্ধ্যার পথে যেভাবে রাত্রি নামে
ঠিক সেভাবেই বুঝি চলে যাওয়ার
পথে ভুলে গেলে সাক্ষাৎ হীন
বুকের ভেতর যে বন্ধুত্ব গুড়গুড়
করছিল,তা মনখারাপের বৃষ্টি হয়ে
নেমেছে মিশে কাদাজলে
খুব চেনা আর খুব কাছের
ভাবনারা পড়ে রয়েছে অসহায় হয়ে
সত্যিকি দেখা হবে আর,
নাকি সে বাসনাটুকু ও হারিয়ে
যাবে কোনো গোধূলি সন্ধ্যায়
তোমার সেই মায়াবী মুখ আজও
ভাসে কল্পনার বিস্তর ক্যানভাসে
শরীরের রোমঘাস শির দাঁড়া সোজা
করে দাঁড়ায় তোমার আতর ঘ্রাণে
সত্যি কি দেখা হবে দুজনার
কথা হবে শিরশিরে অন্ধকারে
কফি কাপে চুমুক দিতে দিতে ।।
২. সে কারণেই
বহুদিন পর বহু পথ ঘুরে
অনেক খুঁজে তোমার কাছে এলাম
অনেক খুঁজেছি
কত গ্রাম,বাজার,মেলা প্রাঙ্গণ
কত হতাশা,যন্ত্রনা,এমন কি
অশ্রুসিক্ত কান্নার ভেতর ও….
তোমাকে ভালোবাসি বলেই খুঁজি
রাত কবিতার প্রতি লাইনে
সে কারণেই তোমাকে খুঁজি অবিরাম ।
৩. কোলাজে তুমি
বসন্তের উষ্ণ বিকেল বাতাসের
শূন্য ক্যানভাসের অনেক খানি জুড়ে
এঁকে দিলাম কোলাজ তোমার ছবি
আকাশ বেয়ে নামা মেঘ বৃষ্টি
ছুঁয়ে দেখো ঠোঁটে ঠোঁট রেখে
ভালোবাসার প্রতি তার ব্যাকুলতা
বসন্তের উষ্ণতায় তোমার হৃদয় ছোঁয়া
কোমল আঙিনায় দেখো কেমন স্বগৌরবে
ফুটে আছে শতদল সুবাসিত উঠোনে ।।
৪. সংশয়
একের পর এক হাসপাতালের
গন্ধ ওষুধের হাত ধরে নামে
অসুখের গল্প গাঁথা
দিনরাত বয়ে চলে শুধু কোলাহল
রোগীদের আনাগোনা,সংশয়,
স্বর্গরথের অবিরাম ব্যস্ততা
হিমসিম ডাক্তার আবহমানকাল শুধুই
স্পর্শ করে শিরা উপশিরা
নিঃশব্দে কেটে যায় রাত দিন
ব্যাক্তিগত সম্পর্কের ক্ষত জোরালো হয়
নৈঃশব্দিক একাকিত্বে ।।
৫. সাধনা
হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছি চাতক
দৃষ্টে দিকবিদিক একটা ভালোবাসা
সেই কৈশোর থেকে যৌবন
কত বসন্ত পেরিয়েছি ঝরা
পাতার হাত ধরে ধুলোয় মিশে
চেয়েছি তোমায় মনের সিংহাসনে বসাতে
কবিতার মালায় সাজিয়ে,রকমারি
আনন্দের আলোয় আলোয় ভরিয়ে
প্রেমের ফুলে চাই অর্ঘাঞ্জলি দিতে
সেই চোখ,সেই অকৃত্রিম হাসি
সেই তোমার অহর্নিশ মধুর কথা
বারংবার টোকা মারে সাধনায়
মন ছুঁয়ে যায় ভাবনার একাকিত্বে
শূন্যতা জ্বলে ছাই জলছবির আগুনে ।।
৬. স্রোত প্রেম
যে অবিরাম স্রোত প্রেম বইছে
বুকের ভেতর নিরন্তর
দেখতে পাচ্ছো তাকে ..?
জানি পাবেনা দেখতে তাকে
তুমি রয়েছো পড়ে অদেখার আবরণ
আমি জানি এ স্রোতের ব্যাকুলতা
যেভাবে আছরে পড়ে নিঃসঙ্গ
পথিকের নিদারুণ হাহাকার,
প্রেমহীন যুবকের আর্তচিৎকার
ঠিক সেভাবেই বয়ে চলেছি স্রোতে
সাঁতার নাজানা হাবুডুবু শিশুটির মতো ।।
৭. কর্পূর
কর্পূর যেমন উবে যায় মুক্তিতে
আবার জ্বলে ছাই হয় হঠাৎ
তেমনি তোমার ভালোবাসাও উবেছিল
ভুল বোঝার মুক্ত বাতাসে,আর
ছাই হয়েছিল অন্য শিখায় জ্বলে
আমাকে ছুঁড়লে সেই ছাইভস্ম বাতাসে ।।
৮. নেভাতে পারোনি আজও
কেনো ভাসালে আমায় অথৈ নদীজলে
আমায় ভাসিয়ে খুঁজছো দিব্যি
বালি হাতরে ঝিনুক মুক্ত
হতাশায় মন মাথা কুঁড়ে অন্ধকারে
দেহ কাতরায় শুয়ে দুঃখ শোকে
বুক ভরা স্মৃতি ভিড় করে
একে একে একাকিত্বের চৌকাঠে
গুমরে মরি তুষের আগুনে জ্বলে
যে আগুন তুমি নেভাতে পারনি আজও ।।
৯. করোনা
উল্লসিত কুকুরেরা আজ দূরত্বে বসে
থেমেছে চিৎকার মাইতির চায়ের ঠেকে
পাড়াগোটা নিস্তব্দ শূন্যতায় মোড়া
রাস্তার দুধারের সবুজ দাঁড়িয়ে ঠায়
আকাশের রামধনু রঙ ফিকে হয়ে
ঝরে পড়ছে কৃষ্ণচূড়ার গা বেয়ে
শান্ত নদী ঠিক যেন হেঁটে চলেছে
বিপদের সংকেত বুঝে
বড্ড ইচ্ছে করে বাইরে বেরিয়ে
ঝগড়া শুনি গাছেদের,পাখিদের
ইচ্ছে করে বসন্তের রং মেখে
নির্ভয়ে ঘুরি পাড়াময় পাখির মতো
উচ্ছসিত হাসি মনে করোনা ভুলে ।।