• Uncategorized
  • 0

গল্পকথায় হিমাংশু দাস

কষ্ট

ছেলে- মা জানো “ওরা” আমায় খুব মেরেছে…
মা- কেন বাবা? কারা তোকে এই নৃশংস ভাবে মারল? তাদের কী কোন মায়া দয়া নেই??
ছেলে- ওরা আমায় তুলে নিয়ে গিয়ে বুকে,পেটে,কিল,চর বড় বড় শক্ত বুটে করে আমার পায়ে লাথি মারলো,
জানো মা? আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে….
মা- একটু জল খা বাবা, দাঁড়া দেখি ঘরে জল আছে কীনা?
ছেলে- জল খেয়ে, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে “মা”..
মা- ওরা “কারা” বাবা?? আর তুই কি করেছিলিস এমন যাতে করে তোকে এমন ভাবে মারল??? ওরা কি জানেনা যে তুই…….. ওরা “কারা” বাবা, বল??
ছেলে- ওদের মাথায়  টুপি ছিল…, গায়ে ছিল খাঁকি রঙের পোশাক…..,আরে কোমরে ছিল একটা কালো রঙের ব্যাগ…, আর পায়ে ছিল শক্ত রকমের বুট…, যেটা দিয়ে আমায় জোরে জোরে লাথি মেরেছে ..।।
আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে মা…. মুখের কোন দিয়ে রক্তের ফোঁটা ঝরে পড়ছে…
মা- বুঝতে বাকি রইল না কারা তাঁর ছেলে কে মেরেছে,
তুই কি করেছিলিস বাবা??
ছেলে- ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে..আর বলে, আমার খুব খিদে লেগেছিল,ওই ভীমা কাকার দোকানে আছে না.. ওইখানে আমি একটা পাউরুটি চেয়েছিলাম.. ওরা দিল না আমায় তাই নিয়ে নিলাম, তারপর ভীমা কাকা চোর! চোর! বলে চেঁচিয়ে উঠলো..ব্যাস তারপর আমায় খুব মারতে লাগলো ওরা… আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে মা…।
আকাশের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে আর যন্ত্রণায় কাতর ছেলের দিকে তাকিয়ে, মায়ের চোখ দিয়ে তখন অগ্নি খন্ড রূপান্তরিত হয়েছে অশ্রু-জলে আর তা কল কল করে বয়ে চলেছে নদীর স্রোতের মতো, তার মাথায় তখন বিভিন্ন রকমের চিন্তা ঘুরতে লাগে,কী দোষ ছিল তাঁর?? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে…. তারপর বলতে লাগলো স্বামী অকালে ছেড়ে চলে গেল কিন্তু তার দানগুলো রেখে গেলো, তখনও কষ্ট হয়নি।
তারপর বেশতো সুখেই ছিলাম এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে, টিউশনি করে, সেলাই করে ,লোকের বাচ্চা কে আগলে রেখে, দিব্যি দিন কেটে যাচ্ছিল। মেয়েটা বড় হচ্ছিল, সে ডাক্তার হতে চেয়েছিল কিন্তু গরিবদের ইচ্ছা রাখতে নেই তাই তার ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারিনি কিন্তু তাতেও মেয়ে টা থেমে থাকিনি সে নিজেই একটা চাকরি জুটিয়ে নিয়েছিল একটা বেসরকারি কোম্পানিতে, আর বলেছিল “মা, আমার স্বপ্ন নাইবা পূরণ হলো তোমার স্বপ্নগুলো পূরণ করব” তার চোখে অনেক ইচ্ছা ছিল কিন্তু কী দোষ ছিল তার, ওই নরপিশাচ গুলো রাতের আলো আঁধারিতে খুবলে খুবলে খেলো তার শরীরটাকে, নির্মম ভাবে অত্যাচার চালালো তার শরীরের উপর, তাতেও তারা থেমে থাকল না ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেল নর্দমার পাশে তার দেহটাকে যখন তার কাতর আর্তনাদ শুনে কিছু লোক ছুটে এল, আর চিনতে পারল সে তাদের পাড়ার মেয়ে তখন খবর দিল আমায়, আমি আমার ছেলেটাকে  নিয়ে ছুটলাম হাসপাতলে, কিন্তু হাসপাতাল তাকে ভর্তি নিল না বলল ‘এটা পুলিশ কেস তাই আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারব না যতক্ষণ না পুলিশ কিছু বলছে’ তারপর আমি এক থানা থেকে ছুটলাম আরেক থানা কেউ ব্যবস্থা নিতে চাইল না, কেটে গেল এক ঘন্টা এক থানা থেকে লোক এলো কিছু, ততক্ষণে আমার বাচ্চা মেয়েটা চলে গেছেন না ফেরার দেশে, ডাক্তার যখন বলল “সে আর নেই” আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, তারপর তার শরীরটাকে টাকে নিয়ে কাটাছেঁড়া হল, কাঁটাছেঁড়ার পর জানালো তাকে নাকি ধর্ষণ করা হয়েছিল।
একদিন আমার ছেলেটা বলেছিল দিদির মত তুমিও চলে যাবে নাতো আমাকে ছেড়ে তার কথা আমি রাখতে পারিনি আমি কাজে বেরিয়ে ছিলাম, এসে দেখি তার  প্রচন্ড জ্বর কিন্তু আমার সাধ্য ছিল না তাকে ভাল হসপিটালে ভর্তি করার তাই সময়টা একটু বেশি লেগে গেছিল ততক্ষণে সে তার স্মৃতিশক্তি হারিয়েছে, কাউকে চিনতে পারছে না সে, এককথায় সে উন্মাদ…
এসব ভাবতে ভাবতে চোখের জল আরো বেড়ে গেল যখন আবার সে তার ছেলেটার দিকে তাকালো…. আবারও বলতে লাগলো তবে তার বলার মধ্যে ছিল এবার প্রতিবাদ,
আমার ছোট্ট মেয়েটা সেই নরপিশাচদের অত্যাচার আর যন্ত্রণা সহ্য করতে পারল না চলে গেল অকালে তখন কোথায় গিয়েছিল এই পুলিশি সক্রিয়তা??
কী দোষ ছিল তার ছেলের? যে শুধুমাত্র পেটের দায়ে একটা পাউরুটি নিয়েছিল…. তাই বলে তাকে এই ভাবে মারতে হবে।
আসলে সক্রিয়তা কেবলমাত্র দেখানো যায় দুর্বলতারই ক্ষেত্রে, ক্ষমতা থাকলে সেই দিন আমার মেয়ের ধর্ষকদের ধরে দেখাতে পারত… পারেনি তারা পারেনি..
ছেলে- “মা আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে”।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।