• Uncategorized
  • 0

প্রবন্ধ – শ্রুতি ঘোষ

বিদ্যাসাগর২০০/বিশেষ সংখ্যা

নারী মুক্তির সিংহ পুরুষ 

“বীরসিংহের সিংহ শিশু বিদ্যাসাগর বীর” ।ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে বিদ্যাসাগর হতে যতটা বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছিল ঈশ্বরচন্দ্র কে, তার থেকেও বেশি লড়াই করতে হয়েছিল বীরসিংহের প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মে সিংহ সুলভ দাপটে সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার গুলোকে দুমড়ে মুচড়ে দূর করে দিতে ।1820 সালের 26 শে সেপ্টেম্বর জন্ম। জন্ম সালের সময়ের দিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যায় সমাজের সর্বস্তরের নারীদের পদে পদে কিভাবে বেঁধে রাখা হয়েছিল ।তৎকালীন পন্ডিতেরা বলতেন “মেয়েদের কখনোই ঘরের বাইরে বেরোতে দেওয়া উচিত নয়, তারা বাইরে বেরোলে সমাজ উচ্ছন্নে যাবে।আর লেখা পড়া শিখলে সর্বনাশ হবে।”শুধু মুখে বলাই নয়, প্রচার করতে লাগলেন  এটাই নাকি শাস্ত্রের বচন।শাস্ত্র লঙ্ঘিত হবে এই ভয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলেও সেই স্কুলে পড়তে আসতে চাইলো না মেয়েরা।রাত জেগে বিদ্যাসাগর বার করলেন শাস্ত্রের শ্লোক, “কন্যাপ্যেবং পালনীয়া শিক্ষণীয়াতিযত্নতঃ”।শাস্ত্র শ্লোক ভয় কিছুটা হলেও ভয় ঘোচালো নারী মনের।উৎসাহ পেলেন বিদ্যাসাগর ।নারীদের শিক্ষাঙ্গনে আনতে পেরে খুশি হলেন তিনি।কারণ তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, “নারীশিক্ষা ছাড়া সমাজ উন্নত হতে পারে না ।” সমাজের নারীদের প্রতি এই শ্রদ্ধার ভাবনা তিনি পেয়েছিলেন মা ভগবতী দেবীর শিক্ষা থেকে।তাই নারী মনের দুঃখে প্রাণ কাঁদত তার।বুঝেছিলেন দুঃখ দূর করার জন্য দরকার শিক্ষা ।তাঁরই উদ্যোগে বেথুন সাহেবের উদ্যোগে স্থাপিত “হিন্দু ফিমেল স্কুল ” যা পরবর্তী কালে বেথুন স্কুল নামে পরিচিত হয় পূর্ণমাত্রা পায়।বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই স্কুলের জন্য ছাত্রী জোগাড় করেন তিনি ।নারী শিক্ষা শহরের গন্ডীর মধ্যে  আটকে না রেখে তা ছড়িয়ে দিতে লাগলেন গ্রামে গ্রামে ।1857 সালের শুরু থেকেই গ্রামে গ্রামে বালিকা বিদ্যালয় তৈরির কাজে হাত দিলেন তিনি।ছ-সাত মাসের মধ্যে হুগলি, বর্ধমান, নদিয়া, মেদিনীপুরে ম
মোট  35 টি বালিকা বিদ্যালয় তাঁর প্রচেষ্টার ফলে গড়ে ওঠে।আজকের এই সময়ে দাঁড়িয়ে দেশের সরকারকে নারীশিক্ষার প্রসারে যখন ভাবতে হচ্ছে “বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও ” প্রকল্পের কথা বা রাজ্যের সরকারকে জোর দিতে হচ্ছে “কন্যাশ্রী”  প্রকল্পের কথা তাহলে বিদ্যাসাগরের সময়ে নারীদের শিক্ষাঙ্গনে নিয়ে আসা কতটা দূরহ ছিল তা সহজেই অনুমেয়।
একে তো মেয়েদের বাড়ি থেকে স্কুলে  আনাই ছিল জটিল কাজ।তার উপর তৈরী হলো আর এক জটিল পরিস্থিতির । বিশ্বযুদ্ধের কারণে সরকারী অনুদান বন্ধ হয়ে গেল বিদ্যালয়গুলিতে।মহা বিপদে পড়লেন বিদ্যাসাগর ।স্মরণ করলেন পিতা ঠাকুরদাসের কথা “বিপদে স্থিতধী হতে হয়।” ভাবনাচিন্তা করে গড়ে তুললেন ” নারীশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভান্ডার “। এই প্রতিষ্ঠানে নিজের সর্বস্ব দিলেন।দুয়ারে দুয়ারে ঘুরলেন সাহায্যের জন্য ।সেদিন যদি নারী শিক্ষা প্রসারে এতটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ না হতেন “বীরসিংহের সিংহ শিশু” তাহলে হয়তো চন্দ্রযান 2 এর মূল কান্ডারী দেশের মেয়েরা হতে পারতো না।
যেখানে শাস্ত্রের অপব্যাখ্যা করে নারী জীবনকে কুক্ষিগত করে তুলতে চেয়েছেন তৎকালীন সমাজপতিরা, গর্জে উঠেছেন বিদ্যাসাগর ।তারই ফলশ্রুতিতে দুঃখ দুর্দশা ঘুচাতে এগিয়ে এলেন বিধবাদের।1856 সালে তাঁর অনমনীয় মনোভাবের জন্যই পাস হলো বিধবাবিবাহ বিল।নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখলো বাল্য বিধবরা।
দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা যতটা সম্মান পেয়েছেন ইতিহাসের পাতায় নারী মুক্তির এই মহান পুরুষ তা পান নি।তাই দ্বিশতবর্ষ জন্ম দিবসে সময় এসেছে বিদ্যাসাগরের পুনর্মূল্যায়নের।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *