কবিতায় সুশোভন কাঞ্জিলাল
নোলক পরা নাকে
আমি কালো বলেই কি এমনটা হলো আমার সাথে? কালোদের সম্মান হয় না?
আমি কালো বলেই কি ভালো না? তাই কি আমি বিশ্রী? তাই কি আমি নিচু গোত্রের জীব?
কিন্তু কালো তো আমি সেচ্ছায় না, হয়তো আমার মা আদিবাসী বলে আমিও কালো
আমার বাবা কিন্তু বলতো আমার মুখটা খুব সুন্দর, আমিও নাকি খুব সুন্দর
আমার বাবা কিন্তু আদিবাসী নয়, তোমাদেরি মতন শহুরে শিক্ষিত মানুষ
তাহলে শহরে ওরকমও চোখ পাওয়া যায় যা অন্ধ নিস্ঠুর বর্ণবাদী নয়?
আজ আর মায়ের ওপর রাগ নেই, আফসোস নেই শরীরে বওয়া আদিবাসী রোক্তেরও
মনে কস্ট পাচ্ছি এটা ভেবে যে তুমি চিরকাল আমায় মিথ্যে বলেছো বাবা?
তুমিও বাকি শহুরে বাবুদের মতন মিথ্যেবাদী, কপট তোমারো আশ্বাস?
আজ মনে হয় তুমি আসল অপরাধী! তোমারি দোষ শহর ছেড়ে জঙ্গলে আসা
তুমি মন ভোলাতে গিয়ে আমাদের মনেও শহুরে হওয়ার অভিলাষ জাগিয়েছো
যেমন দাদাকে বানিয়েছ খাঁটি শহুরে! আচ্ছা ও কি তোমার মতন দেখতে বলে?
বড় সাধ হয় যদি তুমিও বাবা এই আদিম মাটির কালো মানুষই হতে
মিথ্যে মায়ার টান ভুলে আমরাও মেতে থাকতাম তোমার মদোলের ছন্দে
বাঁশির সুরে তোমার কালো মেয়েও আনন্দে নাচতো দোপাটি ফুলের পেখম মেলে
আমার কালো মা তোমার মুখের পচা মহুয়ার গন্ধে আরো সুখ পেত
দাদা স্বপ্নের পেছনে না দৌড়ে শিকার করে আনতো বুনো দাঁতাল শূকর
বাবা তখন হয়তো তুমি স্বপ্ন দেখাতে না যে আমায় বিয়ে করবে কোন এক রাজপুত্র
মনে আছে বাবা আমার খ্যাদা নাকের জন্য আমায় সবাই বুচি বলে ডাকতো
আমি কাঁদতাম বলে তুমি বলতে যে যাদের নাক উঁচু আর বড় তারা আদতে সার্থপর
প্রকৃতি থেকে তারা অনেকটা নিস্বাস কেড়ে নেয় কিন্তু আমি উদার বলে আমি খেদি
দাদা যখন ভাইফোঁটায় আমার জন্য নাকের নোলক এনে দিল আমার মজা ওড়াতে
তুমি গিয়ে আমার নাক ফুটিয়ে নিয়ে এলে, নিজের হাতে পরালে সেই সোনার নোলক
সবাইকে দেখিয়ে বললে যে আমি কোনো মোড়লের বৌ হবো না, হবো শহরের মেম
আমি খুব বোকা তাই না বাবা? ওগুলো তোমার শান্তনা ছিলো বুঝিনি
পরিবারে কালো মেয়ের দুঃখ তুমি বুঝতে, বিশেষ করে তার দাদা যখন ফর্শা
পরী বানিয়ে ছিলে তাই রূপকথার ডানা মেলে বসতে গেছিলাম এক রাজপুত্রের ডালে
তার কি নিঠুর পরিনতি দেখো বাবা, কি করলো তোমার শহুরে রাজার ছেলেরা
দাদার নোলক পরা আমার নাকটা মাটিতে পরে থরথর করে কাঁপছে দেখো
তোমার আদরের মেয়ে সূর্পনখার নাক কাটা গেলো আজ সভ্য সমাজের হাতে
বড্ড কস্ট হচ্ছে বাবা নিস্বাস নিতে আর অপমানে সারা শরীর আমার রক্তে লাল
আমি কুৎসিত ছিলাম? কিন্ত এখন তো অসম্পুর্ন প্রতিবন্ধী এক নিপীড়িত নারী
দাদা পারলে এর প্রতিশোধ নিও যদি নিজের বুচি বোনের জন্য নাও হয়
তাহলে সম্মান রেখো তোমার দাওয়া সোনার নোলোকের যা আজ ধরাশায়ী
বাবা আমি আসছি তোমার কাছে, মাদল বাজাও না একবার প্রাণ ভরে শুনি
যাতে বঞ্চনার প্রতিবাদে আমার আত্মহননের আর্তনাদ ছাপিয়ে যায় আমার অস্তিত্ব..