কবিতা লেখার সূত্রপাত ১৯৯৩ সালে। প্রথম ছাপার অক্ষরে লেখার প্রাদুর্ভাব ঘটে প্রভাত চৌধুরী সম্পাদিত 'কবিতা পাক্ষিক'এ। এরপর প্রসূন ভৌমিকের 'বিজল্প' তে প্রায় নিয়মিত লেখালেখি। ক্রমে 'দেশ' 'রক্তমাংস' 'এই সহস্রধারা' 'বিভাব' এইসব নানা পত্রিকায় কবিতা লিখেছি। একটাই বই। ২০০৬ সালে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত 'অবিবাহ লেখা ছিল'।
উলুখাগড়া
এলো ভোর, কুয়াশায় ভিজে গেছে সাইকেল।
ইঁদুর যে সর্বভুক সর্বস্ব খুবলে নেয়
এ তথ্য জেনেছি রাত্তিরে। সেই মুখ
পতনউন্মুখ কোনোদিন কোথাও ছিলোনা
পথভ্রষ্ট কুকুরের মতো রোঁয়া ওঠা ঘা নিয়ে
ঘুরেছি স্পর্শলোভে বারবার; ওগো মিলনেই
সব সুখ জেনে তবু বিরহে রেখেছ নিশিদিন
এইসব বিফলতা গান হয়ে বাজে, এইমতো
পরিতাপহীন মেঘের প্রাচীর ঘেঁষে
ম্লান হয়ে আসে ওই প্রসূতিসদন
নতুন গুড়ের হাঁড়ি বয়ে আনছে
খাতড়ার বাস, লাল ধুলো, চল টুসু
নাইতে যাব কংসাবতীর ঘাটে
এই ঘর এই কচি লাউডগা সব ছেড়ে
চলে যেতে হবে! হাওয়াবদলের এই নীতি!
কাগজ নাই দলিল নাই সাবিনার বাপের কথা
টুসুমণি বুইলতে যাবেক হমার টুসু গাইতে যাবেক
কইলকাতার মাঠে
হৃদমাঝারে
এই সেই ধানক্ষেত ওপর দিয়ে এরোপ্লেন
উড়ে গেলে ওরা আজও হাঁ করে দেখে
আর এই জাড়কালে বেবাক বান্দোয়ান
সব শালা ন্যাংটা মায়ের ন্যাংটা ব্যাটা
ঘুনসিমাত্র সম্বল হইহই করে বেরিয়ে এয়েচে
ওপারে জ্বলছে কূপি মাজারের চারপাশে
ছেঁউড়িয়া গান ধরেছে “সবেমাত্র একটি খুঁটি”
এখানে নাইটির ওপর ওড়না ফেলে টাইমকলে
জল নিচ্ছে মাতাল ধনার বউ, কুচুক্কুরে ভটচায্যি
ঘরের দামড়া মেয়ে ভেগে গেছে বহুকাল
স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আয়রন ট্যাবলেট পেটে একটা আস্ত চাঁদ ভরে কুঁজো হয়ে বেরিয়ে আসছে
রাবেয়া খাতুন। কে কবে নিয়েছে কৃষিঋণ
দিদিরা বুঝিয়েছেন অপুষ্ট শিশুদের
খিচুড়ি-প্রণালী; এ গ্রামেও গল্প রটেছে
কাগজ আচে? কে কার ধম্মবাপ সে হিসেব
আচে? ‘বেঁধেছে এমনই ঘর’ যার কেন্দ্র-রাজ্য
এনার্সি মুহূর্তে উধাও, একদিন এ গ্রামেই
নেমে আসবেন অক্রুর, কলমী শাকের গায়ে
ছিটকে যাবে কান এঁটো হাসি, এই তো
সে ইন্দ্রিয়বোধ, তোমরা যে এই গ্রামে
মুততেও আসবে না এ গল্প ঝুলে আছে গাছে
ওগো সেদিনও এ জাড়কালে শাঁখ বাজবে
প্রতি ঘরে ঘরে,ঝড় আর কী প্রবল হাওয়া
আতঙ্কে বিইয়ে ফেলবে কালো গাই, নীল শাড়ি
টুসুমণি ছুটে যাবে আলপথ দিয়ে, পায়ে রক্ত
তখনই তো মাহেন্দ্রক্ষণ, সেজে উঠছে
ডিটেনশন ক্যাম্প, টুসু আমার পরব ছেড়ে
ক্যাম্পে যাবে, ওগো এ কি শুধু আঁশগন্ধ?
এ কি শুধু ফসলবিলাস!