• Uncategorized
  • 0

‘কফি পাহাড়ের রাজা’ সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে তুষ্টি ভট্টাচার্য (পর্ব – ২ ।। খন্ড – ৮)

কফি পাহাড়ের রাজা

দ্বিতীয় পর্ব:

৮)

চিক্কা বীরারাজা ক্রমশ বৃটিশদের বিরুদ্ধে লাগামছাড়া আক্রোশে ফুঁসে উঠল। আগেকার সমস্ত চুক্তি মানতে অস্বীকার করে বৃটিশদের সঙ্গে একপ্রকার পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া শুরু করলেন চিক্কা বীরারাজা। বৃটিশদের অধিকারে যে অঞ্চলগুলি ছিল এতদিন, সেখানে হামলা শুরু করলেন একে একে। দোর্দণ্ড প্রতাপ বৃটিশদের কোন কিছুই অজানা রইল না। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে তারা মাইসোরের প্রাসাদে চিক্কাকে তলব করলেন। চিক্কা এর বদলে কড়া ভাষায় জবাবদিহি দিলেন এই অভিযোগের। আর তাঁর ভাষা ছিল অস্ত্রের। ফলে কোরাগুর সঙ্গে চুক্তি রক্ষা করার দায় রইল না বৃটিশদের। ১৮৩২ সাল থেকে চিক্কা বৃটিশদের বিপক্ষে যাওয়া শুরু করেছিলেন। দুবছরের টালমাটাল অবস্থার পরে বৃটিশদের সংযমের বাঁধ ভেঙে গেল। ১৮৩৪ সালে প্রায় সাত হাজার সেনা নিয়ে বৃটিশরা যুদ্ধ ঘোষণা করল চিক্কার বিরুদ্ধে। ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল লিন্ডসের অধীনে সেনা জমায়েত শুরু হল। কিন্তু কোরাগুর দুর্ভেদ্য জঙ্গল আর ততধিক বিপদসংকুল পথঘাটের কারণে সেই সেনাবাহিনী সহজে কোরাগু আক্রমণ করতে পারেনি সেসময়ে। একসময়ে চারটি দলে ভাগ হয়ে সেনাবাহিনী কোরাগুতে প্রবেশ করল আর চারদিক থেকে মুদ্দুকেরি শহর ঘিরে ফেলল। কোরাবারাও ছাড়ার পাত্র নয়। বীরত্ব তাদের রক্তে। তাদের চোরাগোপ্তা আক্রমণে একের পর এক বৃটিশ সেনা নিহত হল, নয়ত পালিয়ে যেতে শুরু করল। বৃটিশ সেনার নর্থ রেজিমেন্ট, কর্নেল গিলবার্ট ওয়াঘের নেতৃত্বে কোরাগুর অভ্যন্তরে প্রবেশ করল। আর এপ্রিলে দুই দলের সম্মুখ সমর শুরু হল। সে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম! একের পর এক সেনা নিহত হয়ে চলেছে দুপক্ষের, চারিদিকে ভাঙচুর আর লণ্ডভণ্ড পরিস্থিতিতে কোরাগু জেরবার সেই সময়ে। কোরাগুর সেনাদলের নেতা তখন মাথাণ্ডা আপ্পাচু। এপ্রিলের তিন তারিখে, দুপুরবেলা কোরাগুর সোয়াম্বার পেট্টায় মুখোমুখি হল দুই দল। মাথাণ্ডা আপ্পাচু তখন কোরাগুর শ্রেষ্ঠ বীর। দীর্ঘদেহী এই নেতার অধীনে সাহসী ও পরাক্রমী সেনাদলও ছিল। আর সবথেকে বড় কথা, এই পাহাড়ি রাস্তার অন্দিসন্ধি তাদের মুখস্থ। চোরাগোপ্তা ও অতর্কিত আক্রমণে বৃটিশদের আরও দুই রেজিমেন্টও তখন দিশেহারা। বেশ কয়েকজন অফিসার সহ দুশো জন বৃটিশ সেনা অস্ত্রসমর্পন করে ফেলেছে এরই মধ্যে। কোরাবাদের জয় তখন শুধু কয়েকদিনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে হাসছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও যা হওয়ার ছিল তা হল না।
   এইখানে এসে থমকে গেল কুপিল্লা। তাহলে তো তাদের জয় ছিল অবধারিত। তারা কোনো অংশে কোনোদিনই কম নয়। হেরে যাওয়ার কারণের পিছনে কারুর ভয়, আশঙ্কা বা লোভ থাকতে পারে। কিন্তু সততা, নিষ্ঠা, দায়বদ্ধতা, সঙ্গে বুদ্ধি আর কর্মক্ষমতা থাকলে হেরে যাবে কেন কেউ? মনের জোর অবশ্যই লাগে সবার আগে। ওর এর সবটুকুই আছে বলে ওর স্থির বিশ্বাস। এই একক লড়াই তার শুধু প্রেমের জন্যই না, একটি সমাজের এক ঘুণ ধরা সিস্টেমের বিরুদ্ধে। প্রেম এক্ষেত্রে তার হাতিয়ার। তার লক্ষ্য। সামনে যত কষ্টই আসুক, সে হেরে যাবে না, পিছিয়ে পড়বে না এই লড়াই থেকে। রাত জেগে বইয়ের পাতায় চোখ রেখেছিল কুপিল্লা। বই তার সঙ্গেই ছিল। লেনিন অঘোরে ঘুমোচ্ছে। তার অপ্রশস্ত ঘরে একটেরে বিছানায়, মাটিতে শুয়ে আজ ওর ঘুম আসছে না। অভ্যেস বড় বালাই। সব সয়ে নিতে হবে। কাজ শিখতে হবে প্রথমেই। রোজগার বাড়লে, তারপর নিজের ডেরা, নিজের সংসার। কাল একফাঁকে বিদ্যাকে সব জানিয়ে আসতে হবে। ও বেচারি তো জানেই না যে এতকিছু করে ফেলল তার কুপিল্লা। ‘আর যাই হোক, তুই এবার আমায় ভীতু বলতে পারবি না কিছুতেই! দেখ কেমন সাহস করে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি আমি! শুধু তোর জন্যই রে…আমায় তাড়িয়ে দিস না, ভীতু বলিস না আর……’এসব কথা নিজের মনের মধ্যে বুড়বুড়ি কাটছিল কুপিল্লার। ঘুম আসছিল ধীরে। বিদ্যা কি শুনেছে ওর কথা?
  হয়ত এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম দেখে, কোরাগুর ব্যপক হারে ক্ষয়ক্ষতির বহর দেখে, চিক্কা বীরারাজেন্দ্র ভয় পেয়ে গেছিলেন। অথবা অন্য কোন কারণ ছিল। একান্ত কাপুরুষের মতো নিশ্চিত জয়ের মুখে দাঁড়িয়ে চিক্কা বীরারাজেন্দ্র বৃটিশদের রাজনৈতিক এজেন্ট, জেনারেল জেমস স্টুয়ার্ট ফ্রেজারের কাছে আত্মসমর্পন করলেন হঠাতই। সেসময়ে চিক্কা ঘোষণা করলেন, জনসাধারণের শুভ স্বার্থে, দেশের সুরক্ষার স্বার্থে তিনি বৃটিশদের অনুগত হয়ে থাকবেন। ৬ই এপ্রিল বৃটিশদের আরও দুই রেজিমেন্ট মুদ্দুকেরিতে প্রবেশ করল। কর্নেল লিন্ডসে মুদ্দুকেরি প্রাসাদে বৃটিশ পতাকা তুলে দিলেন। এই যুদ্ধে বৃটিশ সেনাদের ৯৩ জন নিহত ও ২০০ জন আহত হয়েছিল বলে জানা যায়। সরকারি ভাবে ১৮৩৪ সালের ২৪শে এপ্রিল চিক্কা বীরারাজেন্দ্র জেমস স্টুয়ার্ট ফ্রেজারের কাছে আত্মসমর্পন করলেন। চিক্কার ইচ্ছানুসারে কোরাগুতে তাঁকে থাকতে দেওয়া হয়নি সেসময়ে, রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে তাঁকে বেনারস পাঠিয়ে দেওয়া হল। আর আপ্পাচু হয়ে গেলেন চিরকালীন বীর, কোরাগুর পিতা।
  এই সবের মাঝে চিক্কা বীররাজারও এক সাংসারিক জীবন ছিল, যে জীবনের প্রতি তিনিও ছিলেন দায়বদ্ধ। দোদ্দা বীরারাজার মতো চিক্কাও ছিলেন এক প্রেমিক, এক পতি, এক পিতা। যে প্রেমিক-পতি-পিতা সত্তা, তাঁর নিষ্ঠুর ও হিংস্র ইমেজের নিচে চাপা পড়ে গেছিল। যেন মহাদেবাম্মার ইচ্ছের প্রতিফলন পড়েছিল তাঁর জীবনে। এক ইচ্ছে অপূর্ণ রয়ে গেল জীবন ফুরিয়ে আসার ফলে। আর সেই ইচ্ছের যেন নতুন করে গর্ভাধান হল চিক্কার রানীর ভেতরে। বলা ভাল দুজনের ভেতরেই সেই ইচ্ছে লালিত হচ্ছিল দীর্ঘকাল ধরে। এই বিদ্রোহের ফলে ইংরেজরা যখন পর্যদুস্ত, কোরাবাদের জয় আর ক’কদম দূরে অপেক্ষারত, সেই মুহূর্তে চিক্কা হঠাতই কেন আত্মসমর্পনের পথ নিলেন? এক লহমায় তাঁর মান, সম্মান ধুলোয় মিশে গেল। কোরাগুর কলঙ্ক তিনি, গদ্দার—এইসব বিক্ষোভমূলক কথাবার্তা চারিদিকে ছেয়ে গেছিল। তিনি কি শোনেননি সেসব? যাঁর নখদর্পনে ছিল রাজ্যের প্রতিটি স্তর, তাঁর কাছে অজানা কিছুই থাকার কথা নয়। কিন্তু মুখ বুজে সয়ে গেছেন সব। তাঁর কি অন্তর্দহন ছিল না? ক্ষোভ, অপমান, গ্লানি কি তাঁকে আচ্ছন্ন করেনি? সবকিছুর তীব্রতা একসঙ্গে সয়েছেন তিনি। সয়েছেন স্রেফ গৌরাম্মার জন্য। তাঁর একমাত্র কন্যা, যার জন্য আজ এই আত্মসমর্পনে তিনি বাধ্য হয়েছেন। বৃটিশদের বিপক্ষে গেলে কোনভাবেই গৌরাম্মাকে লন্ডনে পড়াশুনো করানো যাবে না। আর তাঁরা দুজনেই চান, তাঁদের মেয়ে যেন বিলেতে মানুষ হয়। শুধু এই পারিবারিক ইচ্ছের জন্য তিনি পুরো কোরাগুকে বৃটিশদের হাতে তুলে দিলেন। স্বাধীনতার মূল্যে নিজের কন্যার শিক্ষা কিনে নিলেন এককথায়। ইতিহাস চিক্কা বীরারাজেন্দ্রর নামে ছিছি করবে, কোরাগুর শেষ রাজা, যিনি নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছেন বৃটিশদের হাতে—এই মর্মে তাঁর নাম লেখা থাকবে সেখানে।
  বেনারসে গৃহবন্দির জীবন কাটাতে চলে গেলেন চিক্কা বীরারাজেন্দ্র সপরিবারে। দিন কাটছিল সেখানে একরকম নিস্তরঙ্গ ভাবে। গৌরাম্মার দিকে তাকিয়ে তাঁরা দুজন আবার বুক বাঁধছিলেন। এভাবেই কেটে গেল কয়েকটা বছর। শেষপর্যন্ত আপিল মঞ্জুর হল, মহারানী তলব করলেন তাঁদের। ১৮৫২ সালের মার্চে ভেলোরে চললেন চিক্কা গৌরাম্মাকে নিয়ে। সেখান থেকে পারি দিলেন বিদেশে। লন্ডন কোর্টে কোরাগুর সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার জন্য আপিল করলেন। মহারানী ভিক্টোরিয়া রাজাকে সমস্ত সম্পত্তি ফিরিয়ে দিলেন এবং রাজকীয় মর্যাদায় স্বাগত জানালেন। রানী ভিক্টোরিয়া গৌরাম্মাকে নিজের মেয়ের মতো আপ্যায়ন করে সাদরে কাছে টেনে নিলেন। গৌরাম্মা অবশ্য মেজর ড্রুমন্ড আর তাঁর স্ত্রীরও, যাঁরা তাঁদের সঙ্গে একই জাহাজে বিলেতে আসেন, তত্ত্বাবধানে রইলেন। বাকিংহাম প্যালেসে আর্চবিশপ ক্যান্টেরবেরি ৫ই জুলাই গৌরাম্মাকে ব্যাপটাইজড্‌ করলেন, রানী হলেন তাঁর গডমাদার ও তাঁর নাম নাম হল ভিক্টোরিয়া গৌরাম্মা। তখন গৌরাম্মার বয়স এগারো।
  পরের দিন বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙল কুপিল্লার। বাড়িতে যদিও ভোরে ওঠা অভ্যেস ছিল ওর। কিন্তু কাল রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি বলেই আজ দেরি হল। রোদ জানলা দিয়ে ঘরে এসে পড়েছে। লেনিন গ্যারেজে চলে গেছে। তাড়াতাড়ি হাত,মুখ ধুয়ে, স্নান সেরে নিল ও। গ্যারেজে লেনিনের কাছে গিয়ে প্রথমেই ক্ষমা চাইল এত দেরি করার জন্য। সে হাসল একগাল। বলল, ‘শোনো! আজ প্রথম দিন তো, তাই দেরি মাফ। কিন্তু কাল থেকে কাকভোরে উঠে কাজে লেগে পড়বে। আর যেহেতু তুমি ব্রাহ্মণ সন্তান, লেখাপড়া জান, তোমাকে তো আর মুখখারাপ করতে পারব না, নোংরা, ছেঁড়া পোশাকেও দেখতে চাইব না। এদিকে তো ভাঁড়ে মা ভবানী তোমার! তাই কিছু অ্যাডভান্স দিচ্ছি আজ। দোকানে গিয়ে প্রয়োজন মতো জামাকাপড়, গামছা, সাবান, তেল কিনে নিয়ে এস। আর দুবেলা যদি খেতে চাও আমার সঙ্গে, তবে নিজেদেরই কিছু চালেডালে ফুটিয়ে নিতে হবে। আবার কিনেও খেতে পার ইচ্ছে হলে। আর আমি কিন্তু মাংসাশী মানুষ। দারুর সঙ্গে মাংস না হলে আমার চলে না। না খেতে চাইলে না খাবে, কিন্তু ঘেন্নাটেন্না কর না বাপু!’ কৃতজ্ঞতায় চোখে জল চলে এল কুপিল্লার। কে এই লেনিন—সামান্য চেনা, ক্ষ্যাপাটে লোক, মদোমাতাল বলে ওকে তেমন সুনজরে দেখেনি কোনদিন। তবু আজ ওরই কৃপায় কুপিল্লার অন্ন জুটবে। অনেক কষ্টে আবেগ সামলে ও বলতে পারল, ‘কিন্তু আমি তো কাজ জানি না কিছু। পারব তো শিখতে? যদি না পারি, তোমার অন্ন ধ্বংস হবে শুধুশুধু’। এবার যেন জ্বলে উঠল লেনিন। ‘পারবে না মানে? ওই মেয়েটাকে ভালবাস বলেই তো বাড়ি ছেড়ে এসেছ! তো এখন কাজ না করলে তাকে খাওয়াবে কী? তোমার তো জাত গেছে, পুরুতগিরি করেও ভাত জোটাতে পারবে না। তবে? মন রেখ! ‘পারব না’, ‘পারি না’ বলে কিছু হয় না। মানুষ, হ্যাঁ একমাত্র মানুষই সব পারে। ইচ্ছে করলেই পারে’। সেই শুরু কুপিল্লার আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভের সংগ্রামের। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য যখন হাতে রেঞ্জ ধরিয়ে দিল লেনিন, তখন কুপিল্লা বুঝেছিল, এই ঘি, মাখন খাওয়া শরীরের নরম হাত থেকে ফুল আর চন্দনের গন্ধ সম্পূর্ণ রূপে মুছে ফেলতে হবে ওর। যেদিন বিদ্যার হাত ধরবে সেদিন যেন শক্ত হাতে ওর হাত ধরতে পারে। বিকেলে বিদ্যার সঙ্গে দেখা করে এল ও। বিদ্যা তো সব শুনে স্তম্ভিত। স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি বোধহয় যে, কুপিল্লা শুধু ওর জন্যই বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে পারবে! খুশি, আনন্দে, ভয়ে, শঙ্কায় একমুখ হাসি আর চোখে জল নিয়ে বিদায় জানাল কুপিল্লাকে সেদিন। যাওয়ার আগে অবশ্য বলেছিল কুপিল্লাকে ছুঁয়ে—আর কখনও ভীতু বলব না তোমাকে। তুমি আমার বীর কুপিল্লা। আমার রাজা!
  এক বুক স্বপ্ন আর আশা নিয়ে কুপিল্লা সেদিন ফিরেছিল। চোখে লেগেছিল স্থির প্রতিজ্ঞা আর জেদ। ঘরে ফিরে, হ্যাঁ, এখন এটাই তার ঘর, তার আর লেনিনের যৌথ খামার, প্রথমেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছিল। তার ব্রাহ্মণ পরিচয় মুছে দিতে হবে এবার। পৈতে খুলে ফেলল সবার আগে। আর তারপর কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলল তার টিকি। সেই থেকে কুপিল্লার ব্রাহ্মণ পরিচয় মুছে গেল…

ক্রমশ….

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।