“আমি ও রবীন্দ্রনাথ” বিশেষ সংখ্যায় তমাল চক্রবর্ত্তী
নতুন জন্ম
লকডাউন এর দুপুর। স্তব্ধ শহরে মাঝে ফাঁকা একা একা ফিরেছে সবজিওয়ালা বিকাশ। কিছুদিন আগেই এই এলাকাটা রেড জোন ঘোষণা হয়েছে তাই আজকে সবজি অধিকাংশই বিক্রি হয়নি। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে চারজনের সংসার; অর্থ কিভাবে জোগাড় করবে সে জানে না।
সামনের দিনগুলো যেন ক্রমশ অন্ধকার হয়ে আসছে । বহুদিন যেতে পারেনি গ্রামে। তার বৃদ্ধ বাবার কি করে যে চলছে সে জানে না! এই কষ্টে মনটা যখন তার ছটফট করছে, তখন পাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসছে রবীন্দ্রসংগীত
“দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে ..”
কবিগুরুর গান শুনতে তার সবদিন ভালো লাগে। ক্লাস এইট অবধি টেনেটুনে পাস করা মানুষ সে তাই অর্থ না বুঝলেও দাঁড়িয়ে পরে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সে বুঝলে আজ পঁচিশে বৈশাখ। কি জানি এটা শুনেই তার মনটা কেমন ভালো হয়ে গেল। সে দেখলো রাস্তার ধারে বসে আছে এক বৃদ্ধ। নোংরা কাপড়, রুক্ষ সূক্ষ্ম প্রায় কঙ্কালসার একটা শরীর। নির্বিকার হয়ে রাস্তায় বসে আছে। এই মানুষটাকে দেখে বিকাশের হঠাৎ মনে হলো যেন তার বাবা বসে আছে ! গ্রাম থেকে এসে তার মুখোমুখি ! নিজের টাকা নেই , কালকে কি খাবে সে জানে না ! কিন্তু বেঁচে থাকা সবজির অনেকটা আর ঘরের জন্য অতি যত্নে রাখা কিছু চাল আর সামান্য বিক্রির টাকা তুলে দিল তার হাতে। বৃদ্ধর চোখেসেম এলো জল। বিকাশের মনে হলো যেন তার নতুন জন্ম হলো, নতুন পিতা পেলো সে। আর রবীন্দ্রসংগীতের অর্থ না জানা বিকাশের হৃদয়ে সবার অলক্ষ্যে প্রতিফলিত হলো কবিগুরু সেই অমোঘ বাণী “মানুষের মধ্যে দ্বিজত্ব আছে; মানুষ একবার জন্মায় গর্ভের মধ্যে, আবার জন্মায় মুক্ত পৃথিবীতে। মানুষের এক জন্ম আপনাকে নিয়ে, আর-এক জন্ম সকলকে নিয়ে”।