ফাহমিদা রিয়াজ(২৮জুলাই, ১৯৪৬-২১নভেম্বর ২০১৮)ছিলেন পাকিস্থানের একজন উর্দু লেখক, কবি, ফেমিনিস্ট ও হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্ট। ‘গোদাবরী’, ‘খত-এ-মারমুজ’এর মতো বেশ কিছু গ্রন্থ তিনি লিখেছিলেন। জালালুদ্দিন রুমির মসনবির অনুবাদ করেছিলেন পারসিয়ান থেকে উর্দুতে। বৃটিশ শাসিত ভারতের মিরাট শহরে তিনি জন্মেছিলেন। পিতার কর্মস্থল সিন্ধে তাঁর বেড়ে ওঠা, প্রথম জীবনে সিন্ধি ও উর্দু ভাষায় পড়াশুনোর পর শিখেছিলেন পারসিয়ান। পাকিস্থান রেডিওতে সংবাদ পরিবেশন করতেন তিনি পরবর্তী কালে। প্রথম বিয়ের পরে তিনি ইউকে’র বিবিসি রেডিও-য়(উর্দু)কাজ করতেন। পরে পাকিস্থানে ফিরে এসে জাফর আলী উজানকে, যিনি ছিলেন বামপন্থী রাজনৈতিক, বিবাহ করেন। সেই সময়ে জেনারেল জিয়াউল হকের জমানায় ফেমিনিজম এবং কিছু রাজনৈতিক উক্তি ও অশ্লীল লেখার জন্য তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে বিরুদ্ধ রাজনৈতিক কাজের জন্য অ্যারেস্ট করা হয়। এক বন্ধুর মারফৎ কোনক্রমে রিয়াজ তাঁর দুই শিশু কন্যা সহ বোনের সঙ্গে, কবিতাপাঠের নাম করে ভারতে পালিয়ে আসেন। সেখানে অমৃতা প্রীতম তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে রিয়াজের যোগাযোগ করিয়ে দেন। সাত বছর তিনি ভারতে থেকে যান তাঁর আশ্রয়ে। ৮মার্চ, ২০১৪ সালে ‘হাম গুনেগার অউরতে’ নামের এক সেমিনারে হিন্দুত্ববাদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে তিনি আবৃত্তি করেন—‘তুম বিলকুল হাম জ্যায়সে নিকলে’ কবিতাটি। এখানে তিনি জিয়া উল হকের উগ্র ধর্মীয় রীতিনীতির সঙ্গে বর্তমান ভারতের উগ্রতার তুলনা করেছিলেন।
তুমি একেবারেই আমাদের মতো
ফাহমিদা রিয়াজ
তুমি একেবারেই আমাদের মতো
এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিলে ভাই
ওই মূর্খামি ওই অহঙ্কার
যার মধ্যে কাটিয়ে ছিলাম সারা জীবন
শেষমেশ পৌঁছলাম তোমার সেই দুয়ারে
অভিনন্দন! অনেক অনেক অভিনন্দন তোমায়
প্রীতি ধর্মের নাচ চলছে
হিন্দু রাজত্ব শুরু করবে
সব উলটো কাজ করবে
নিজের সৌভাগ্য জাহির করবে
তুমিও বসে ভাবতে থাকবে
সেরকমই প্রস্তুতি সারা হয়েছে
কে হিন্দু আর কে তা নয়
তুমিও ফতোয়া জারি করবে
এখানেও বাঁচা কঠিন হবে
দাঁতের কাঁপুনি নিয়ে ঘেমে উঠবে
যেমন তেমন ভাবে দিন কাটবে
এখানেও সবার দম বন্ধ হবে
শিক্ষা দীক্ষা চুলোয় যাবে
এখন বিষ পানের গুণ গাও
সামনে গর্ত আছে কিনা দেখ না
ফিরিয়ে নিয়ে এস পুরনো দিন
অভ্যাস কর ফিরে আসার
উলটো পায়ে চলতে থাক
মনের কথায় মন দিও না
শুধু পিছনেই নজর রাখ
একই মন্ত্র জপ কর
বারবার একই কথা বল
কত বিরাট ও মহান ছিল ভারত
কত সুখকর ছিল এই ভারত
তোমরা সেখানে আবার পৌঁছে যাবে
একেবারে পরলোকে পৌঁছে যাবে
আমরা তো শুরু থেকেই ওখানে আছি
তুমিও ঠিক সময়ে বেরিয়ে পড়
যে নরকে যাবে সেখান থেকে
চিঠি-ফিটি পাঠাতে থেকো।।