ডাক্তার এসে সার্টিফিকেট দিলেন- স্ট্রোক,আধ ঘন্টা আগেই…। বেশ লাগলো শুনতে।এতদিন অন্যলোকের শুনেছি,আজ নিজের।বাড়িতে কান্নার রোল উঠলো। পাড়া প্রতিবেশী চমকালো, “ইস সবে ষাট পেরিয়েছে লোকটা এর মধ্যেই.. ভাগ্গি মেয়েটার বিয়ে টা হয়ে গেছে।আরে সকালেই তো দেখলাম মনে হলো বাজারে।” এসব কথা চলতেই থাকলো।আমার মেজাজ ফুরফুরে।এতদিনে সংসারের জোয়ালথেকে মুক্তি। সকাল সকাল উঠে লাফিং ক্লাবে ছোট নেই,বাজারের ব্যাগ হাতে পেনশনের টাকার হিসেব মাথায় রেখে রুপোলি ইলিশের মায়া ত্যাগের কষ্ট নেই। প্রেসার,সুগার পরীক্ষা করার ঝামেলা নেই।বয়েস জীবন থেকে মিষ্টি সরিয়ে নিয়েছিল। ওই কালো তেঁতো চা খাওয়ার থেকে ও চিরতরে মুক্তি আজ। সমস্ত অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে চেয়েও করতে না পারার অক্ষমতা যে কি ভয়ঙ্কর! আমার মতো মেনিমুখো লোকের বেঁচে থাকার সত্যিই কোনযুক্তি আমি নিজেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
নিয়ম কানুন সব সারা। ও মা ও কি! হিরু টা ওমন চোখ মুচ্ছে কেন! হা হা হা।বন্ধুর জন্য বুঝি কষ্ট হচ্ছে? তা হবে বৈকি,ছোট বেলার বন্ধু কিনা। আরে বেটা শোন মৃত্যুর জন্য যে জীবন দরকারি।তুই তো রইলি।
শববাহক গাড়ি এসে দাঁড়াতেই পুরাতন লোকেরা বলে উঠলো – নিয়ম ভেঙও না বাপু।কাঁধে করে কিছুটা নিয়ে তারপর গাড়ি।মেয়েটা কাঁদছে, বউ টা বুকের ওপরে আছাড়ি পাছাড়ি। উফফ এমন করলে কি যাওয়া যায়! আচ্ছা আমার কেনো কষ্ট হচ্ছেনা! এত মায়ার বাঁধন, এমন পৃথিবী,এমন আকাশ!
গাড়িটা বড্ড ছোটো,চারিদিক বন্ধ। এইরে! আমার কলম টা? ও ঝিলিক? ঝিলিমের মা? আমার কলম টা ? কি গো শুনছো! আমার কলম টা শুধু কলম টা আমাকে এনে দাও! ওটা যে আমাকে ছেড়ে থাকেনা।না মানে আমিও ওকে ছেড়ে থাকতে পারিনা। শুনছো না কেন! গাড়ি যে এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ কি শুনতে পাচ্ছে না! আমার কলম। আমার একটাও না প্রকাশ হওয়া কবিতার খাতা। এনে দাও ওদের। আমার যে কষ্ট হচ্ছে। কখনো কারো কাছে কিছু চাইতে পারিনি,চোখের সামনে অন্যায় দেখেও প্রতিবাদ করতে পারিনি মুখে। সব প্রতিবাদ সব ইচ্ছা সব চিৎকার যে আমার কলম। ওটা যে খুব দরকার।খুব।
” ইউ গেইন্ড এ নিউ লাইফ।” কপালে হাত রেখে ডাক্তার বাবু বললেন। অক্সিজেন মাস্কের ভেতর আমার শ্বাস প্রশ্বাস টের পেলাম।