অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় পার্থ সারথি গোস্বামী
by
·
Published
· Updated
বন্ধু ও ভার্চুয়াল
আমলের ফোনটা পাওয়ার পর মেজাজটা পুরোপুরি বিগড়ে গেল বিমলের ।
অমল আর বিমল, এককালীন হরিহর আত্মা । সময়ের প্রবাহে বিমল আজ আইটি ইঞ্জিনিয়ার, দমদমের উপকণ্ঠে ছিমছাম ফ্ল্যাটে বউ ছেলে নিয়ে বসবাস ।
ছাত্র জীবনে বিমলের স্কুল কলেজের সব পরীক্ষার ফিস থেকে পড়াশোনার খরচের বেশ কিছুটা অমল বহন না করে এলে বিমলের জীবনটা কোন খাতে বইত কে জানে । তাই ইঞ্জিনিয়ারিং করে চাকরিটা পাওয়ার পর অনটনের দিনগুলোকে ভোলার জন্য, জীবনের না পাওয়া গুলোকে পাওয়ার জন্য টাকা উপার্জনকেই করেছিল মূলমন্ত্র । আজ প্রতিষ্ঠিত হবার পর , তাই পুরানো শখ গুলো আবার মাথা চাড়া দিয়ে উচেছে, এখন সে শখের কবিও । আর, বরাবরের স্কলার ছেলে অমল , তার সেবা আদর্শকে আঁকড়ে ধরে ,একটা প্রাইমারি স্কুলে চাকরি নিয়ে এখনো পড়ে আছে সেই গ্রামেই ।
এককালীন প্রগাঢ় সেই বন্ধুত্বের বাঁধন বিমলের পক্ষ থেকে কিছুটা আলগা হয়ে এলেও অমল ফোন করে খোঁজ খবর নেয় মাঝে মাঝেই, আজ সকালেও ওই ভাবেই ফোন করে কুশল বিনিময়ের পর হঠাৎই আবদার,
– আজই কোলকাতায় আসছি আমি, আজ তোকে কিন্তু আমার সাথে তোর ওই প্রিন্সিপাল বন্ধুর বাড়িতে একবার যেতে হবে ।
– আজ আসছিস ! হ্যাঁ, কিন্তু ওনার সাথে তোর কি দরকার ।
– আরে আমাদের ওই চৌকিদারের ছেলে, এ বছর জয়েন্ট দিয়েছিল । কিন্তু পরীক্ষার একমাস আগে থেকেই জন্ডিস , তাই রেঙ্ক তেমন একটা ভালো হয়নি, এখন তুইই ভরসা ।
– হ্যাঁ , কিন্তু আমি কি করবো ।
– দেখ ওর ফ্যামিলির যা অবস্থা তাতে বেসরকারি কলেজে ওর পড়ার সামর্থ নেই । তোর ওই বন্ধুর কলেজ প্রতিবছর পাঁচ জন ভালো ছেলেকে পুরো নিখরচায় কোর্স করিয়ে থাকে, তাই তুই যদি একবার…
কি বলবে কিছুই খুঁজে পেলনা , এখন ব্যস্ত আছে একটু পর ফোন করছি বলে ফোনটা
ফোনটা রাখার পর মেজাজটা পুরো বিগড়ে গেল বিমলের । আজ রবিবার একে ছুটির দিন তার ওপর একটা বিশেষ কারনে মনটা আজ দারুন খুশি , আজ তাদের হোয়াটস-এপ গ্রূপ ‘স্বপ্ন-উড়ান’ এর এক বছর পূর্তি । আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে নানান জায়গার নানান কবি ও সাহিত্যিক মিলে তৈরি করা একটা গ্রূপ । আজ এই গ্রূপের সকলে মিলে মিট করবে শহরের একটি সভাকক্ষে । সারাদিন হবে গান, কবিতা ও গল্পপাঠ । গ্রূপটার বিশেষত্ব এটাই যে, এই গ্রূপটা তৈরি হয়েছে সব ফেসবুক ফ্রেন্ডদের নিয়ে, এক বছর আগে প্রত্যেকেই একে অপরের অপরিচিত থাকলেও আজকের দিনে সবার মধ্যে একটা দারুন সম্পর্ক । প্রতিদিন আলোচনা হয় প্রত্যেকের লেখা গল্প, কবিতা নিয়ে , এই গ্রূপ থেকেই পরিচয় কমলিকার সাথে । কমলিকার বাড়ি কলকাতার নাগের বাজার, হাসবেন্ড ব্যাংকে সার্ভিস করেন, এক ছেলে কনভেন্টে পড়ে । কবি মহলে কমলিকার জনপ্রিয়তাটাই আলাদা । অমল অবশ্য ভাবে , কমলিকার লেখার কাব্যগুন নেহাতই সাদামাটা , তার জনপ্রিয়তার আসল কারন হল, দেখতে কমলিকা একেবারে ডানাকাটা পরী । লেখা যেমনই হোক কমলিকার প্রতিটি লেখাকে স্তুতিবাক্যে ভরিয়ে দিতে কোন কার্পণ্য করেনা বিমল । সেই থেকেই একদিন গ্রূপ ম্যাসেজ থেকে পার্সোনাল ম্যাসেজ পরে ফোনালাপ…. এখন বেশ একটা মাখো মাখো সম্পর্ক দুজনের । তাই একটা ফালতু কারনের জন্য কমলিকার সাথে প্রথম দেখা ও সারাটাদিন একসাথে কাটাবার এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করার কোন মানেই হয়না । একটু আগেই হোয়াটস এপে কথা হয়েছে দুজনের , কমলিকাও খুব এক্সাইটেড , প্রহর গুনছে যেন, কখন দেখা হয় ।
বেশ কিছুক্ষণ এটা সেটা ভেবে অমলকে রিং-ব্যাক করলো বিমল,
– অমল, শোননা, আজ হবে না রে ভাই, আজ একটা বিশেষ কাজ আছে , তুই পরে একদিন আয় ।
– ছুটির দিন কি এমন কাজ তোর, সেটা না হয় অন্যদিন করিস । আজ ছুটির দিন, উনি বাড়িতেই থাকবেন , তুই যে করে হোক একটু ম্যানেজ কর , ছেলেটার বাড়ির অবস্থা সত্যি খারাপ ।
– কেন বুঝিসনা বলতো, বলছি বিশেষ কাজ । আর শোন, তোকেও একটা কথা বলি
– আমি কিছুই শুনবো না, তোকে আজ যেতেই হবে আমার সঙ্গে ।
– বললাম তো হবে না । করিস তো একটা প্রাইমারি স্কুলে চাকরি, বিশেষ কাজের গুরুত্ব আর তুই আর কি বুঝবি । আর শোন , তুই ও এই অসহায় দুস্থদের জন্য তোর এই দরদটা একটু কমা । বয়স তো কম হলনা, আর শুধু দুস্থ দুস্থ না করে এবার থেকে নিজের ভালোটাও একটু ভাবতে শুরু কর ।