• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় পিয়ালী মজুমদার

বদ্ধদিনের ডায়েরি

প্রথম প্রথম বেশ মনখারাপ হত। বইমেলায় যেতে পারিনি বলে যাদের সঙ্গে দেখা হল না, তাদের জন্য। জানি না, আর কখনও দেখতে পাব কিনা। দূরের যে বন্ধুটি এই অন্ধকার দুর্দিনে আলো পাঠায় রোজ, তার সঙ্গেও কি দেখা হবে কোনওদিন?
অনিশ্চিতের গায়ে মিহি ধুলোর মতো মনখারাপ জমে। জমতে জমতে পুরু হয় স্তর।
 মুছতে গেলে হাত ফসকে পালায়। দেখি, অজস্র আঁকিবুঁকিময় দেওয়ালের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে মনখারাপ। দু- চোখে ইশারা।
অগত্যা আমি আমার প্যালেট রেডি করি। রঙের গাঢ়ত্ব আর তুলির নম্বর নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করি। এই সময়ে বিভূতিভূষণ আমার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে থাকেন দীর্ঘকায় ছায়ার মতন। তাঁকে পাশ কাটিয়ে আমি ঢুকে পড়ি একটা নীল শহরের আত্মার ভিতরে। ‘দ্য ব্লু পার্ল অব মরোক্কো। ‘ ক্যানভাস জুড়ে শুধু নীল আর নীল! হাঁটতে হাঁটতে আমার নেশা ধরে যায়। ঠান্ডা ঠান্ডা, ঘুম ঘুম। মৃত্যুর মতো নেশা। আমি ভুলে যেতে থাকি বার, তারিখ,দিন, মাস…
কেবল মনোফোবিয়ায় ভোগা মেয়েটির মুখ আমার চোখে ভাসতে থাকে, নীল রং খুব প্রিয় ছিল যার।
একসময় তার পোষা বেড়ালের ডাকে চমকে উঠে আমি আমার মায়ের মুখের দিকে তাকাই। এইসব সঙ্গরোধের দিনে প্রেমিকের মুখ আবছা হয়ে আসে।  মায়ের মুখ স্পষ্ট। স্পষ্টতর।
ইদানীং মা খুব মন দিয়ে বিশেষ একটি রিয়্যালিটি শো দেখেন। পুনঃসম্প্রচার।
একটি বিরাট বড়ো বাড়িতে অনেকগুলি মানুষ। স্বেচ্ছাবন্দী। স্নায়ুযুদ্ধে হেরে গেলেই  ছিটকে যেতে হবে খেলা থেকে। এক একদিন আমিও বসে পড়ি মায়ের পাশে। দেখি, একটা একটা করে মুখোশ খসে পড়ছে আমার অসহায় ভারতবর্ষের মুখ থেকে। এমন নগ্নতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছটফট করে উঠি , মনে পড়ে যায় এখন আমিও অংশীদার এক জলজ্যান্ত রিয়্যালিটি শো-এর। প্রতিদিন যার শরীর থেকে হাসি, কান্না, ভয়, ঈর্ষা, ক্ষমতা, দম্ভ, প্রেম, বিচ্ছেদ এক এক করে ছিটকে এসে সার সার লাইনে মাথা নিচু করে দাঁড়াচ্ছে প্রার্থনাসঙ্গীতের মতো। যার একটিই সুর- মুক্তি।
আমার দমবন্ধ হয়ে আসে। উঠে পড়ি। ধীর পায়ে ছাদে যাই। ইনহেলার টানি।
ফুসফুসের দূষণ কমে আসে। স্বচ্ছ, নীল আকাশ। আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজি। ঘুড়ি। অন্তত একটি ঘুড়িও যদি দেখতে পেতাম!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।