একটা শর্ট নোটিসে ডেকে পাঠালো অয়ন আমাকে … অফিসের শেষ ফাইলটা হাতে নিয়ে সবে হরি কাকাকে গাড়ির চাবি দিয়েছি ঠিক সেই সময়ে মোবাইলে অয়নের মুখটা ভেসে এলো। “কোথায় তুই মিমি … ! আমি পার্কিংয়ে অপেক্ষা করছি…” আমি ফোন কেটে দিয়ে হরিকাকাকে বলে দিলাম কেউ যেন আমার কেবিনে না আসে ! লাইট অফ করে তুমি চলে যাও। হরি কাকা মাথা নিচু করে চলে যাবার আগে সেই হাজার , সহস্র বারের মতোই প্রশ্ন করলো … কফি সুগার অর উইডাউট সুগার !! আর প্রতিবারের মতোই আমি খিলখিলিয়ে হেসে বলে ওঠবার আগেই সংযত করলাম নিজেকে … কাকা আমার কিচ্ছু চাই না! তুমি প্লিজ যাও আর আমি না ডাকা অবধি কেউ যেন না আসে …
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
তুই কোথায় মিমি ! আমি দু’দিন এখানে ছিলাম না রে ! বাবাই কে নিয়ে ভেলোরে গিয়েছিলাম। হঠাৎ তোকে না জানিয়ে ! একবার মোবাইলে মেসেজ চেক করে নে প্লিজ !
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
অনেক দিন ধরেই মনে হচ্ছিল অয়নের জীবনে কেউ এসেছে ! আজকাল বড্ড বাহানা করে , কথা বলার সময় নেই ওর কাছে। ওর জীবনে আরো কেউ !! একরাশ জল কেন আসছে মিমি রায় চৌধুরীর চোখে ! তার জীবনে তো আবেগের কোন স্থান নেই… আশির স্পীডে নিজের হন্ডা সিটি ড্রাইভ করা মিমি আজ সাধারণ অয়ন গাঙ্গুলীর জন্য স্পীড ব্রেকারে দাঁড়িয়ে থাকবে !!
নাঃ !! তা হয় না … আজ ফাইনাল ডিসিশন নিতেই হবে !
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
তুই এলি না মিমি … আমি আর অপেক্ষা করতে পারলাম না রে ! মা আর দি’ বারবার ফোন করছে । বাবাই কেমন যেন অস্থির হয়ে বারবার আমাকে ডাকছে। ঘোলা চোখের দৃষ্টিতে না কি শুধু আমাকেই খুঁজছে ! তুই এবারেও সাড়া দিলি না তাই আমি গেলাম রে …
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
একশোর স্পীডে হন্ডা সিটি চালিয়ে যে মেয়েটা এক্ষুনি ঢুকেছে অয়ন গাঙ্গুলির বাড়ির একেবারে ওই অন্দর মহলে … সত্যি বলছি সে কর্পোরেট জগতের মিমি রায়চৌধুরী নয় … সে তো তোমার আমার পাশের বাড়ির সেই এক শান্ত ঘরোয়া মেয়ে … যার দীঘি দীঘি চোখ দুটো এখন বাণভাসি কেন কে জানে !
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
অয়নের বাবাই মনে হয় এ যাত্রা বেঁচে গেলো … রিটায়ার হবার সময়ে সেই দাস বাবুর কথা ভাগ্যিস মনে ছিল “দরকারে অভিনয়টা চালিয়ে যেয়ো ভায়া !”
শরীরটা খারাপ ঠিকই তবে ওই আরো কিছুদিন বাঁচতে হবে যে !! অয়নটা যা মুষড়ে পড়েছিল ক’দিন !
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
আমাকে ক্ষমা করে দিস অয়ন … আমি ভেবেছিলাম তোর জীবনে অন্য কেউ … কথা শেষ হবার আগেই ব্যাগ নিয়ে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকা হরিকাকা বলে উঠলো … কফি সুগার অর উইডাউট সুগার !! আর তিনজনের হাসিতে কোণে রাখা জল তরঙ্গটা বেজে উঠলো !