• Uncategorized
  • 0

অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় চন্দ্রাণী বসু

গোপন

– বৌমা আজ কি আপিসে ছুটি নেওয়া যেত না ? আজ নীল ষষ্ঠী। ছেলেটার জন্য একটু পুজো …
– তো আমি কি করব ? আপনার ছেলের জন্য এতকাল করেছিলেন তো ? বেঁচে আছে ?
– অমন বলো না বৌমা। সবই আমার কপাল। যাক্ ! আমি আজ দুবেলাই খাবো না।
– মরা ছেলের জন্য ষষ্ঠী ?
– না মা, রাজুটার জন্য আর তোমার …
রাখি মনে মনে ভাবল, আজকের মতো বাঁচা গেল। বুড়ি দুবেলা খাবে না। রাজুকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দুটো রুটি খাইয়ে বলে দিল,
– মিড ডে মিল পেট ভরে স্কুলে খেয়ে নিবি। আজ বাড়িতে রান্না নেই‌। রাতে আমি ফিরে এলে তারপর খেতে পাবি। তার আগে শুধু যেটুকু মুড়ি কৌটে আছে।
– ছেলেটাকেও না খাইয়ে রাখবে, আজকের দিনে ? আর তুমি কি আজও বাইরে খেয়ে ফিরবে ?
– হ্যাঁ মা। রাত হবে।
গত দুবছর হল স্বামী মারা গেছে রাখির। সেই অফিসেই  অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে কাজ যোগাড় করেছিল। এইট পাশ ছিল বলে ফোর্থ ক্লাস স্টাফের চাকরিটা জুটে গেছিল।
আজ আবার অফিসের  রীনা দি দেখা করতে বলেছে, কতগুলো জায়গায় যেতে হবে। তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল রাখি। বেড়িয়ে দেখল মোড়ের মাথায় শিব মন্দিরে বিশাল লাইন, সবার হাতে ঝুড়িতে কাপড় ঢাকা ফল, দুধ, মিষ্টি … কেন জানিনা খুব রাগ হল।
রাত নটায় ফিরে রাজুকে ভাত, ডিমসিদ্ধ, আলু সিদ্ধ করে খেতে দিল। আড়চোখে দেখে নিল শাশুড়ি সাবুর বাটি নিয়ে বসেছে।
– আজও তুমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছ ? রোজ রোজ আপিসের পর কি মিটিং থাকে ? ছেলেটা রোগা হয়ে গেছে, ওর জন্য তো একটু কিছু –
– আমার ছেলে আমি বুঝব মা।
শাশুড়ি কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। চলে যাওয়ার পর একগ্লাস জল খেল রাখি। গ্লাসটা রেখে নিজেই হাসল।
দুমাস হল কর্মী ছাঁটাইয়ে তার চাকরিটা আর নেই। একটা বাড়িতে বারো ঘন্টার বাচ্চা দেখার কাজ নিয়েছিল। বাড়ির কর্তার শরীরি নজরের প্রতিবাদে সেটাও গত চারদিন হল খুয়িয়েছে। আজ সারাদিন কাজ খুঁজে জোটেনি, সাথে কোনো খাবারও না।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *